নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিজয় দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলে তিন দিনের টানা অবকাশে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নেমেছে মানুষের ঢল; তাদের জায়গা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হোটেল, মোটেলগুলো। মহামারীতে দীর্ঘ মন্দার পর ব্যাপক পর্যটক সমাগমে হোটেল-মোটেল ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা খুশি। তবে সৈকতে বিপুল সংখ্যক মানুষকে নিরাপত্তা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ড কর্মীদের। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজারে পর্যটকের এই স্রোত শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, টানা ছুটির প্রথম দিন গত বৃহস্পতিবারই বিপুল সংখ্যক পর্যটক এসেছেন। কক্সবাজারের সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজ-কটেজের ৯৫ শতাংশের বেশি কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। আগে আসা পর্যটকদের কক্ষ ছেড়ে দেওয়ার পরপরই বুকিং হয়ে যাচ্ছে। শুক্র ও শনিবার আরও পর্যটকের সমাগম ঘটবে। নতুন করে আসা পর্যটকদের কক্ষ দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হবে। এই হোটেল ব্যবসায়ী জানান, কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজ-কটেজগুলোর ধারণ ক্ষমতা দেড় লাখের মত। টানা ছুটিতে আরও বেশি পর্যটক ভিড় করলে তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। তাই কক্সবাজারে ভ্রমণে বের হওয়ার আগে আবাসিক হোটেলগুলোর পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে আসার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন আবদুর রহমান। গত বৃহস্পতিবার বিকালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের শৈবাল পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ছিল লোকারণ্য। কেউ ঘুরে বেড়িয়েছেন বিস্তীর্ণ সৈকতের বালিয়াড়িতে; ঘোড়ায় চড়ছেন, বালিয়াড়িতে আলপনা এঁকেছেন। অনেক পর্যটককে ছাতার নিচে বসে সাগরের হাওয়ায় গা ভাসাতে দেখা গেছে। অনেকে মোবাইল ফোনে আনন্দের এ মুহূর্তকে ফ্রেমবন্দি করেছেন। অনেকেই সাগরজলে ঢেউয়ের তালে তাল মিলিয়েছেন। শিশুদেরও দেখা গেছে বাবা-মায়ের সঙ্গে জলকেলিতে। ঢাকার ধানম-ি থেকে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বেড়াতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক চাকরিজীবী বলেন, ব্যস্ততার কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসার সময় বের করা কঠিন। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বাচ্চাদের স্কুলের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এর মধ্যে বিজয় দিবস ঘিরে টানা ছুটি পেয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে এসেছেন। ঢাকার মিরপুর থেকে চার বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে আসা সাজেদুল হক বলেন, ব্যবসা আর পারিবারিক কাজে ব্যস্ততার কারণে জীবনটা যান্ত্রিক হয়ে উঠেছিল। তাই অবসাদ কাটাতে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে কক্সবাজার এসেছি। রাতে সাগরের ঢেউয়ের গর্জন আর আলো-অঁধার সৈকতের অপার সৌন্দর্য্যরে টানেই বারে বারে কক্সবাজারে আসেন বলে জানালেন এ ভ্রমণ পিপাসু। ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) জানান, সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে এই মুহূর্তে দেড়-লক্ষাধিক পর্যটক অবস্থান করছেন। আরও লাখখানেক পর্যটক আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তা ও সেবা দিতে সীমিত সংখ্যক সদস্য নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে সাদা পোশাকেও ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। তাদের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও নজরদারি করছেন। এদিকে সাগরে গোসলে নেমে দুর্ঘটনা এড়াতে কাজ করছেন ‘সি সেইফ নামের’ একটি সংগঠনের উদ্ধার কর্মীরা। দলপতি কামাল হোসেন বলেন, সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে সাতটি ওয়াচ টাওয়ার থেকে নজর রাখা হচ্ছে। সাগরে স্নানে নামা পর্যটকদের সতর্ক করতে সৈকতের বালিয়াড়িতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে লাল, হলুদ ও সবুজ পতাকা। ভাটার সময় বাজানো হচ্ছে বাঁশি। গত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন সময়ে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট সাগরে গোসলে নেমে আটজন পর্যটক ¯্রােতের টানে ভেসে যাচ্ছিলেন। পরে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, বলেন কামাল।
আরও পড়ুন
সাংবাদিকদের সাথে রংপুর পুলিশ সুপারের মতবিনিময়
ডেঙ্গুতে এক দিনে মারা গেছেন আরও ৪ জন
অগ্নিকান্ডে মিঠাপুকুরের নয়ন একমাত্র উপার্জনকারীর মৃত্যুতে দিশেহারা পরিবার