নিজস্ব প্রতিবেদক:
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ পেয়েছেন মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবের পদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করেছেন।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাকে দুদকের নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর আগে তাকে কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়। আবদুল মোমেন আগামী পাঁচ বছর এ দায়িত্বে থাকবেন।
একই সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদকে দুদকের নতুন দুই কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আবদুল মোমেনকে দুদক চেয়ারম্যান হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির বেতন, ভাতা, অন্যান্য সুবিধা ও পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে। দুই কমিশনারের বেতন, ভাতা, অন্যান্য সুবিধা ও পদমর্যাদা হবে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতির সমান।
‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪’ অনুযায়ী, তিনজন কমিশনারের সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হয়। তাদের মধ্য থেকে একজন হন চেয়ারম্যান। কমিশনারদের মেয়াদ পাঁচ বছর।
গত ২৯ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ও কমিশনার (অনুসন্ধান) মোছা. আছিয়া খাতুন পদত্যাগ করেন। তারা সবাই আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ১০ নভেম্বর দুদকের নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে সুপারিশ দিতে বাছাই কমিটি গঠন করে সরকার। পাঁচ সদস্যের এ কমিটির সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হক। কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম ও মো. মাহবুব হোসেন (সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব)।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী বাছাই কমিটি কমিশনার নিয়োগে সুপারিশ দিতে উপস্থিত সদস্যদের কমপক্ষে তিনজনের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে কমিশনারের প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে দুজন ব্যক্তির নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠান। তাদের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি এ নিয়োগ দিয়েছেন।
দুদকের নতুন চেয়ারম্যান আবদুল মোমেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮২ বিশেষ ব্যাচের একজন সদস্য। তিনি ১৯৮২ সালে সহকারী কমিশনার হিসেবে বগুড়ার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে মাঠ প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় প্রশাসনের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।
আবদুল মোমেন ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রধানমন্ত্রীর (খালেদা জিয়ার) সহকারী একান্ত সচিব ও পরিচালক, বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক, কক্সবাজার জেলায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের পরিচালক, ঢাকার জেলা প্রশাসক, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক, বিআরটিএর চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বিমানের এমডি ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
যুগ্ম সচিব থাকার সময় ২০০৯ সালে আবদুল মোমেনকে ওএসডি করে আওয়ামী লীগ সরকার। পরে ২০১৩ সালের ৬ জুন তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৭ আগস্ট আবদুল মোমেনকে দুই বছরের চুক্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাকে সুরক্ষা সেবা বিভাগের দায়িত্বও দেওয়া হয়।
দুদক চেয়ারম্যান পদে যোগ দিতে গত ৮ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন আবদুল মোমেন। পরে মঙ্গলবার তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
আরও পড়ুন
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদঘাটনে তদন্ত কমিটি
অগ্নিকান্ডে মিঠাপুকুরের নয়ন একমাত্র উপার্জনকারীর মৃত্যুতে দিশেহারা পরিবার
ডেঙ্গুতে এক দিনে মারা গেছেন আরও ৪ জন