জাতীয় লীগ টি–টুয়েন্টির ট্রফির নিয়ে আট অধিনায়কের ফটো সেশন বিসিবি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘নতুন মুখের সন্ধানে’—একটা সময়ে ঢাকঢোল পিটিয়েই নায়ক-নায়িকা খোঁজার এই আয়োজনে নামত বাংলাদেশ চলচিত্র উন্নয়ন সংস্থা (এফডিসি)। প্রায় এক যুগ পর জাতীয় ক্রিকেট লীগে টি-টুয়েন্টি সংস্করণ ফেরানো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উদ্দেশ্যও সেই নতুন মুখের সন্ধানই। জাতীয় দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে, আট দলের টুর্নামেন্টটা তাই জাতীয় দলের বাইরে থাকা খেলোয়াড়দের জন্য নিজেদের চেনানোর বড় মঞ্চই হয়ে ওঠে।
সেই মঞ্চে যেমন একদম আনকোরারা আলো কেড়েছেন, তেমনি জাতীয় দল থেকে ছিটকে যাওয়ারাও নিজেদের ফেরার দাবি জানিয়ে রাখার মতো পারফরম্যান্স করেছেন। সবচেয়ে বেশি রান ও সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া দুই খেলোয়াড়ের নামই বলে দিচ্ছে টুর্নামেন্ট আয়োজনের উদ্দেশ্য অনেকটাই সফল হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি রান করা ব্যাটসম্যানের নাম মোহাম্মদ নাঈম। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের দিল্লি জয়ের ম্যাচে টি-টুয়েন্টি অভিষেক হয়েছিল নাঈমের। টি-টুয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করা ওপেনার পরে খেলেছেন ওয়ানডে ও টেস্টও। তবে ফর্ম হারিয়ে ফেলায় ২০২৩ এশিয়া কাপ ওয়ানডে খেলার পর আর জাতীয় দলে ডাক পাননি নাঈম।
সেই নাঈম জাতীয় লীগ টি-টুয়েন্টিতে ঢাকা মহানগরকে ফাইনালে ওঠাতে বড় ভূমিকা রেখেছেন ব্যাট হাতে। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে খুলনার বিপক্ষে স্বল্প রানের ম্যাচে ৫৩ বলে ৫৭ রান করে দলকে জিতিয়েছেন। মহানগর অধিনায়ক ১০ ম্যাচের ১০ ইনিংসে ৩ ফিফটিতে করেছেন টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ৩১৬ রান। ১১টি ছক্কা মারা নাঈমের স্ট্রাইক রেট ১৩৫.০৪। প্রথম ম্যাচে ৫২ বলে সেঞ্চুরি করেছেন জিশান আলম: বিসিবি
ব্যাটিংয়ে নাঈমের পরের নামটাকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যতের বিজ্ঞাপন বলা যেতেই পারে। ৮ বলের মধ্যে ৭ ছক্কা, ৫২ বলে সেঞ্চুরি—জাতীয় লীগ টি-টুয়েন্টির উদ্বোধনী ম্যাচেই ঝড় তোলেন জিশান আলম। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এই ব্যাটসম্যান এরপর আরও দুটি ফিফটি পেয়েছেন সিলেটের হয়ে। ১৫৮.৭৫ স্ট্রাইক রেটে ২৮১ রান করা জিশান মেরেছেন ২২টি ছক্কা। এই টুর্নামেন্টে আর কোনো ব্যাটসম্যান ১৭টির বেশি ছক্কা মারতে পারেননি।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭ ছক্কা মারা হাবিবুর রহমানও মোট রানের হিসাবেও আছেন শীর্ষ পাঁচে। বিপিএলে হার্ড হিটিং ব্যাটসম্যানের নাম কেনা হাবিবুর রাজশাহীর হয়ে ম্যাচে ১৬০.৮৬ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ২৫৯ রান।
সতীর্থদের কাছে সোহান নামেই বেশি পরিচিত হাবিবুর আছেন রান সংগ্রাহকদের তালিকার চারে। ২৬৬ রান নিয়ে তাঁর ঠিক ওপরের নামটাও সোহান, নুরুল হাসান সোহান। জাতীয় দল থেকে ছিটকে যাওয়া উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের গড় ৫৩.২০ হলেও স্ট্রাইক রেট খুব বেশি নয়—১২৬.০৬।
ব্যাটিংয়ে সবার ওপরে মোহাম্মদ নাঈম (ডানে), খুলনার নুরুল হাসান আছেন তিনে: বিসিবি
শীর্ষ পাঁচে পঞ্চম ব্যাটসম্যানের নামটিও চমক জাগানিয়া। কয়েক দিন আগেই বাংলাদেশকে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জেতা বাংলাদেশের অধিনায়ক আজিজুল হাকিম এই প্রথম খেলেছেন স্বীকৃত টি-টুয়েন্টি। খুলনার হয়ে ৯ ম্যাচে ১৩৬.৯৯ স্ট্রাইক রেটে ২৩৭ রান করেছেন তামিম ডাকনামের এই ক্রিকেটার।
এ ছাড়া ব্যাট হাতে ২০০ ছাড়িয়েছেন ইমরানুজ্জামান (২২৮), আরিফুল ইসলাম (২১৩), আকবর আলী (২০৮) ও তৌফিক খান (২০০)। তাঁদের মধ্যে আকবর ছাড়া অন্য নামগুলো একটু অপরিচিতই।
২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী আকবরকে নতুন করে চিনিয়েছে জাতীয় লীগ টি-টুয়েন্টি। বিশ্বকাপজয়ী তাঁর বেশির ভাগ সতীর্থ এরই মধ্যে খেলে ফেলেছেন জাতীয় দলের হয়ে। এখনো সেই সুযোগ না পাওয়া আকবর এবার জোরালো দাবিই জানিয়ে রাখলেন। ১৪ ছক্কায় ১৪৯.৬৪ স্ট্রাইক রেটে ২০৮ রান করা আকবর উইকেটের পেছনে ডিসমিসাল করেছেন টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ১২টি। রংপুরকে চ্যাম্পিয়ন করতে তাঁর অধিনায়কত্বের বড় ভূমিকা আছে।
টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি আলাউদ্দিন বাবু: বিসিবি
বোলিংয়ে সবার ওপরের নামটা আলাউদ্দিন বাবু। ৩৩ বছর বয়সী পেস বোলিং অলরাউন্ডার নতুন করেই চিনিয়েছেন নিজেকে, নিয়েছেন ১৯ উইকেট। ফাইনালে ৩ উইকেট নিয়ে ছাড়িয়ে গেছেন আহমেদ শরীফকে। ব্যাট হাতেও বেশ ভালো করেছেন আলাউদ্দিন বাবু। রংপুরের হয়ে চারবার ব্যাট করে ১৬০.৫২ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৬১ রান।
দুইয়ে থাকা নামটি দেখে কে আহমেদ শরীফ’—এমন প্রশ্ন করতে পারেন। ২০ বছর বয়সী পেসারের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ২০২২-২৩ মৌসুমে। সর্বশেষ মৌসুমে রাজশাহীর বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েই প্রথম নজর কাড়েন চট্টগ্রামের হয়ে খেলা এই বোলার। চার ম্যাচে ১১ উইকেট নেওয়া আহমেদ শরীফ সেই পারফরম্যান্স দিয়েই সুযোগ পান টি-টুয়েন্টি সংস্করণে। অভিষেক টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্টেই ১৭ উইকেট নিয়ে নিজেকে আবারও চেনালেন আহমেদ শরীফ।
১৫ উইকেট নিয়ে তিনে থাকা রাকিবুল হাসান নিজেকে চেনানোর কাজটা করে যাচ্ছেন নিরলসভাবেই। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য মহানগরের হয়ে পেয়েছেন ১৫ উইকেট। ওভারপ্রতি মাত্র ৬.৪১ করে রান দেওয়া বাঁহাতি স্পিনার অবশ্য এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পেয়ে গেছেন ২০২৩ এশিয়ান গেমসে। তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলেও বাংলাদেশের সেই দলটাকে মূল জাতীয় দল ভাবার কোনো কারণ নেই। রাকিবুল ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত ভালো করে আসল জাতীয় দলের খেলার দাবিই জানিয়ে রাখছেন।
রাকিবুল পেয়েছেন ১৫ উইকেট: বিসিবি
১৪ ও ১৩ উইকেট নিয়ে রাকিবুলের পরেই আছেন আলিস আল ইসলাম ও আবু হায়দার। ঘরোয়া টি-টুয়েন্টিতে অনেক বছর ধরেই নিয়মিত পারফর্মার এ দুজন। ব্যাট হাতে ১৬৪ স্ট্রাইক রেটে ১২৩ রান করা আবু হায়দারই হয়েছেন টুর্নামেন্ট–সেরা।
১২ উইকেট নিয়ে পাঁচে ফাইনালের ম্যাচসেরা মুকিদুল ইসলাম। ১১ উইকেট নেওয়া চট্টগ্রামের বাঁহাতি পেসার ফাহাদ হোসেনও আলো কেড়েছেন।
নতুনদের এই ভিড়ে তামিম ইকবালের ফেরাটাও বড় খবর ছিল। সাত মাস পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট ফেরা তামিম চার ম্যাচে করেছেন ১৯০ রান। ১৫০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন তামিম, যা এই সংস্করণে তাঁর ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেটের (১১৬.৯৬) চেয়ে অনেকে বেশি। চট্টগ্রামের হয়ে ৬৫ ও ৯১ রানের দুটি ইনিংস খেলা তামিম জানিয়ে রাখলেন এখনো শেষ বলার সময় আসেনি।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় কনস্টেবল মুকুল কারাগারে
শীতে শিশুদের সুস্থ রাখবে যেসব খাবার
দীর্ঘদিন পর ফেরা তারকারা