July 25, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, July 24th, 2025, 1:34 am

দুর্নীতির টাকায় বেনজীর ও তার পরিবারের লাগামহীন বিলাসিতা

বেনজীর আহমদ, তার স্ত্রী জিশান মীর্জা, বড় মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর ও ছোট মেয়ে তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীর/ ছবি: সংগৃহীত

 

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের ব্যবহৃত জিনিসপত্র গুলশানের বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট থেকে নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত এ লক্ষ্যে একটি নিলাম কমিটি গঠন করে দিয়েছেন।

কয়েক দিনের মধ্যে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিলামে তোলার ব্যবস্থা করা হবে বলে গত সোমবার কমিটির এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। কমিটি নিলামপ্রক্রিয়ার মানদণ্ড ঠিক করেছে এবং নিলামপ্রক্রিয়া আয়োজনের জন্য ব্যবস্থা নিয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইতিমধ্যে সম্পদের জব্দ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় সম্পদবিবরণী তৈরি করতে গিয়ে নিলাম কমিটির সদস্যরা অবাক হয়েছেন। তারা বিশ্বাসই করতে পারেননি, একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মহোৎসব করবেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতিমধ্যে শতাধিক কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বেনজীরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ/ ছবি:সংগৃহীত

কমিটির একজন সদস্য বাসসকে জানান, ফ্ল্যাটের ব্যবহৃত জিনিসপত্র তালিকা করার সময় মনে হয়েছে, আমরা মার্কোস ও ইমেলদা মার্কোসের সম্পদের তালিকা তৈরি করছি। আশির দশকে দুনিয়াকাঁপানো মার্কোস দম্পতির কথা মনে পড়ে গেল। ইমেলদা মার্কোসের জুতা, ব্যবহৃত পোশাক, অন্য সামগ্রী ও প্রসাধনের মুখরোচক সংবাদ ওই সময় আলোচিত ছিল। এ যেন বেনজীর দম্পতির সঙ্গে ফিলিপাইনের মার্কোস দম্পতির রাশি জাতকের মিল!

ওই সদস্য আরও জানান, বেনজীরের এই আলিশান ফ্ল্যাটে জব্দ তালিকার ২৪৬টি আইটেমের মধ্যে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করলেই পুরো চিত্র পাওয়া যাবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শার্ট ১২২টি, প্যান্ট ২৬৬টি, ৩০ টি ব্লেজার, আটটি স্যুট, টি-শার্ট ৭২২টি, পাঞ্জাবি ২২৪টি, পায়জামা ৪৭টি, স্যান্ডেল ৮৮ জোড়া, কেডস ৩৫ জোড়া, জুতা ৩৮ জোড়া, শাড়ি ৪৯৪টি, থ্রিপিস ২৫০ সেট, সালোয়ার-কামিজ ৪৯৬টি, ব্লাউজ ৬৫টি, জামা ২১২টি, জ্যাকেট ৫৬টি, বেডশিট ১০৯টি, লেডিস ভ্যানিটি ব্যাগ ৭৫টি, লেডিস টপস ৬২২টি, পুরুষের সোয়েটার ১১টি, লেডিস সোয়েটার ৩৪টি, লেডিস প্যান্ট ৩৫৫টি, লেডিস টি-শার্ট ২৮টি, নাইট ড্রেস ৫৮টি, ওড়না ৩৪৭টি, শাল-চাদর ৮৯টি, শীতের জামা ১৩২টি, লেহেঙ্গা ১৬টি, সানগ্লাস ৩৪টি, ট্রাউজার ৬৭টি।

গুলশানের র‌্যানকন টাওয়ারে চারটি আলিশান ফ্ল্যাট এক করে ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট তৈরি করেন বেনজীর দম্পতি/ ছবি: সংগৃহীত

সেন্ট-পারফিউম ছাড়াও ড্রয়িং রুম, বৈঠকখানা, থিয়েটার রুম, করিডোর বৈঠকখানা, কিচেন রুম, মাস্টার বেডসহ অন্য বেডরুমের ব্যবহৃত জিনিসপত্র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

গুলশানের র‌্যানকন টাওয়ারে চারটি আলিশান ফ্ল্যাট এক করে ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট তৈরি করেন বেনজীর দম্পতি। যেখানে সুইমিংপুল, মিনি থিয়েটার রুম, অতিথি বিনোদন বৈঠকখানাসহ আধুনিক আভিজাত্য সুযোগ-সুবিধা ছিল।

দুদকের অনুসন্ধান টিম জানায়, পুরো ফ্ল্যাটে ১৯টি ফ্রিজ রয়েছে। এসি রয়েছে সব মিলিয়ে ১০০ টন, সুইমিংপুলে ব্যবহৃত আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী।

তবে, ফ্ল্যাটের খাট, ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিল, সোফা, চেয়ার, আলমারি, ওয়্যারড্রোবসহ মূল্যবান সামগ্রী নিলামবহির্ভূত রাখা হয়েছে। এগুলোর ব্যাপারে পরে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুর্নীতির মহোৎসব করেছেন আইজিপি বেনজীর আহমদ/ ছবি: সংগৃহীত

আদালত কর্তৃক গঠিত নিলাম কমিটিতে দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের পরিচালককে সভাপতি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের একজন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিনিধি, বস্ত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের একজন প্রতিনিধি এবং ইস্পাত প্রকৌশল অধিদপ্তরের চেয়ারম্যানের একজন প্রতিনিধি। দুদকের উপপরিচালক (সম্পদ ব্যবস্থাপনা) সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।

আওয়ামী লীগ সরকার দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগেই ২০২৪ সালের ৪ মে মিথ্যা ঘোষণায় নতুন পাসপোর্ট বানিয়ে বেনজীর আহমদ তার স্ত্রী কন্যাদের নিয়ে গোপনে দেশ ছাড়েন। দুদকের তদন্ত টিম ও নিলাম কমিটির সদস্যদের মতে বেনজীর দম্পতি গোপনে পালিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাগ ভর্তি স্বর্ণালংকার, টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে গেছেন। এরই মধ্যে দুদক ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাচারের অভিযোগে বেনজীরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

আইজিপি বেনজীর আহমদ, তার স্ত্রী জিশান মীর্জা/ ছবি:সংগৃহীত

বেনজীরের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও পাসপোর্ট জালিয়াতির মামলা ছাড়াও তার স্ত্রী জিশান মীর্জা, বড় কন্যা ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর ও ছোট মেয়ে তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে ৭৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন পৃথক চারটি মামলা করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর এসব মামলা দায়ের করে দুদক। এর মধ্যে বেনজীর আহমদ ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, ২ কোটি ৬২ লাখ টাকার তথ্য গোপন, স্ত্রী জীশান মির্জা ৩১ কোটি ৬৯ লাখ সম্পদ অর্জন, ১৬ কোটি ১ লাখ টাকার তথ্য গোপন, বড় মেয়ে ফারহীন ৮ কোটি ৭৫ লাখ এবং ছোট মেয়ে তাহসীন ৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপন করেছেন।

এনএনবাংলা/আরএম