জেলা প্রতিনিধি, রংপুর (গঙ্গাচড়া):
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় গত কয়েক ধরে টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই অবস্থায় প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে চরাঞ্চলসহ নিমাঞ্চলে পানি প্রবেশ করায় এসব এলাকার পরিবারগুলো কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে গঙ্গাচড়ায় মর্নেয়া ইউনিয়নের আলফাজটারী, হাসানটারী, আনছারেরটারী, তালপট্টি, নরশিং, আলমারবাজার, শেখপাড়া, নিলারপাড়, আলশিয়ারমোড়, ভাংগাগড়া, লক্ষীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ, পশ্চিম ইচলি, পুর্ব ইচলী, বাগেরহাট, কেল্লারপাড়, চল্লিশাল, জয়রামওজা, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, চিলাখালচর, মটুকপুরচর, নোহালী ইউনিয়নের মিনারবাজার, নোহালীচর, বৈরাতী, গজঘণ্টা ইউনিয়নের আলালচর, ছালাপাকচর, গাওছোয়াসহ চরাঞ্চলের প্রায় ৫ হাজার পরিবার কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে।
পানিবন্দি মানুষজন উঁচু জায়গা, রাস্তার উপরে পলিথিন টাঙিয়ে গরু, ছাগল ও জিনিসপত্র নিয়ে কোন রকম আছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় চলাচলের রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। ভেঙে যাচ্ছে আবাদী জমি ও গাছপালা। ভেসেগেছে পুকুর, জলাশয় ও মৎস্য খামারের মাছ। পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে চাষকৃত বিভিন্ন ফসল। অপরদিকে শনিবার দিবাগত রাতে তিস্তার ফের বৃদ্ধি পেলে পানির প্রবল স্রোতে আলফাজটারী ও হাসানটারী হয়ে ভাংগাগড়ায় নির্মিত আশ্রয়ন ঘরের পাশে পাকা রাস্তার প্রায় ৫০ ফিট ভেঙে গেছে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় পানি মর্নেয়ার বিভিন্ন লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এছাড়া শেখপাড়া ব্রিজটি ভেঙে গেছে।
রাস্তা ও ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় পানি প্রবেশ করে নতুন করে আবার কিছু এলাকার ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। রাস্তা ও ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিছিন্ন হয়েছে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় বাড়ি ভেঙে গেছে আব্দুর রশিদের। হুমকিতে পড়েছে নুরনবী পুসু, তালেব, আলতাব, নুর ইসলাম, রমজান, মোজাফফর, লেয়াকত, মনতাজুল, বারীর বাড়ি ও আশ্রয়ন ঘর। অন্যদিকে এসকল এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার শতাধিক বাড়ি ভেঙে গেছে তিস্তায়। আব্দুর রশিদ বলেন, শনিবার রাতে পানির আঘাত হানে পাকা রাস্তাটিতে। এক পর্যায় সেটি ভেঙে যায়। আমরা বাঁশ, গাছ দিয়ে ভাঙন ঠেকার চেষ্টা করেও ভাঙন ঠেকাতে পারি নাই। আলশিয়ার মোড়ের শরিফুল বলেন, আমাদের এখানে পানি এসে রাস্তায় ধাক্কা দিলে দ্রুত আমারা বস্তায় মাটি ভরাট করে রক্ষা করি। তবে এখানকার প্রায় ৪’শ পরিবার পানিবন্দি হয়।
পানিবন্দি ও ভাঙন কবলিত ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানগণ জানান, এলাকা ঘুরে ঘুরে ভাঙন ও পানিবন্দি মানুষের খোঁজ খবর নিয়ে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে। এদিকে রাস্তা ও ব্রিজ ভাঙনের সংবাদ রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান রোববার দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। তিনি নৌকায় করে পানিবন্দি ও ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি পানিবন্দি মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য ও তাদের খাবারের ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া কথা জানান এবং পানি কমে যাওয়ার সাথে ভেঙে যাওয়া রাস্তা সংস্কার করা হবে বলে জানান। পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসকের সাথে ছিলেন রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কৃষি অফিসার, উপজেলা প্রকৌশলী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমানসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারি।
আরও পড়ুন
গাবতলীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাবেক এমপি লালু
ডেঙ্গুতে আরও ৪ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৫৮
পায়ের নূপুর দেখে মেয়ের লাশ শনাক্ত করলেন পরিবার