January 31, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, January 30th, 2025, 2:40 pm

দাবানল ও আগ্নেয়গিরি আল্লাহর সতর্কবার্তা

অনলাইন ডেস্ক:
সাম্প্রতিক সময়ে বহুল আলোচিত বিষয় হলো আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে ঘটে যাওয়া বিভীষিকাময় দাবানল। মূলত এই দাবানল বা আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ আল্লাহর একটি নিদর্শন, যা তিনি তাঁর বান্দাদের সতর্ক করার জন্য পাঠিয়ে থাকেন। আল্লাহ কখনো কখনো নিদর্শন দেন শুধু ভয় দেখানোর জন্য; কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তার তাৎপর্য বোঝে না।

আকাশ ও পৃথিবীর কত নিদর্শন তাদের সামনে থেকে চলে যায়, অথচ তারা তা উপেক্ষা করে।
এসব নিদর্শন বা শাস্তি মানুষদের পাপাচারের দরুন আরো বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘যখন প্রবল কম্পনে প্রকম্পিত হবে পৃথিবী এবং পর্বতমালা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়বে, ফলে তা পর্যবসিত হবে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায়।’ (সুরা : আল ওয়াকিয়া, আয়াত : ৪-৬)সুরা ওয়াকিয়ার এই নিদর্শন আমাদের এক বিস্ময়কর বর্ণনার দিকে ইঙ্গিত করে, যা কিয়ামতের মহাপ্রলয়ের এক আভাস দেয়। কিয়ামতে বড় ভূমিকম্প হবে, যখন এক নিঃশব্দ ফুৎকারে পৃথিবী আর পর্বতগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে।
সেদিন পৃথিবী হবে ততটাই সমতল, যেন তার ওপর একটিও পাহাড় আর থাকবে না। আকাশ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে, এবং পর্বতগুলো এমনভাবে উড়ে যাবে, যেন সেগুলো মেঘের মতো বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ সেগুলোকে এমনভাবে উড়িয়ে দেবেন যে তারা পরিণত হবে অদৃশ্য মরীচিকায় এবং পৃথিবী হবে এক সমতল ভূমি, যেখানে কোনো পাহাড় বা গাছ থাকবে না, একেবারে মসৃণ।
ওই দিন আকাশ ফেটে যাবে, তার শক্তি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়বে, আর ক্রমে তা ভেঙে গুঁড়িয়ে ধোঁয়া ও গ্যাসে রূপান্তরিত হবে—আবার ফিরে যাবে তার প্রাথমিক অবস্থায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে মেঘমালাসহ, আর ফেরেশতাদের অবতীর্ণ করা হবে সারিবদ্ধভাবে। সেদিন প্রকৃত রাজত্ব হবে পরম দয়াময় আল্লাহর, আর সেই দিন হবে কাফিরদের জন্য ভয়াবহ দুঃসহ।’ (সুরা : আল-ফুরকান, আয়াত : ২৫-২৬)
তখন আকাশের ধোঁয়া মিশে যাবে পৃথিবীর ধূলিকণার সঙ্গে, আর সৃষ্টি হবে এমন এক পরিবেশ, যা ঘন কৃষ্ণ মেঘের অন্ধকারে ঢাকা পড়বে। পুরো পৃথিবী যেন গভীর অন্ধকারের চাদরে আবৃত হয়ে যাবে, অন্ধকারের স্তরে স্তরে মানুষ বেষ্টিত থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অপেক্ষা করো সেদিনের, যেদিন আকাশ থেকে সুস্পষ্ট ধোঁয়া আসবে, যা মানুষকে আচ্ছন্ন করবে।
এটি হবে এক কঠোর শাস্তি।’ (সুরা : আদ-দুখান, আয়াত : ১০-১১)
তাহলে ক্যালিফোর্নিয়ার এই দাবানল ও আগ্নেয়গিরি, এমনকি যদি তার ধোঁয়া পুরো পৃথিবী আচ্ছন্ন করে ফেলে, তা-ও কি তুলনীয় হবে কিয়ামতের সেই ভয়াবহ দিনের সঙ্গে? যখন পৃথিবী এক তীব্র কম্পনে কেঁপে উঠবে, তারপর আসবে আরো ভয়াবহ এক কম্পন। মানুষের হৃদয় ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে গলা পর্যন্ত উঠে আসবে। তারা ভেবে নেবে, কোনো ভয়াবহ বিপর্যয় এসে তাদের সর্বনাশ করবে। সেই দিন তাদের শাস্তি এমন হবে, যা তাদের সহ্যশক্তিকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেবে। যেন তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে গুঁড়া হয়ে গেছে, আর তারা নড়াচড়া করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। সেই দিন, পাপিষ্ঠদের মুখ হবে অন্ধকারে ভরা—তারা হবে ভীত, নিঃশেষ এবং কোনো মুক্তির আশা তাদের থাকবে না।

তবে কী পৃথিবীর ধূলিকণা আর আকাশের ধোঁয়ায় মানুষের সাময়িক কষ্টের তুলনা করা যায় সেই ভয়াবহ শাস্তির সঙ্গে, যা অপরাধী ও পাপীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে? যেদিন তাদের জন্য থাকবে ঝাঁজালো গরম বাতাস, ফুটন্ত পানি, আর এমন এক ছায়া, যা শুধু ঘন অন্ধকারের প্রতীক, কোনো শান্তি বা স্বস্তি নিয়ে আসবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ছুটে চলো সেই ছায়ার দিকে, যা তিনটি শাখায় বিভক্ত। কিন্তু তা কোনো ছায়া দেবে না, আর তা আগুনের তাপ থেকে রক্ষা করবে না, বরং তা নিক্ষেপ করবে অগ্নিকণা, যা প্রাসাদের মতো বড়, আর যা দেখে মনে হবে তা হলুদ উটের মতো।’ (সুরা : আল-মুরসালাত, আয়াত : ৩০-৩৩)

সেই শাস্তি অপরাধীদের চারপাশ থেকে আসবে ডান দিক থেকে, বাঁ দিক থেকে, এমনকি ওপর থেকেও। আর সেই দিন কাফির ও পাপীদের মুখ হবে ধুলায় আবৃত, পঙ্কিলতায় ঢাকা, যা ভীষণ কুৎসিত ও ভয়ংকর। হাশরের ময়দানে তা দেখে মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হবে, যেন তাদের মুখে রাতের গভীর অন্ধকার ঢেকে গেছে।

অন্যদিকে যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং সৎকাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাত। জান্নাতের তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে স্রোতস্বিনী, যেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। সেখানে তাদের জন্য আছে পবিত্র সঙ্গিনী এবং মহান প্রভুর পক্ষ থেকে ছায়ার নিয়ামত। জান্নাতের ছায়া এবং ফল কখনো শেষ হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুত্তাকিরা থাকবে ছায়ায় ও প্রবহমান ঝরনাবিশিষ্ট স্থানে এবং তাদের জন্য থাকবে পছন্দনীয় ফলমূল।’ (সুরা : আল-মুরসালাত, আয়াত : ৪১-৪২)

সেই জান্নাতে তাদের জন্য আছে সুশোভিত সিদর বৃক্ষ, স্তরে স্তরে সাজানো কলাগাছ, আর এমন ছায়া, যা চিরকাল বিস্তৃত। এই ছায়াগুলো একক নয়, বরং অসংখ্য বৃক্ষ ও উদ্যানের সমন্বয়ে দৃষ্টিসীমাজুড়ে বিস্তৃত। সেখানকার একটি বৃক্ষের ছায়ায় ঘোড়ার আরোহী শত বছর ধরে চললেও তার শেষ প্রান্তে পৌঁছাতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তুমি যদি সেখানে তাকাও, তাহলে দেখবে সীমাহীন আনন্দ ও এক বিশাল রাজ্য।’ (সুরা : আল-ইনসান/দাহর, আয়াত : ২০)

এখন আমাদের প্রশ্ন—আল্লাহর নির্দেশে আমরা কি সেই পাপীকে সমান করে ফেলব, যাকে নিক্ষেপ করা হবে জাহান্নামে, সেই মানুষের সঙ্গে, যে কিয়ামতের দিন নিরাপদে প্রবেশ করবে? আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আচ্ছা বলো তো, যে ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে সে উত্তম, না সেই ব্যক্তি যে কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে নির্ভয়ে-নিরাপদে?’ (সুরা : হা-মীম আস-সিজদাহ, আয়াত : ৪০)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে আমি কি তাদের জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের সমতুল্য গণ্য করব? নাকি আমি মুত্তাকিদের পাপাচারীদের সমতুল্য গণ্য করব?’ (সুরা : ছদ, আয়াত : ২৮)

তাহলে কিভাবে একজন রবের অনুগত অপরাধীর সমান হতে পারে? আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাহলে আমি কি অনুগতদের (মুসলিমদের) পাপীদের সমান গণ্য করব? তোমাদের কী হয়েছে, কেমন সিদ্ধান্ত দিচ্ছ!’ (সুরা : আল-কলম, আয়াত : ৩৫-৩৬)

ভয়াবহ দাবানাল, আগ্নেয়গিরি, ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প এবং সব দুর্যোগ আল্লাহ তাআলার নিদর্শনগুলোর অন্যতম। এসবের মাধ্যমে তিনি পাপিষ্ঠ ও নাফরমানদের কৃতকর্মের শাস্তি দেন, যাতে তারা সচেতন হয় কিংবা স্মরণ রাখে। তবে দুঃখের বিষয়, তাদের বেশির ভাগ শোনে না বা বোঝে না। তারা তো পশুর মতোই; বরং পথভ্রষ্টতায় আরো এগিয়ে।

সুতরাং এসব আলামত ও নিদর্শন দেখেও কি সেই সব ব্যক্তি সচেতন হবে না, যারা দিবানিশি পাপের সাগরে নিমজ্জিত। তবে এটা নিশ্চিত যে এ ধরনের মানুষেরা আল্লাহর এসব নিদর্শন দেখেও ফিরে আসবে না। তারা কোনোভাবেই বিরত হবে না, যতক্ষণ না তারা নিজের চোখে শাস্তির ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করে, আর তাদের জন্য প্রস্তুত সেই মর্মন্তুদ আজাব এসে তাদের গ্রাস করে; কিন্তু আল্লাহ তাআলা যখন তাদের ওপর প্রমাণ স্থাপন করেন, আর তারা তা-ও প্রত্যাখ্যান করে, তখন তিনি তাদের কঠোর শক্তিশালী শাস্তি দিয়ে পাকড়াও করেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব ভয়াবহ নিদর্শন থেকে হেফাজত করুন। আমিন।