January 21, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, January 21st, 2025, 12:07 pm

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে অভিবাসীদের কান্না

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পফাইল ছবি: রয়টার্স

অনলাইন ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দিনই ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী কঠোর পদক্ষেপে দেশটিতে শরণার্থী হিসেবে থাকার অনুমতি বাতিল হয়ে গেছে অনেকের মতো মারগেইলস টিনোকোরও। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে কেঁদে ফেলেন তিনি।

কলম্বিয়ার নাগরিক মারগেইলস টিনোকো (৪৮) বলছিলেন, ‘আমার জীবনে আর কী হবে, আমি জানি না।’ দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি থেকে দীর্ঘ ও বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিয়ে স্বামী-সন্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। এখন ট্রাম্পের অভিবাসীবিরোধী সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজ দেশে সপরিবার ফেরত যাওয়ার হুমকিতে পড়লেন।

গতকাল সোমবার দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের প্রবেশের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস করতে ধারাবাহিক কিছু সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তিনি।

মেক্সিকোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করারও অঙ্গীকার করেছেন নতুন এ প্রেসিডেন্ট। সেই সঙ্গে আদেশ দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ‘সব ধরনের অবৈধ প্রবেশ’ অবিলম্বে বন্ধ করার ও ‘লাখ লাখ অপরাধী এলিয়েনকে (বিদেশি অভিবাসী)’ দেশ থেকে বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে।

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রবেশের অনুমতি প্রক্রিয়ায় সহায়তা দিতে একটি অ্যাপ চালু করেছিলেন সদ্য বিদায় নেওয়া প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার কয়েক মিনিট পর অ্যাপটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।

নিজের মুঠোফোনে আসা একটি খুদে বার্তা দেখিয়ে টিনোকো বলছিলেন, ‘দেখুন, এতে কী বলা হয়েছে।’ তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হিসেবে তাঁর থাকার অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।

কেঁদে ফেলে কলম্বিয়ার এ নাগরিক বলেন, ‘আমাদের দয়া করুন ও (সীমান্ত) পার হতে দিন (যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে দিন)।’ তিনি বলেন, ‘সপরিবার ভেনেজুয়েলা ছাড়ার পর ছয় মাস আমাকে দুর্দশা সইতে হয়েছে।’

২৭ বছর বয়সী কিউবার নাগরিক আইম পেরেজ। তিনিও ট্রাম্পের প্রতি আবেগপূর্ণ আবেদন জানান।

আইম পেরেজ বলেন, ‘আমরা যেহেতু এখানে আছি, তাই দয়া করে আমাদের থাকতে দিন। আমরা এখানে আসতে অনেক কষ্ট করেছি। আপনার দেশে আমাদের ঢুকতে দিন, যেন আমরা জীবনকে আরও উন্নত করতে পারি এবং আপনাদের মতোই একজন হয়ে থাকতে পারি।’

দেশ ছেড়ে এসে যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে অপেক্ষায় থাকা ভেনেজুয়েলার নাগরিক অ্যান্টনি হেরেরাও জানাচ্ছিলেন তাঁর কষ্ট ও হতাশার কথা। বলেন, দীর্ঘ যাত্রা করে স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তানকে নিয়ে এখানে এসেছেন তিনি। আর এখন কিনা জানলেন, তাঁদের প্রবেশের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।

৩১ বছর বয়সী হেরেরা বলেন, ‘জানি না, সামনে কী অপেক্ষা করছে।’ ভেনেজুয়েলার লাখো অভিবাসনপ্রত্যাশীর মধ্যে তিনি একজন। ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা চলার প্রেক্ষাপটে নিজেদের দেশ ছাড়তে চান তাঁরা। বিতর্কিত নির্বাচনে জিতে এ মাসে তৃতীয় দফায় দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন নিকোলা মাদুরো।

২০১৭ থেকে ২০২১ সাল—মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে মধ্য আমেরিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঢল আটকাতে মেক্সিকো সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নিয়েও দ্রুত ‘রিমেইন ইন মেক্সিকো’ নীতি পুনর্বহাল করেন তিনি। ট্রাম্প তাঁর আগের প্রশাসনে এ নীতি প্রবর্তন করেছিলেন।

পুনর্বহাল করা এ নীতির অধীন মেক্সিকো সীমান্তে জড়ো হওয়া মানুষ যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, আবেদনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের দেশটিতে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মেক্সিকো তার বিরুদ্ধে ট্যারিফসংক্রান্ত হুমকি প্রত্যাহার করার বিনিময়ে অন্যান্য দেশের ‘নির্বাসিতদের’ গ্রহণ করতে সম্মত হয়। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদেও মেক্সিকো একই কাজ করবে কি না, সেটি পরিষ্কার নয়।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট গতকাল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাঁর দেশের নির্বাসিত নাগরিকদের গ্রহণ করবেন তিনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত অন্যান্য দেশের নাগরিকদের গ্রহণ করার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি।