December 28, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, October 14th, 2024, 5:36 pm

ঢাকার পাইকারি বাজার তেজগাঁও আড়তে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফার্মের মুরগির ডিমের বাড়তি দামের মধ্যে বাজারে ডিমের সরবরাহে সমস্যা শুরু হয়েছে। রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও আড়তে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল রোববার রাতে তেজগাঁও আড়তে ডিমের কোনো ট্রাক আসেনি। শনিবার রাতেও খুব কম পরিমাণে ডিম বিক্রি করেছেন আড়তের বিক্রেতারা।

তেজগাঁওয়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে তাঁদের ডিম কিনতে হচ্ছে। কিন্তু কেনা দামের ভিত্তিতে তা বিক্রি করতে পারছেন না। সরকার নির্ধারিত দাম নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। তাই ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান ও জরিমানার ভয়ে তাঁরা মুরগির ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। ফলে গতকাল রাতে তেজগাঁওয়ে ডিমের কোনো গাড়ি আসেনি; কোনো ডিমও বিক্রি হয়নি।

রাজধানীতে ডিম বিক্রির অন্যতম বড় পাইকারি বাজার হচ্ছে তেজগাঁও আড়ত। দেশের বিভিন্ন স্থানের খামার থেকে ট্রাকে করে এখানে ডিম আসে। এরপর তেজগাঁও থেকে ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজার ও পাড়া-মহল্লায় ডিম সরবরাহ হয়। ফলে তেজগাঁওয়ে ডিম বিক্রি বন্ধ রাখলে সাধারণত খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়ে।

রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারে আজ সোমবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে ফার্মের মুরগির এক ডজন বাদামি ডিম ১৮০ টাকা ও সাদা ডিম ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের সরবরাহ তুলনামূলক কম বলেও জানান বিক্রেতারা। ডিমের পাশাপাশি ফার্মের মুরগির দামও চড়া। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০–২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৮০–২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর হাইব্রিড ধরনের সোনালি মুরগির দাম এখন ২৬০–২৭০ টাকা কেজি।

আজ দুপুরে কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এই বাজারের কোনো দোকানে ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে না। শুধু একটি দোকানে কয়েকটি লাল ও দুই ডজনের মতো সাদা রঙের ডিম পাওয়া গেছে। এসব ডিমের ডজন ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। যদিও সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই লাল ডিমগুলো বিক্রি হয়ে যায়।

ওই দোকানের ডিম বিক্রেতা ফজুলল হক প্রতিবেদকে বলেন, ‘ফার্মের মুরগির যে ডিম দেখছেন, তা গতকালের। তা–ও কাঁঠালবাগান বাজার থেকে আনা হয়েছে। তেজগাঁও ডিমের আড়ত থেকে গত দুই দিনে কোনো ডিম কিনতে পারিনি। এর মধ্যে গত রাতে সেখানে ডিম বিক্রি বন্ধ ছিল; আর তার আগের রাতে সরবরাহ ছিল খুবই কম।’

অভিযানের ভয়ে বিক্রি বন্ধ

গত ১৬ সেপ্টেম্বর ফার্মের মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বেঁধে দেওয়া দাম অনুসারে, উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে তা ১১ টাকা ৮৭ পয়সা হওয়ার কথা। সে হিসাবে খুচরা পর্যায়ে এক ডজন ডিমের দাম হয় ১৪২ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে এখন ১৭০-১৮০ টাকায় ডিম বিক্রি হচ্ছে। ডিমের এমন উচ্চ দাম বেশ কিছুদিন ধরে চলছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডিম উৎপাদক ও পাইকারি ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেই তারা ডিমের ‘যৌক্তিক দাম’ নির্ধারণ করেছিল।

সরকার নির্ধারিত এই দাম বাস্তবায়ন করতে ডিমের বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। যৌক্তিক মূল্যে ডিম বিক্রি না করলে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করছে। মূলত অভিযানের ভয়েই ডিম বিক্রি বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছেন তেজগাঁওয়ের ব্যবসায়ীরা।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ জানান, সরকার খুচরা পর্যায়ে ডিমের যে দাম নির্ধারণ করেছে, তার চেয়ে বেশি দাম দিয়ে খামারিদের কাছ থেকে ডিম কিনছেন তাঁরা। এ কারণে বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দামে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, গতকাল রাতে তাঁরা পাইকারিতে ডিম বিক্রি করেছেন প্রতিটি ১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে। এই ডিম তাঁরা কিনেছেন ১২ টাকা থেকে ১২ টাকা ২০ পয়সা দরে।

আমানত উল্লাহ আরও জানান, তেজগাঁওয়ে দৈনিক ১৪-১৫ লাখ ডিম আসে। ঢাকায় ডিমের চাহিদা এক কোটি। তেজগাঁওয়ের বাইরে কিছু জায়গায় অনেকে ঠিকই উচ্চ দামে ডিম বিক্রি করছেন। কিন্তু বাড়তি দামে কেনাবেচার কারণে শুধু তাঁদের দায়ী করা হচ্ছে, অভিযান চালানো হচ্ছে। এ জন্য ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন তাঁরা।

ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আরও বলেন, ‘সরকারের নিয়ম না মানলে জরিমানা ও শাস্তি হতে পারে। তাই এখন বিক্রি বন্ধ রেখে কী করা যায়, সে উপায় খুঁজছি। আজকে (সোমবার) সকালে ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে সেখানে সভা থাকায় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। বিকেলে আবার কথা বলতে যাব।’

তবে তেজগাঁও থেকে নিয়মিত ডিম কেনেন এমন কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা প্রতিবেদকে জানান, তেজগাঁওয়ে ডিমের গাড়ি না ঢুকলে তা শহরেরই ভিন্ন এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়। আজ ভোরে এমন কিছু জায়গা থেকে খুচরা বিক্রেতারা ডিম কিনেছেন। তবে এ বিষয়ে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির কারও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।