মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের পর অনেক ভারতীয় বিশ্লেষক আশা করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ভারতের জন্য সুফল বয়ে আনবে। কিন্তু মাত্র ছয় মাসের মাথায় সেই আশা হতাশায় রূপ নিচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে এবং প্রায় প্রতিদিনই হুমকি দিচ্ছে আরও শুল্ক বৃদ্ধির। বিশেষ করে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনাকে কেন্দ্র করে সম্পর্কের টানাপোড়েন চরমে উঠেছে। খবর আল জাজিরার।
রাশিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষুব্ধ
রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের পরও ভারত তাদের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রেখেছে—এতে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প প্রশাসন। মোদি সরকারের পক্ষ থেকে এখনও সস্তায় রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানি অব্যাহত আছে। ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, “ভারত ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পেছনে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে” এবং এই কারণেই ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে।
ভারত অবশ্য এই অভিযোগকে ‘অন্যায্য’ এবং ‘অযৌক্তিক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে, যুক্তি দিয়েছে যে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র নিজেরাও রাশিয়ার সঙ্গে বড় পরিসরে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাণিজ্য চুক্তি অনিশ্চিত
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বহুল প্রত্যাশিত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির কোনো সমাধান হয়নি। ট্রাম্প সরকার ভারতকে কৃষি, ফার্মাসিউটিক্যাল ও ডিজিটাল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও বাজার উন্মুক্ত করার চাপ দিচ্ছে, যা ভারতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কৃষকদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কাশ্মীর সংঘর্ষ এবং তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা
এপ্রিল মাসে কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা চরমে ওঠে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনিই মধ্যস্থতা করে যুদ্ধ থামিয়েছেন, যদিও মোদি সরকার তা নাকচ করে বলেছে, কোনো বিদেশি নেতার সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই যুদ্ধবিরতি হয়েছে।
পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে
যুদ্ধবিরতির পরই ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানান, যা নজিরবিহীন ঘটনা। এরপর পাকিস্তান ট্রাম্পকে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কারে মনোনীত করার আহ্বান জানায়। ট্রাম্প বলেন, “আমি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ থামিয়েছি।”
অভিবাসন ও চাকরি সংকট
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ফেরত পাঠানোর ছবি ভারতে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এর পাশাপাশি এইচ-১বি ভিসার ওপরও কড়াকড়ি আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ভারতে কর্মী নিয়োগ করে এমন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশীয় নাগরিকদের অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে।
ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কোন পথে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০ বছরের কৌশলগত সম্পর্কের ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক বর্তমানে সবচেয়ে নিচে নেমে গেছে। ভারতের “কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন” নীতির কারণে তারা পশ্চিমা চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইতোমধ্যেই মস্কো সফর করেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করও শিগগিরই রাশিয়া যাচ্ছেন। এমনকি প্রেসিডেন্ট পুতিনও ২০২৫ সালের শেষ দিকে ভারত সফরের পরিকল্পনা করছেন।
বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, “ভারতের স্বকীয় পররাষ্ট্রনীতি তাদের বৈশ্বিক অবস্থান বজায় রাখতে সাহায্য করেছে। ট্রাম্পের চাপেও তা বদলাবে না।”
আরও পড়ুন
ট্রাম্পের ৫০% শুল্কে ভারতের শেয়ারবাজারে বড় ধস
থাইল্যান্ড ভ্রমণের ভিসা ফি বাড়ল, কার্যকর ১ সেপ্টেম্বর থেকে
চাকরি পাওয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের তথ্য নিচ্ছে সরকার: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা