জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার: শুষ্ক মৌসুমে টানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর ছাটাইকৃত চা গাছে সেচ দিয়ে ও বৃষ্টির ছোয়ায় মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা বাগানে গাছে গাছে আসছে নতুন কুড়িঁ। শুরু হয়েছে চা পাতা চয়ন উত্তোলন। এতে খুশি চা শ্রমিক ও বাগান মালিকরা। বাগানে বাগানে বইছে আনন্দের হিল্লোল। দোয়া ও পূজাসহ নানা আনুষ্ঠানিকতায় নতুন পাতা উত্তোলণ করে চা বাগানগুলোতে উৎপাদন শুরু হয়েছে। ২০২৫ সালে চায়ের লক্ষমাত্রা নিধার্রণ করা হয়েছে ১০৩ মিলিয়ন কেজি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে লক্ষমাত্রার চেয়েও বেশি উৎপাদন হবে বলে জানান চা বিজ্ঞানীরা। চা প্রকৃতি নির্ভর একটি কৃষিজ পণ্য। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে চায়ের উৎপাদনও ভালো হয়। এর জন্য প্রয়োজন পরিমিত বৃষ্টি ও সূর্য কিরণ। মার্চের শুরুতে কিছু বৃষ্টি হওয়াতে ছাটাই করা চা গাছে আসতে শুরু করেছে নতুন কুঁিড়। বেশ কিছু বাগানে শ্রমিকরা শুরু করেছেন পাতা তোলা। চা বিজ্ঞানীরা জানান, চায়ের উৎপাদন বাড়াতে চা গাছে প্রুনিং (ছাঁটাই) এর বিকল্প কিছু নেই। এর ফলে চা গাছে প্রচুর পাতা গজায়। চা সংশ্লিষ্টদের কাছে চা গাছের পাতাই হচ্ছে সোনা এটাকে অনেকে সবুজ সোনাও বলে থাকেন। তাই যত পাতা গজাবে তত সবুজ সোনায় ভরে যাবে দেশ।
২০২৩ সালে ১০৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। আর ২০২৪ সালে হয় ৯৩ মিলিয়ন কেজি। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে ১০% কম ছিল। বাংলাদেশে নিবন্ধনকৃত ১৬৮টি চা বাগান রয়েছে। পাশাপাশি পঞ্চগড়ে রয়েছে ক্ষুদ্রায়িত অনেক গুলো চা বাগান পঞ্চগড় ও দেশের ১৬৮টি চা বাগান মিলিয়ে ২০২৫ এর লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৩ মিলিয়ন কেজি।
কমলগঞ্জের শ্রী গোবিন্দ পুর চা বাগানের শ্রমিকরা জানান, ‘চা বাগানে ডিসেম্বরে চা গাছ প্রুনিং করা হয়। এই সময় থেকে বৃষ্টি ছিলনা। বিকল্প ব্যবস্থায় ইরিগ্রেশন সেচ করা হয়েছে। আর মার্চের শুরুতে অল্প কিছু বৃষ্টিপাত পাওয়া গেছে। এর ফলে মার্চ মাসেই চা গাছে পাতা আসতে শুরু করেছে। এর পর মালিক এসে সবাইকে নিয়ে মিলাদ মাহফিল করার পর তারা এখন পাতা তুলছেন। ন্যাশনাল টি কোম্পানীর পদ্মছড়া চা বাগানের শ্রমিক লক্ষী চাষা ও পূর্ণীমা বারাইক জানান, ‘দুই মাসের উপরে পাতা তোলা বন্ধ ছিল। এখন গাছের মুখ খুলছে। সপ্তাহ দশ দিনের মধ্যেই গাছের উপরের অংশে সবুজ ঝাড় বাঁধা শেষ হবে টিপিং এর পর তারা পাতা তুলবেন। এখন চলছে টেপিং ঝুপ বাঁধা এর কাজ।
একই বাগানের বিজয়া গোয়ালা ও মাধবী চাষা জানান, ‘বাগানের ম্যানেজম্যান্ট ও শ্রমিক সবাই মিলে পূজার্চনার মধ্যদিয়ে তারা পাতা তুলা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, চা উৎপাদন প্রকৃতি নির্ভর। সারা বছর যেন হাত ভরে পাতা তুলতে পারেন তাই ভগবানের নামে পূজা দিয়ে তারা পাতা তোলা শুরু করেন। এটা তারা প্রত্যেক বছরই করেন।’
মাধবপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক দিপন সিংহ জানান, ‘চায়ের জন্য বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতির পাশাপাশি প্রকৃতির উপরও নির্ভর করতে হয়। চায়ের জন্য মূলত প্রয়োজন পরিমিত বৃষ্টিপাত ও সূর্যের আলো। অনেক জায়গায় ইরিগেশন পৌছানো সম্ভব হয়না। তাছাড়া বর্ষায় যদি অতি বৃষ্টি হয় তাও চায়ের জন্য ক্ষতিকর। আবার প্রচন্ড তাপদাহ হলে তাও ক্ষতিকর। যে কারণে এর জন্য কিছুটা প্রকৃতির উপরতো নির্ভর করতেই হয়। তিনি বলেন, মৌসুমের একেবারে শুরু থেকেই তারা নতুন কুঁড়ি পেয়েছেন। এই জন্য দোয়া মিলাদ মাহফিল ও পূজার্চনার মধ্যদিয়ে তারা এ মৌসুমের কার্যক্রম শুরু করেছেন।’
শ্রীমঙ্গল জেরিন চা বাগানের জিএম সেলিম রেজা জানান, ‘পাতা তোলার শুভ সূচনায় করা হয়েছে দোয়া মিলাদ মাহফিল ও পূজার্চনা। বাগানে পাতা চয়নের কাজ শুরু হওয়ায় ফিরছে প্রাণচাঞ্চলতা। তিনি বলেন, বিগত বছর প্রকৃতিগত কারনে লক্ষমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮ থেকে ১০ পার্সেন্ট ঘাটতি ছিল। তবে এ বছর এই ঘাটতি পুরণ হবে বলে তিনি আশাবাদী। তিনি বলেন তার বাগানের শ্রমিকরা আন্তরিকতার সহিত কাজ করছে। ম্যানেজমেন্ট, স্টাফ ও শ্রমিক সবাই টিম ওয়ার্ক করে কাজ করলে নিশ্চই তারা লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি চা উৎপাদন করতে পারবেন। যা গত বছরের ঘাটতি পুষিয়ে নিতেও কাজ করবে।’
বাংলাদেশীয় চা সংসদ সিলেট অঞ্চলের ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান গোলাম মো. শিবলী জানান, ‘খরা চায়ের বড় একটি প্রতিবন্ধকতা। খরার সময় বৃষ্টি পাওয়া যায়না। এতে গাছ মরে যায় দেখা দেয় বিভিন্ন রোগবালাই।
আরও পড়ুন
জেলেদের চাল আত্মসাত: অভিযোগের তীর ইউপি প্রশাসক ও দুই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে
শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জের সাংবাদিকদের সম্মানে হাজী সেলিম ফাউন্ডেশন এর ইফতার মাহফিল ও মতবিনিময়
ঈদকে সামনে রেখে সুন্দরবনে বাড়তি নিরাপত্তা, বনজ সম্পদ রক্ষায় কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল