October 4, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, July 5th, 2024, 6:39 pm

দাবার কোর্টেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া

মো: মছব্বির আলী:

জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতার ১২তম রাউন্ডের খেলায় ৫ জুলাই শুক্রবার গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবের বিপক্ষে ম্যাচ ছিল গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের। নির্ধারিত সময়েই শুরু হয় খেলা। তবে খেলার প্রায় ৩ ঘণ্টা পার হওয়ার পর হুট করেই অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া। হাসপাতালে নেয়ার পর দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলেও বাঁচানো যায়নি তাকে।

মৃত্যুকালে জিয়াউরের বয়স ছিল ৫০ বছর। জিয়ার ম্যাচের সময় তার স্ত্রী লাবণ্যও ফেডারেশনে ছিলেন। তার ছেলে তাহসিন তাজওয়ারও এবার জাতীয় দাবা খেলছেন। হুট করে এই দাবাড়ুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের দাবা অঙ্গনে।

পারিবারিকভাবে জিয়াউর রহমান দাবাড়ু। তার বাবা পয়গাম উদ্দিন আহমেদও ছিলেনে একজন দাবাড়ু। তার পথ ধরেই স্কুল জীবন থেকে দাবার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন জিয়া। তার ছেলে তাহসিন তাজওয়ারও পেশাগতভাবে দাবাড়ু। ২০২২ সালে ৪৪তম দাবা অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন তাজওয়ার।

দাবাড়ু পরিবারে জন্ম, জিয়াউর রহমানও নিজের ধ্যান-জ্ঞান বানিয়েছিলেন দাবাকেই। বাবা পয়গাম উদ্দিন আহমেদের পথ ধরেই তিনি দাবায় এসেছিলেন। হয়েছেন গ্র্যান্ডমাস্টার, এরপর ছেলে তাহসিন তাজওয়ার জিয়াও একই পথে হেঁটে হয়েছেন ফিদে মাস্টার। যে দাবাকে ধ্যান-জ্ঞান বানিয়েছিলেন, সেই দাবা খেলতে খেলতেই জিয়া মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, জিয়া হার্ট অ্যাটাক করেছেন। এরপর সন্ধ্যায় হাসপাতালে নেওয়া হলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া। এর আগে বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে বোর্ড থেকে মাথা ঘুরে পড়ে যান জিয়া। পাঁচ মিনিটের মধ্যে দাবা ফেডারেশনের তৃতীয় তলা থেকে নামিয়ে তাকে গ্র্যান্ডমাস্টার রাজীবের গাড়িতে উঠানো হয়। দশ মিনিটের মধ্যেই ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে পৌঁছায় গাড়ি। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তার পালস পাননি। সাধারণত ৫ মিনিট অপেক্ষা করা হলেও জিয়ার জন্য চিকিৎসকরা ২০ মিনিট চেষ্টা করেছেন। চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে আর নেই বললেও, তার স্ত্রী তাসমিন সুলতানা লাবণ্য অশান্ত হয়ে পড়েন ও অন্য হাসপাতালে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। ফেডারেশন ও দাবাড়ুরা তাকে কয়েক দফা বোঝান। এক ঘণ্টা পর তিনি ও তার পরিবার আশ্বস্ত হলে ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। শুক্রবার পল্টনের দাবা ফেডারেশনে জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের ১২তম রাউন্ড চলছিল। গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবের বিপক্ষে ভালো পজিশনেই ছিলেন আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। হঠাৎ-ই দাবা ফেডারেশনের রুমে দুই দাবাড়ু শাকিল ও নাইম হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে এসে জানান, জিয়া ভাই মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। সবাই ধরাধরি করে নিচে নামিয়ে নয় মিনিটের ব্যবধানে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মারা গেছেন জিয়া। সেই খবরে হাসপাতালে অনেক উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করা স্ত্রী লাবণ্য, সন্তান তাহসিন তাজওয়ারসহ অন্যান্য তারকা দাবাড়ুরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালের ১ মে জন্ম নেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫০ বছর। ২০০৫ সালে তিনি বাংলাদেশি দাবাড়ুদের মধ্যে সর্বোচ্চ ফিদে রেটিং (২৫৭০) অর্জন করেছিলেন। গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া ১৯৯৩ সালে আন্তর্জাতিক মাস্টার (আইএম) খেতাব এবং ২০০২ সালে জিএম খেতাব অর্জন করেন। তার খেলার ধরন ছিল শক্ত অবস্থানগত। ১৯৮৮ সালে প্রথমবার জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হন জিয়াউর রহমান। টুর্নামেন্টে রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নও তিনি। ২০২২ সালে, তিনি তার ছেলে তাহসিন তাজওয়ার জিয়ার সাথে ৪৪তম দাবা অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ইতিহাস গড়েন। শুধু জিয়ার স্ত্রীই নন, এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তার সহখেলোয়াড়দের অনেকেই। জিয়ার অকালমৃত্যুতে দাবাসহ বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনেই নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার আকস্মিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও তার শোকাহত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন এসোসিয়েসন অব চেস্ প্লেয়ার্স বাংলাদেশ (এসিপিবি)র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো: এনায়েত হোসেন, সাথারন সম্পাদক মো: শওকত বিন ওসমান শাওন।