October 26, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, October 25th, 2025, 2:55 pm

ট্রাম্পের এশিয়া সফর: থাকবে সম্মেলন, বৈঠক ও চুক্তি

 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ এশিয়া সফরে যাচ্ছেন। সফরের শেষ দিনে দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।খবর (বাসস)

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে ট্রাম্পের দেখা হতে পারে এমন গুঞ্জন উঠলেও, ওয়াশিংটন বলছে, এমন কোনো বৈঠক সূচিতে নেই।

ট্রাম্পের লক্ষ্য, বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের মধ্যে চলমান তীব্র বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে ‘সবকিছুর ওপর একটি চুক্তি’ করা।

৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্প জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর নানা দেশে শুল্ক বসিয়ে ও কূটনৈতিক চুক্তি করে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছেন।

তিনি এই মেয়াদে প্রথমবারের মতো এশিয়া সফরে যাচ্ছেন। সফর তালিকায় মালয়েশিয়া ও জাপানও রয়েছে।

এক জ্যৈষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা শুক্রবার বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল অর্থনৈতিক অঞ্চলে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকান জনগণের জন্য সাফল্য বয়ে আনবেন। এ সময়ে তার একাধিক অর্থনৈতিক চুক্তি সই করার কথা রয়েছে।’

দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি আঞ্চলিক সম্মেলনে যোগ দেবেন ট্রাম্প।

এ বিষয়ে সিউলের পুনরেকত্রীকরণ মন্ত্রী জানান, সম্মেলনে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।’

তবে ওই মার্কিন কর্মকর্তা আরো জানান, ‘এমন কোন বৈঠক তাদের সূচিতে নেই।’

যদিও দুই নেতা আগেই জানিয়েছেন, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে গড়ে ওঠা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পুনরায় জাগিয়ে তুলতে চান তারা।

শান্তি ও বাণিজ্য চুক্তি

ট্রাম্পের প্রথম গন্তব্য মালয়েশিয়া। তিনি রোববার সেখানে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেবেন। প্রথম মেয়াদে এই সম্মেলন তিনি একাধিকবার এড়িয়ে গিয়েছিলেন।

মালয়েশিয়ার সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে সই করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। তবে তার সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর। এই চুক্তির তদারকি করবেন তিনি নিজেই।

শান্তি প্রতিষ্ঠার এই উদ্যোগকে অনেকে ট্রাম্পের নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার প্রচেষ্টার অংশ বলেই দেখছেন।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা সম্মেলনের ফাঁকে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। দুই দেশের মধ্যে কয়েক মাস ধরে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলার পর, এবার সেই দূরত্ব কমাতে চাইছে উভয় পক্ষ।

এএফপিকে এমনটাই জানিয়েছেন দেশ দু’টির কর্মকর্তারা।

এরপর ট্রাম্প সোমবার টোকিও পৌঁছাবেন। মঙ্গলবার তিনি জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ সপ্তাহেই দায়িত্ব নেওয়া তাকাইচি একজন রক্ষণশীল রাজনীতিক।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর ট্রাম্প যে কঠোর শুল্ক আরোপ করেছেন, তার বড় ধাক্কা থেকে জাপান অনেকটাই রেহাই পেয়েছে।

ট্রাম্পের অভিযোগ, ‘অন্যায় বাণিজ্য ভারসাম্য’ যুক্তরাষ্ট্রকে ‘লুটে নিচ্ছে।’

তবে ট্রাম্পের এশিয়া সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া।

তিনি বুধবার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী বুসানে পৌঁছাবেন। সেখানে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে তার উপস্থিতিকে ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

এছাড়া এপেক সম্মেলনের ফাঁকে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন এবং গিয়ংজু শহরে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধানদের সঙ্গে নৈশভোজ করবেন।

বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ও সি চিন পিংয়ের মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম দুই নেতার সাক্ষাৎ হতে যাচ্ছে।

বিশ্ববাজার এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে। ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কের কারণে শুরু হওয়া বাণিজ্যযুদ্ধ বন্ধ হবে কি-না, তা জানতে আগ্রহী সবাই। বিশেষ করে, বেইজিংয়ের বিরল খনিজ রপ্তানিতে সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উত্তেজনার পর, এই বৈঠককে ঘিরে আগ্রহ আরও বেড়েছে।

ট্রাম্প শুরুতে বৈঠক বাতিলের হুমকি দেন এবং নতুন শুল্ক আরোপ করেন।

তিনি পরে আবার জানান, বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি।

আরেক জ্যৈষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট মূলত বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী।’

ট্রাম্প নিজেই বৃহস্পতিবার বলেছেন, বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে প্রথমেই থাকবে ফেন্টানিল ইস্যু।

তিনি বেইজিংয়ের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন, যাতে চীন মাদক পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। পাশাপাশি, লাতিন আমেরিকার মাদকচক্র দমনে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানও জোরদার করা হয়েছে।

ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন বলেছেন, সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ।

তিনি মার্কিন পত্রিকা পলিটিকো’কে বলেন, ‘এই বৈঠক ভেস্তে গেলে এর প্রভাব ব্যাপক হবে।’

ব্যাননের ভাষায়, এটি যেন ‘লোহার পাশা ছোড়ার মতো’—অর্থাৎ সফল হলে ফল বড়, কিন্তু ব্যর্থ হলে বিপদও কম নয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বড় কোনো অগ্রগতি আশা করা ঠিক হবে না।

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের জ্যেষ্ঠ গবেষক রায়ান হাস বলেছেন, ‘এই বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না। এটি শুধু চলমান সম্পর্কের ধারাবাহিকতার একটি ধাপ।’

এনএনবাংলা/