October 4, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, August 23rd, 2023, 8:15 pm

ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার যাত্রায় যোগ দিন: দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী

ছবি: পি আই ডি

২০৪১ সালের মধ্যে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এবং সম্পূর্ণ উন্নত স্মার্ট দেশে বাংলাদেশে পরিণত হতে চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে বিনিয়োগের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই আপনারা আমাদের উন্নয়নের যাত্রায় যোগ দিন। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে আপনার বিনিয়োগ সফল হবে এবং আমরা দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্বের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।’

বুধবার (২৩ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেল অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) যৌথ উদ্যোগে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস সামিটে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমার একটি স্বপ্ন আছে, বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের একটি স্বপ্ন আছে। আর তা হলো ২০৪১ সালের মধ্যে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এবং একটি সম্পূর্ণ উন্নত স্মার্ট জাতিতে পরিণত হওয়া।’

শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করে বলেন, ধারাবাহিকভাবে উচ্চ আয়ের কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিরাপদ।

তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে সবচেয়ে উন্মুক্ত প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নীতি রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে একটি উদার শিল্প নীতি, ওয়ান স্টপ সার্ভিস, শতভাগ বৈদেশিক মালিকানার জন্য ভাতা, একটি সহজ প্রস্থান নীতি, ১৫ বছরের কর অব্যাহতি, আমদানি করা যন্ত্রপাতির জন্য ভ্যাট অব্যাহতি, সুশৃঙ্খল সেবা এবং আরও অনেক কিছু।

তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের অসংখ্য সম্ভাবনা অনুসন্ধানের জন্য স্বাগত জানাই। বাংলাদেশ কী দিচ্ছে তার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। বাংলাদেশকে আরও ভালোভাবে জানার এবং ভবিষ্যতে বিনিয়োগের এখনই সময়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, অভিন্ন মূল্যবোধ, সাংস্কৃতিক বন্ধন এবং অভিন্ন বিশ্বাসের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য সংযোগের মাধ্যমে এই বন্ধন আরও জোরদার হয়েছে। উভয় দেশের উন্নয়নের পথ একই রকম, যা সহযোগিতা এবং প্রবৃদ্ধিকে সম্ভব করে তোলে।

তিনি বলেন, উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও গত বছর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩১ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। এতে বোঝা যায়, উভয় দেশের আমদানি-রপ্তানি সম্ভাবনার ক্ষেত্রে সহযোগিতার আশাব্যাঞ্জক সুযোগ রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও বাণিজ্য সংগঠনগুলোকে সম্পৃক্ত করে উভয় দেশের জন্য সহযোগিতার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়ার বাইরে, আমরা ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত যৌথ কমিটি’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি’ নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আইসিটি, ইলেকট্রনিক্স, অবকাঠামো, টেক্সটাইল, পর্যটন, ভারী শিল্প ও ক্ষুদ্র শিল্পের মতো বিভিন্ন খাতে সুযোগ দেয়।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের সরকার সুষ্ঠু ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মতো সংস্থাগুলো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সর্বোত্তম রিটার্নের জন্য সহায়তা করে।

তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য প্রস্তুত। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, এআই ও ভেঞ্চার ক্যাপিটালের মধ্যে, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী “ফাইন্যান্সিয়াল কানেক্টিভিটি” অনুসরণ করছে। প্রচলিত ভোক্তা ব্যাংকিংয়ের চেয়ে ‘বিনিয়োগ ব্যাংকিং’ কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রয়োজনীয় দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজারকে উন্নীত করছে। ২০২০ সালে, শেয়ার বাজারগুলো ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা জিডিপির ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ নিয়ে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ছাড়িয়ে গেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আর্থিক অগ্রগতির জন্য আমরা আমাদের বন্ড বাজার সম্প্রসারণ করেছি। একই সঙ্গে, সুকুক, গ্রিন বন্ড, ইটিএফ, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, প্রাইভেট ইক্যুইটি ও ইমপ্যাক্ট ফান্ড চালু করেছি। শিগগিরই, আমরা আমাদের পুঁজিবাজারে মৌলিক নয় এমন পণ্য অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছি, যা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিনিয়োগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করবে।কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই মূলধন ও রিটার্ন ফেরতের সুবিধা বাড়ানোর মাধ্যমে পোর্টফোলিও বিনিয়োগও ত্রুটিহীন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি জনগোষ্ঠী একটি শক্তিশালী ভিত্তি গঠন করে। আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য প্রবাসীদের ধন্যবাদ। আমরা আমাদের প্রবৃদ্ধিতে আরও বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং সাউথ আফ্রিকান চেম্বারের মধ্যে একটি যৌথ ব্যবসায়িক ফোরামের ও পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের শক্তিশালী বেসরকারি খাত দেশের অর্থনীতিতে যারা বিনিয়োগ করবে তাদের জন্য ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দেবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পথে আমরা পূর্ণ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি।
দেশের জনগণকে শক্তির হৃদয় আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় দক্ষতাসম্পন্ন প্রায় সাড়ে ৫ কোটি তরুণ সামনের কাজটি সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উভয় পর্যায়ে যোগাযোগের মাধ্যমে আমাদের সৌভাগ্যবান অবস্থান আরও উন্নত হয়েছে। উপরন্তু, ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ বাজার এবং ক্রমবর্ধমান ভোক্তা শ্রেণি এই জনতাত্ত্বিক সুবিধাকে আরও শক্তিশালী করে।’

তিনি বলেন, ১ দশমিক ৫ বিলিয়নেরও বেশি জনসংখ্যার দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা বর্তমানে দ্রুত নগরায়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্মুখীন হচ্ছে।

বিশেষ করে টেক্সটাইল, তৈরি পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যালস ও কৃষিপণ্যের মতো খাতগুলোতে রপ্তানি সম্প্রসারণের জন্য এটি বাংলাদেশের জন্য অনুকূল সুযোগ সৃষ্টি করবে।

তিনি উল্লেখ করেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ আফ্রিকার অব্যবহৃত বাজারের দিকে মনোনিবেশ করেছে। বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ী নেতাদের উভয়ই আফ্রিকার অর্থনীতির সম্ভাবনা এবং শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্কের সুবিধাগুলো স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণি, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং ক্রমবর্ধমান ভোক্তা চাহিদার কারণে আফ্রিকা বাংলাদেশের রপ্তানির জন্য একটি আকর্ষণীয় বাজারে পরিণত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে এবং ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক উন্মোচনের পথ প্রশস্ত করতে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ‘লুক আফ্রিকা’ নীতি গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, একই সঙ্গে বাংলাদেশ আফ্রিকার দেশগুলো থেকে প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ ও কাঁচামাল সংগ্রহের পথ অনুসন্ধান করছে।

তিনি বলেন, এই ক্যাটাগরিতে খনিজ, পেট্রোলিয়াম পণ্য, তুলা, কৃষিপণ্য এবং আরও অনেক কিছু জুড়ে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

—–ইউএনবি