অনলাইন ডেস্ক :
ক্যারিয়ারে অভিনেতাদের সামনে বিভিন্ন চরিত্রে কাজ করার সুযোগ আসে। তার মধ্যে বায়োপিকে কোনো ব্যক্তির চরিত্র নিজের মধ্যে ধারণ করা নিঃসন্দেহে অন্যতম কঠিন কাজ। কিছুকিছু অভিনেতা নিজের মধ্যে কোনো ব্যক্তির চরিত্র এতটাই নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলেন যে খোদ তাকেই অবাক হয়ে যেতে হয়। চঞ্চল চৌধুরীর ক্ষেত্রেও যেন তেমনটাই হলো। মৃণাল সেনের জীবনের ঘটনাপ্রবাহ এবং তার সৃষ্টি নিয়ে “পদাতিক” নামে সিনেমা বানাচ্ছেন টলিউডের জনপ্রিয় নির্মাতা সৃজিত মুখার্জি। সেখানে মৃণাল সেনের ভূমিকায় অভিনয় করবেন চঞ্চল চৌধুরী। মৃণাল সেনের চরিত্রটি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এমন কাজের জন্য নিজের দেশ-শহরের কারও ওপর নয়, বরং চঞ্চলের ওপর আস্থা রাখেন সৃজিত মুখার্জি। গত ১৪ মে ছিল মৃণাল সেনের জন্মদিন। এ উপলক্ষে মার্কিন সাময়িকী ভ্যারাইটিতে “পদাতিক” নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। সেখানেই সিনেমাটির একটি স্থিরচিত্র ব্যবহার করা হয়। যেটা দেখে স্বয়ং চঞ্চলই চমকে গেছেন! গত মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ অভিনেতা বলেন, “ছবিটা দেখে প্রথমে আমি নিজেও অবাক হয়ে যাই। এটা মৃণাল সেন নাকি আমি! সত্যটা বুঝতে একটু সময় লেগেছে, সেই সঙ্গে অনেকখানি ভালোও লেগেছে।
মেকআপ আর্টিস্ট সোমনাথ কু-ুর কী অসাধারণ কাজ।”প্রসঙ্গ নিয়ে নিজের ভাবনা বিস্তৃত করে চঞ্চল বলেন, “মৃণাল সেনের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিখ্যাত সাময়িকী ভ্যারাইটি মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনীত আমার এই ছবিটি দিয়ে আমার, পরিচালক সৃজিত মুখার্জি ও প্রযোজক ফেরদৌসুল হাসানের একটা ইন্টারভিউ ছেপেছে। বাবার সদ্য মৃত্যুর শোক বুকে নিয়ে শেষ করেছি মৃনাল সেনের জীবনীভিত্তিক সিনেমা ‘পদাতিক’র কাজ। এ বছরেই ছবিটি মুক্তি পাবে সিনেমা হলে। প্রযোজকের ইচ্ছা, একসঙ্গে দুই বাংলাতেই তিনি ‘পদাতিক’ মুক্তি দিতে চান।” মৃণাল সেন হয়ে ওঠার পেছনে চঞ্চল প্রকৃতিগতভাবেই কিছুটা সুবিধা পেয়েছেন বটে। কাররণ মৃণালের সঙ্গে তার চেহারার খানিকটা মিল আছে। কিন্তু একজন কিংবদন্তি নির্মাতার চিন্তা, আদর্শ, ভাবভঙ্গি আর চলচ্চিত্র দর্শন, এসব ধারণ করা মোটেও সহজ ছিল না।”
এমন চ্যালেঞ্জিং ও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে সুযোগ দেওয়ার জন্য নির্মাতা সৃজিতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চঞ্চল বলেন, “ধন্যবাদ ও অশেষ কৃতজ্ঞতা সৃজিতদার প্রতি, এরকম একটি চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয়ে আমাকে নির্বাচন করার জন্য।” মার্কিন সাময়িকী ভ্যারাইটির সেই প্রতিবেদনে চঞ্চল বলেন, “শুধু দেখতে একরকম হওয়া একটি বায়োপিকের জন্য যথেষ্ট নয়, বিশেষ করে মৃণাল সেনের মতো একজন কিংবদন্তির ক্ষেত্রে। আমার চেষ্টা ছিল তার ভেতরকার অনুভূতি ধারণ করার। সেই চ্যালেঞ্জটা আমি নিয়েছি। মানুষ হয়তো মৃণাল সেনের ছবি দেখেছেন, জেনেছেন। কিন্তু তার জীবনাদর্শ জানেন না। মানুষের কাছে সেই অজানা বিষয়গুলো তুলে ধরাই আমাদের দায়িত্ব ছিল।” নির্মাতা সৃজিত মুখার্জি বলেন, “একজন ভারতীয় নির্মাতা হিসেবে তার অনেকগুলো দিক ছিল। তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন, যিনি প্রযোজকদের সঙ্গে বাজেট বাড়ানো নয়, বরং কমানোর জন্য তর্ক করতেন। কারণ তিনি জানতেন, বাজেট বাড়লে কাজের মধ্যে প্রযোজকের হস্তক্ষেপও বাড়বে। তিনি একটা ক্যামেরা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তেন এবং শুটিং প্রক্রিয়া খুব স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। আমি যখনই কলকাতা বা ভারতের কোনো শহরে শুটিং করি, তখন যেন মনে মনে মৃণাল সেনকে উদযাপন করি।”
১৯২৩ সালের ১৪ মে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মৃণাল সেন। পড়াশোনার জন্য কলকাতায় গিয়ে সেখানেই স্থায়ী হন। ১৯৫৫ সালে মুক্তি পায় তার নির্মিত প্রথম সিনেমা “রাত-ভোর”। যদিও সেটি খুব একটা সাফল্য পায়নি। তবে পরবর্তীতে “নীল আকাশের নিচে”, “বাইশে শ্রাবণ”, “ভুবন সোম”, “ইন্টারভিউ”, “কলকাতা ৭১”, “পদাতিক”, “মৃগয়া”র মতো কালজয়ী সব সিনেমা নির্মাণ করে খ্যাতি অর্জন করেন। বাংলা ভাষার চলচ্চিত্রে সর্বকালের সেরা নির্মাতাদের একজন তিনি। ২০২৩ সালে জাঁকজমকভাবে মৃণাল সেনের জন্মশত বর্ষ উদযাপন করা হবে। তারই অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে “পদাতিক”। বলে রাখা ভালো, মৃণাল সেন নির্মিত একই নামের চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৩ সালে। সৃজিত মুখার্জির পরিচালিত “পদাতিক” সিনেমায় উঠে আসবে মৃণাল সেনের ব্যক্তিগত ও চলচ্চিত্র জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো। এখানে মৃণাল সেনের স্ত্রী গীতা সেনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কলকাতার মনামী ঘোষ। ইতোমধ্যে ছবির শুটিং পর্ব শেষ। চলছে পোস্ট প্রডাকশনের কাজ। শিগগিরই এর মুক্তির ঘোষণা আসবে।
আরও পড়ুন
আবারও মুক্তি পেলো ‘কাহো না পেয়ার হ্যায়’ ছবিটি
‘সন্দেহের ছায়ায়’ উত্তাপ ছড়ালেন জয়া
তাহসান-রোজার মধুচন্দ্রিমার ছবি-ভিডিও ভাইরাল!