যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোস্যালে একটি পোস্টে ঘোষণা দিয়েছেন, সব তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে অভিবাসন “স্থায়ীভাবে স্থগিত” করা হবে। এছাড়া, যারা ইতিমধ্যেই নাগরিক হয়নি — তাদের জন্য ফেডারেল সুবিধা ও সরকারি ভর্তুকি বন্ধ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প লিখেছেন, “আমি সব তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধ করব, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের সিস্টেম পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করা যায়।” পাশাপাশি তিনি যুক্তি দিয়েছেন, যারা “আমাদের দেশের জন্য অর্থনৈতিক বা জাতিগত পর্যায়ে নেট অ্যাসেট নয়” বা “দেশপ্রেমে অযোগ্য” — তাদের বসবাসের অধিকার আর থাকা উচিত নয়। তিনি বলছেন, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং নাগরিক সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে।
গত বুধবার, হোয়াইট হাউসের পাশে ন্যাশনাল গার্ডের কয়েক সদস্যকে লক্ষ্য করে গুলির ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত এক আফগান নাগরিককে আটক করা হয়। এই ঘটনা মার্কিন রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ জাগায়। ঐ ঘটনায় ট্রাম্প তৎক্ষণাৎ ঘোষণা দেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ও কঠোর করণ জরুরি হয়ে পড়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান- এর।
কারা পড়তে পারে নতুন নীতির আওতায়
নতুন আবেদনকারী অভিবাসীরা — শরণার্থি, আশ্রয়প্রার্থী, পারিবারিক পুনর্মিলন অথবা কাজের জন্য যারা আবেদন করছেন — তারা নতুন নীতির পরিপ্রেক্ষিতে ভীষণ অনিশ্চয়তার মুখে পড়বেন। ইতিমধ্যেই যারা বসবাস করছেন (গ্রিন কার্ডধারী বা বসবাসকারি) — তাঁদের স্থায়ী বা অস্থায়ী ভিসা, বসবাসের অনুমতি ও নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া পুনরায় মূল্যায়নের ঝুঁকিতে পড়েছে।
“তৃতীয় বিশ্ব” হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এমন গরিব ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর নাগরিকরা — অর্থে ও সামাজিকভাবে প্রান্তিকভাবে থাকা দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য সুযোগ আরও সীমিত হবে। যেখানে শুধু “তৃতীয় বিশ্ব দেশ” বলেই বলা হয়েছে, সেখানে অফিসিয়াল কোনো দেশ-তালিকা দেওয়া হয়নি, এবং এই শব্দের সুনির্দিষ্ট অর্থ কী — তা ভিজ্যুয়াল বা নথিভুক্ত নয়। ফলে, নীতি বাস্তবায়নে কোন দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত হবে, তা এখনও অনিশ্চিত।
আইনগত জটিলতা ও প্রতিক্রিয়া
গত কয়েক বছরে ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন ভিসা নিয়ন্ত্রণ এবং অভিবাসন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তারই ধারাবাহিকতায় এই নতুন সিদ্ধান্ত। কিন্তু এমন নিষেধাজ্ঞাগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ও সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ এসেছে — যা আদালত বা কংগ্রেসের দৃষ্টিতে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (permanent pause)” এবং “তৃতীয় বিশ্বের দেশ” — এই শব্দদ্বয় আইনগতভাবে অস্পষ্ট, এবং নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন সংক্রান্ত আইনের সীমা, মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা (international obligations) ইত্যাদি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
আন্তর্জাতিক ও সামাজিক প্রভাব
এই সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় — বিশেষ করে মানবাধিকার সংস্থা, অভিবাসন-সংক্রান্ত সংস্থা ও শরণার্থী বিষয়ক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই অভিবাসন ও বৈচিত্র্য (diversity) ভিত্তিক সুযোগের জন্য অন্যতম গন্তব্য ছিল। এখন সেই সুযোগ সীমিত হলে, বিশ্বব্যাপী অভিবাসন প্রক্রিয়া, পরিবার পুনর্মিলন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা এবং বৈশ্বিক সহায়তা নীতি নতুন সংকটে পড়বে বলে দেখা দিচ্ছে।
অন্যদিকে, এমন কঠোর নীতি গৃহীত হলে, যুক্তরাষ্ট্রই — এর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য হারাতে পারে। বিশেষ করে গুণী বা দক্ষ অভিবাসীদের জন্য নতুন বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
১৯ দেশের নাগরিকদের গ্রিনকার্ড পুনরায় পর্যালোচনা
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন ১৯টি দেশের নাগরিকদের ইস্যু করা গ্রিন কার্ডগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করবে। নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবার প্রধান জোসেফ এডলো বলেছেন, উদ্বেগজনক দেশ থেকে আসা বিদেশির গ্রিন কার্ড কঠোরভাবে পর্যালোচনা করতে প্রেসিডেন্ট তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন।
কোন কোন দেশ সেই তালিকায় আছে- এমনটা জানতে চাইলে অভিবাসন পরিষেবা থেকে হোয়াইট হাউসের গত জুন মাসের এক ঘোষণার দিকে ইঙ্গিত করা হয়। ওই ঘোষণায় আফগানিস্তান, কিউবা, হাইতি, ইরান, সোমালিয়া ও ভেনেজুয়েলার নাম ছিল।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’: ৪ সমুদ্রবন্দরে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি, মাছ ধরতে যাওয়া নিষেধ
প্রথমবার সৌদিতে হবে নারী টি-২০ ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট
খালেদা জিয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা