July 12, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, July 10th, 2025, 6:32 pm

দুই কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় দালালদের দৌরাত্ম: আশুলিয়া ভূমি অফিসে সেবাপ্রত্যাশীরা জিম্মি

এস এম মনিরুল ইসলাম,সাভার

ঢাকার অদূরে আশুলিয়া ভূমি অফিসে সেবাপ্রত্যাশীরা দালালদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে আসা সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত দালালদের সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হচ্ছেন এবং অতিরিক্ত অর্থ গুনতে বাধ্য হচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

এই ভূমি অফিসে কর্মচারীর চেয়ে বাইরের দালালের সংখ্যাই এখন বেশি। এসব দালাল সরকারি কর্মচারীর মতো বিভিন্ন রেকর্ডপত্র নাড়াচাড়া করে। দেখে বোঝার উপায় নেই এরা বাইরের লোক। অভিযোগ রয়েছে এসব দালাল ভুল ও মিথ্যা তথ্য সংযোজন করে পুনরায় তা ঠিক করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ভূমি মালিকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা।
সরেজমিন ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে,ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অন্তত ৮ জন দালাল সক্রিয় রয়েছে। এরা নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে এ এলাকার ভূমি সংক্রান্ত কাজকর্ম। এসব দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, ভূমি অফিসের ভেতরে ও বাইরে সক্রিয় দালালচক্রের জহিরুল ইসলাম জহির, রেজাউল করিম,ইকবাল,সাইফুল, শাহিন,আকাশ, ইয়াসিন ও সেলিম জমির নামজারি, খারিজ, পর্চা তোলা, খাজনা পরিশোধসহ বিভিন্ন কাজে আগতদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করে নিজেদের কব্জায় নিয়ে নিচ্ছে। তবে এসব দালাল চক্রের মূলহোতা ভারপ্রাপ্ত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. জয়দুল হোসেন ও উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম।

অভিযোগ রয়েছে, দালালদের মাধ্যমে কাজ না করালে মাসের পর মাস ঘুরতে হয়, এমনকি হয়রানির শিকারও হতে হয়। এতে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে, তেমনি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।

সেবা গ্রহীতা ওমর আলী বলেন, “আমার জমির নামজারির জন্য আবেদন করে দালাল ছাড়া কোনো কাজ করাতে পারছিলাম না। অফিসের কর্মকর্তারা সরাসরি কথা বলতে চান না, কয়েক দিন এসেছি। তারা রেজাউল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে বলেন। কিন্তু রেজাউল অঙ্গভঙ্গিতে টাকা চায় বলে জানান তিনি।

আরেক ভুক্তভোগী মেহেদী হাসান জুনায়েদ জানান, আমি খাজনা দিতে এসেছিলাম। একটা দিয়েছি, কিন্তু আরেকটা দিবো। তবে যেই লোক খাজনা নিচ্ছিলো সেই লোক সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে দৌড়ে পালিয়েছে বলে জানান তিনি।

অফিস কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন সেবা প্রত্যাশীদের অভিযোগ, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা জয়দুল হোসেন ও সহকারী কর্মকর্তা নজরুলের যোগসাজশে এই দালালচক্র সক্রিয় রয়েছে। দালালদের সঙ্গে তাদের অলিখিত বোঝাপড়া রয়েছে, যার ফলে সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে দালালদের শরণাপন্ন হচ্ছেন। ভূমি অফিসে দালালদের অবাধ বিচরণ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। এতে দালালদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আশুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত সহকারী কর্মকর্তা মোঃ জয়দুল হোসেন বলেন, আমাদের এখানে দালালরা কেউ কাজ করে না। আমি এবিষয়ে কিছু বলতে পারবো না বলে জানান তিনি।

প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা

আশুলিয়ার সচেতন মহল ও ভুক্তভোগীরা এই দালালচক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা বলছেন, ভূমি অফিসের সেবাকে দালালমুক্ত করে সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। অন্যথায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ভূমি অফিসের এই বেহাল দশা একটি বড় অন্তরায় হয়ে থাকবে।

আশুলিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া আক্তার বলেন, এর আগেও আশুলিয়ার রাজস্বের আওতাধীন যেসকল ভূমি অফিস আছে, সেগুলোতে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।