তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক:
বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তিনির্ভর। ডিজিটালাইজেশন শুধু যোগাযোগ ও বিনোদনেই নয়, কর্মসংস্থান, ব্যবসা ও উদ্ভাবনে বিশাল পরিবর্তন এনেছে। বাংলাদেশও এই পরিবর্তনের অংশ, এবং নারীরাও ধীরে ধীরে ডিজিটাল দুনিয়ায় নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছেন। তবে এখনো চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নারী উদ্যোক্তা, কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও বিভিন্ন পেশাজীবীরা তাদের কর্মপরিধি বাড়াচ্ছেন। ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও অন্যান্য অনলাইন মার্কেটপ্লেসে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা, প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব ও সামাজিক বাধার কারণে অনেক নারী এখনো পিছিয়ে আছেন।
ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলাদেশের নারীদের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
ডিজিটাল লিঙ্গ বৈষম্য
এখনো অনেক নারী প্রযুক্তি ব্যবহারে সীমিত সুযোগ পান। পরিবার ও সমাজে নারীদের ডিজিটাল দক্ষতার ওপর কম গুরুত্ব দেওয়া হয়।
নিরাপত্তার ঝুঁকি
সাইবার হুমকি, হ্যাকিং, অনলাইন হয়রানি, ও কনটেন্ট চুরি অন্যতম বড় সমস্যা। অনেক নারী অনলাইন প্ল্যাটফর্মে হেনস্তার শিকার হয়ে পিছিয়ে আসেন।
অর্থনৈতিক বাধা
অনেক নারী উদ্যোক্তা বিনিয়োগ ও ফান্ডিং পেতে সমস্যায় পড়েন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা পেতে নারীদের নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়।
সামাজিক ও পারিবারিক বাধা
অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের সমর্থন না পাওয়ায় নারীরা উদ্যোক্তা বা কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে পারেন না। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীদের কার্যক্রমকে অনেকেই সহজভাবে নেয় না।
সম্ভাবনা ও উন্নতির দিক
ই-কমার্স ও ফ্রিল্যান্সিং
নারী উদ্যোক্তারা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।
কনটেন্ট ক্রিয়েশন ও ইনফ্লুয়েন্সিং
ইউটিউব, ফেসবুক ও টিকটকে অনেক নারী কনটেন্ট ক্রিয়েটর সফল হয়েছেন। নারীরা এখন ভ্লগিং, অনলাইন শিক্ষাদান, মেকআপ টিউটোরিয়াল, রান্নাবান্না ও সামাজিক সচেতনতামূলক কনটেন্ট তৈরি করছেন।
স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তা উদ্যোগ
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিচ্ছে। সিমিনসবিজনেস ও ওমেন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করছে। এমনকি আইসিটি ডিভিশন ও এলআইসিটি প্রোজেক্ট নারীদের ডিজিটাল দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
বাংলাদেশের সফল নারী উদ্যোক্তা ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর
বাংলাদেশের নারীরা ধীরে ধীরে ডিজিটাল দুনিয়ায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছেন। উদ্যোক্তা, কনটেন্ট ক্রিয়েটর, ফ্রিল্যান্সারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা দক্ষতার প্রমাণ দিচ্ছেন। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা, অর্থায়ন ও পারিবারিক সমর্থন নিশ্চিত করতে পারলে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন সফল নারী উদ্যোক্তা ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর আছেন, যারা তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে সমাজে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন-
মুনজেরিন শহীদ
অনলাইন শিক্ষক হিসেবে মুনজেরিন শহীদের নাম সবার মুখে মুখে। সহজ সাবলীল ভাষায় অনলাইনে ইংরেজি শিক্ষাদানের জন্য জনপ্রিয় নাম মুনজেরিন শহীদ। প্রতিদিন ৩০ মিলিয়নেরও বেশি শিক্ষার্থী ইংরেজি শিখছে মুনজেরিন এর ক্লাসগুলো থেকে। মুনজেরিন শহীদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তিনি তার মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। বিশ্বের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপে তার দ্বিতীয় মাস্টার্স সম্পন্ন করেন ইংরেজি শিক্ষার ওপর। মুনজেরিন বর্তমানে টেন মিনিট স্কুলের শিক্ষক এবং মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কর্মরত আছেন। তার দেখাদেখি অনেক নারীই অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ে ক্লাস নিয়ে থাকেন। তিনি ঘরে বসেই কীভাবে ইংরেজি শেখা যায় তার কৌশল নিয়ে বেশ কিছু বই লিখেছেন।
আফসানা আক্তার
আফসানা আক্তার ছোটবেলা থেকেই স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কাপড়ের ক্যানভাসে রংতুলি দিয়ে নকশা আঁকতে ভালোবাসতেন, যা তাকে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রেরণা জোগায়। তিনি ‘গুটিপোকা’ নামে একটি ফেসবুক পেজ চালু করেন, যেখানে নিজের তৈরি পোশাক ও নকশা প্রদর্শন করেন। মেটার ‘শিমিনসবিজনেস’ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি ডিজিটাল টুলস ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করেন, যা তার ব্যবসা প্রসারে সহায়তা করে।
উম্মে কুলসুম পপি
উম্মে কুলসুম পপি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তার উদ্যোগ ও সাফল্যের গল্প বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে, যা নতুন প্রজন্মের নারীদের জন্য প্রেরণার উৎস। এই নারীরা তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা, কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে সমাজে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তাদের সাফল্যের গল্প নতুন প্রজন্মের নারীদের উদ্যোক্তা ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর হওয়ার পথে প্রেরণা জোগাবে। ডিজিটাল দুনিয়ায় নারীর অবস্থান শক্তিশালী করতে প্রয়োজন—প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তা ও সহায়তা। সরকার, সমাজ ও পরিবার যদি একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে নারীরা আরও বেশি সফল হবেন এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন।
থটস অব শামস
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন কিন্তু থটস অব শামসকে চেনেন না এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবে না। আসল নাম শামস আফরোজ চৌধুরী। তবে তিনি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে থটস অব শামস নামেই পরিচিত। চাকরি ছেড়ে হয়েছেন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। শিক্ষা ও বিনোদনমূলক বিভিন্ন ভিডিও তৈরি করে ফেসবুকে ব্যাপক জনপ্রিয় শামস। ভিডিও কনটেন্ট রচনা পরিচালনা, এডিটিং এবং ১২ থেকে ১৫ ধরনের চরিত্র সব একাই করেন শামস। স্কুলের শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে শাসম ভিডিও তৈরি করেই প্রতি মাসে কয়েক লাখ লাখ টাকা উপার্জন করছেন। সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তার ভিডিওতে। এছাড়া আলোচিত বিষয় নিয়েও মজার ভিডিও বানান শামস। তবে তার ভিডিও শুধু মজা নয়, সেই সঙ্গে সেখানে প্রকাশ পায় সমাজের নানান ভালো এবং মন্দ দিক। তার একেকটি ভিডিও ১০- ১২ মিলিয়ন পর্যন্ত ভিউ হয়। ইউটিউব এবং ফেসবুক দুই প্ল্যাটফর্মেই নিয়মিত ভিডিও আপলোড করেন তিনি। এ পর্যন্ত পেয়েছেন নানান সম্মাননা পুরস্কার।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশি ১২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেল ‘আরাকান আর্মি’
ট্রাম্প-পুতিন যত বেশি দেখা করবেন, বিশ্ব শান্তির জন্য তত ভালো হবে: ফিফা প্রধান
চব্বিশ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু