নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার খুব কাছেই আছে ঐতিহাসিক প্রাচীন এক শহর। এটি পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি। এটি অনেকের কাছে ‘হারানো নগরী’ নামেও পরিচিত। সোনারগাঁওয়ে ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠে এই নগর। নাম তার পানাম নগর।
ঢাকা থেকে মাত্র ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর এটি। যারা ঢাকার আশপাশেই ডে লং ট্যুরে ঘুরতে যেতে চান, তাদের জন্য সেরা বিকল্প হতে পারে এই প্রাচীন শহর। বড় নগর, খাস নগর, পানাম নগর- প্রাচীন সোনারগাঁওয়ের এই তিন নগরের মধ্যে পানাম ছিলো সবচেয়ে আকর্ষণীয় নগর। পানাম নগরীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার বার ভূঁইয়াদের ইতিহাস।
সোনালি ইতিহাসের সাক্ষী পানাম নগরী প্রতিনিয়ত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মুগ্ধ করছে। দিন দিন ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষণের প্রতীক হয়ে উঠছে এই নগরের আশপাশের সর্দার বাড়ি, ঈশা খাঁর তোরণ, নীলকুঠি, বণিক বসতি, ঠাকুর বাড়ি ও পানাম নগর সেতু।
বর্তমানে পানাম নগরের দু’ধারে ঔপনিবেশিক আমলের মোট ৫২টি স্থাপনা রয়েছে। এর উত্তরদিকে ৩১টি ও দক্ষিণদিকে ২১টি স্থাপনা অবস্থিত। স্থাপনাগুলোর স্থাপত্যে ইউরোপীয় শিল্পরীতির সঙ্গে মোঘল শিল্পরীতির মিশ্রণ দেখতে পাওয়া যায়।
নগরীতে এখনও দেখা যায় ৪০০ বছরের পুরোনো মঠ-বাড়ি। এর পশ্চিমে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য কুঠি ‘নীলকুঠি’ রয়েছে। আছে পোদ্দার বাড়ি, কাশিনাথের বাড়ি, সোনারগাঁয়ের একমাত্র আর্টগ্যালারিসহ নানা প্রাচীন ভবন। পানামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পঙ্খীরাজ খাল।
পানাম নগরীর নকশা নির্মাণ করা হয়েছে বেশ নিখুঁত আকারে। নগরীর প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে কূপসহ আবাস উপযোগী নিদর্শন। পানি সরবরাহের জন্য দুপাশে খাল ও পুকুর আছে।
এখানে থাকার বাসস্থান ছাড়াও আছে উপাসনালয়, গোসলখানা, পান্থশালা, দরবার কক্ষ। এছাড়া আছে ৪০০ বছরের পুরোনো টাঁকশাল বাড়ি। সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘর থেকে পশ্চিম দিকে রয়েছে গোয়ালদী হোসেন শাহী মসজিদ।
মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা দিয়ে একটু দক্ষিণ দিকে গেলে দেখা যায় আরো কিছু ইমারত, বারো আউলিয়ার মাজার, হযরত শাহ ইব্রাহিম দানিশ মন্দা ও তাঁর বংশধরদের মাজার, দমদম গ্রামে অবস্থিত দমদমদুর্গ ইত্যাদি।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নীলচাষের নির্মম ইতিহাসের নীরব সাক্ষী পানামের নীলকুঠি। পানাম পুলের কাছে দুলালপুর সড়কের পাশেই এর অবস্থান। এ ছাড়াও আমিনপুর ও দুলালপুর গ্রামের সংযোগ রক্ষাকারী পানাম পুলটি পঙ্খীরাজ খালের ওপর ১৭ শতকে নির্মিত হয়। তিনটি খিলানের উপর পুলটি স্থাপিত।
তা ছাড়াও নগরীর আশেপাশে ছড়িয়ে আছে ঈসা খাঁ ও তাঁর ছেলে মুসা খাঁর প্রমোদ ভবন, ফতেহ শাহের মসজিদ, সোনাকান্দা দুর্গ, পঞ্চপীরের মাজার, কদম রসুল, চিলেকোঠাসহ বহু পুরাতাত্ত্বিক গুরুত্ববহ স্থাপনা।
কথা হয় পানাম নগর ঘুরতে আসা এক পর্যটকের সঙ্গে। তিনি জানান, ব্যস্ত যান্ত্রিক নগরীর একঘেয়েমিতা দূর করতে উপযুক্ত দর্শনীয় স্থান হল পানাম নগর।
পানামের চারপাশের সবুজের সমারোহ প্রতিনিয়ত তার নয়ন জুড়িয়ে দেয়। শহরের প্রতিটি ইট-পাথরে লেগে থাকা এক একটি ইতিহাস-ঐতিহ্যের গল্প জানার আগ্রহে তার এখানে আসা বলে জানান তিনি।
কীভাবে যাবেন পানাম সিটিতে?
ঢাকার গুলিস্তান থেকে স্বদেশ, বোরাক, দোয়েল ও সোনারগাঁ নামক বাসে উঠে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় নামতে হবে। গুলিস্তান থেকে জনপ্রতি বাস ভাড়া ৪০-৫০ টাকা লাগবে।
মোগরাপাড়া থেকে লোকশিল্প জাদুঘরের দূরত্ব প্রায় ২ কিলোমিটার। চাইলে রিকশা অথবা সিএনজিতে করেও যেতে পারেন। এছাড়া নিজস্ব পরিবহন থাকলে তা দিয়েও সহজে যেতে পারেন।
আরও পড়ুন
ঢাকার কাছেই ঘুরে আসুন বড় সর্দার বাড়িতে
শীতে ঘুরতে পারেন মিরসরাইয়ের যেসব দর্শনীয় স্থানে
নীলগিরি ভ্রমণে কী কী দেখবেন?