নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের খনিজ সম্পদ উত্তোলনে সরকারের বিনিয়োগ খুবই কম। দেশে বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদ মজুদ থাকলেও এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সরকারের তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) দেশে মজুদ খনিজ সম্পদের বাজারমূল্য নিরূপণ করেছে। প্রাকৃতিকভাবে দেশে মজুদ খনিজ সম্পদের মূল্য ২ দশমিক ২৬ ট্রিলিয়ন (২ লাখ ২৬ হাজার কোটি) ডলারেরও বেশি। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ ২৪১ দশমিক ৯৭ ট্রিলিয়ন (২ কোটি ৪১ লাখ ৯৭ হাজার ৩০০ কোটি) টাকা। তবে এ হিসাবে দেশে মজুদ প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য ধরা হয়নি। তবে দেশের অভ্যন্তরের খনিজ সম্পদের প্রকৃত মজুদ, প্রমাণিত মজুদ ও রিজার্ভের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো পরীক্ষা করা হয়নি। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় উৎস হতে পারে দেশের খনিজ সম্পদ। দেশে মজুদ খনিজ সম্পদের মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাসই বড় পরিসরে উত্তোলন করা হচ্ছে। দেশে আরো গ্যাস আছে এবং তা উত্তোলন করা যাবে। তবে এ বিষয়ে সরকারের যথাযথ উদ্যোগ ও বিনিয়োগ নেই। কয়লা উত্তোলনেও সরকারের বড় ধরনের উদ্যোগ নেই। উত্তরবঙ্গে পাঁচটি কয়লা খনি আছে। এ ছাড়া জয়পুরহাটে মাটির নিচে বিশাল আকারে চুনাপাথর থাকরেও তা উত্তোলন করা হয় না। তাছাড়া দেশের কক্সবাজার, ব্রহ্মপুত্র নদে খনিজ বালি আছে। বড় নদীগুলোয়ও আছে মূল্যবান খনিজ বালি। সেটিও উত্তোলনে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেই। তবে সাদামাটি স্থানীয়ভাবে কিছুটা উত্তোলন হচ্ছে। সঙ্গে কিছু কাচবালিও উত্তোলন হচ্ছে। তবে তা সামান্য পরিসরে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সমুদ্র ও স্থলভাগে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ মজুদ রয়েছে। বিশেষত গ্যাস ও কয়লার মজুদের বিষয়টি প্রমাণিত। এসব সম্পদ উত্তোলনে যথাযথ অনুসন্ধান ও বিনিয়োগ হয়নি। যে কারণে বছরের পর বছর গ্যাসের সরবরাহ কমার বিপরীতে আমদানিনির্ভরতা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে দেশে আবিষ্কৃত খনিজ সম্পদের যে আর্থিক মূল্যমান নিরূপণ করা হয়েছে, তা মূলত মজুদ থেকে পাওয়া ধারণাগত একটি সংখ্যা। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা সম্ভব হলে খনিজ সম্পদের পরিমাণ যেমন বাড়বে, তেমনি এ সম্পদের যথাযথ আকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি বাজারমূল্য অনুযায়ী সম্পদের প্রকৃত আর্থিক মূল্যমান নিরূপণ করা সম্ভব হবে। দেশে আবিষ্কৃত আট ধরনের খনিজ সম্পদের আর্থিক বাজারমূল্য জিএসবি নিরূপণ করেছে ২ লাখ ২৬ হাজার ১৪০ কোটি ডলার। এর মধ্যে কয়লা রয়েছে ৭২৫ কোটি টনের বেশি। বাজারমূল্য টনপ্রতি ১৭৫ ডলার হিসাব করলে এ পরিমাণ কয়লার দাম দাঁড়ায় ১ লাখ ২৬ হাজার ৮৯০ কোটি ডলারে। এ ছাড়া পিট কয়লার সম্ভাব্য মজুদ রয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টন। প্রতি টন ৬০ ডলার হিসেবে এর মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৩ হাজার ৫৯০ কোটি ডলারে (৩৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন)। চুনাপাথর রয়েছে ২ হাজার ৫২৭ কোটি টন। টনপ্রতি ৩০ ডলার হিসেবে এ অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৫ হাজার ৮১০ কোটি ডলার। কঠিন শিলা আছে ২০ কোটি ১০ লাখ টন, যার আর্থিক মূল্যমান ৫৪২ কোটি ডলার। ২৩ কোটি টন সাদামাটির মূল্য ২ হাজার ৯৯০ কোটি ডলার। কাচবালি আছে ৫১১ কোটি ৭০ লাখ টন, যার মূল্য ৬ হাজার ১৪০ কোটি ডলার। ২২০ কোটি টন নুড়িপাথরের মূল্যমান ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। এবং সাড়ে ৬২ কোটি টন লৌহের মূল্য ৬ হাজার ৮৮০ কোটি ডলার।
সূত্র আরো জানায়, দেশে জয়পুরহাটের জামালগঞ্জে ১০৫ কোটি ৩০ লাখ টন, দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় ১০ কোটি ২০ লাখ, রংপুরের খালাসপীরে ১৪ কোটি ৩০ লাখ এবং দিনাজপুরের দীঘিপাড়ায় ৪০ কোটি ২০ লাখ টন কয়লার মজুদ রয়েছে। এ ছাড়া পিট কয়লা মজুদ রয়েছে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে ২৮ কোটি ২০ লাখ টন, গোপালগঞ্জের বাঘিয়া-চান্দা বিলে ১৫ কোটি, সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে সাড়ে ৭ কোটি, শাল্লায় ৫ কোটি ২০ লাখ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে ৩ কোটি ২০ লাখ ও খুলনার কলামৌজায় ৮০ খাল টন। দেশে সবচেয়ে বেশি চুনাপাথর মজুদ রয়েছে উত্তরের জেলা নওগাঁয়। জেলায় তাজপুর, বদলগাছি, ভগবানপুরে আড়াই হাজার কোটি টনের বেশি চুনাপাথর মজুদ রয়েছে। এ ছাড়া জয়পুরহাট জেলার জয়পুরহাট সদরে ১০, পাঁচবিবি উপজেলায় ৫ কোটি ৯০ লাখ এবং সুনামগঞ্জের বাঘালীবাজারে ১ কোটি ৭০ লাখ, টেকেরঘাটে ১ কোটি ২৯ লাখ ও লালঘাটে ১ কোটি ২৯ লাখ টন চুনাপাথরের মজুদ রয়েছে। খনিজ সম্পদ হিসেবে মূল্যবান সাদামাটি রয়েছে টাঙ্গাইলের মধুপুরে সাড়ে ১২ কোটি টন, হবিগঞ্জের মাধবপুরে ৬ কোটি ৮০ লাখ টন, নেত্রকোনার বিজয়পুরে আড়াই কোটি টন। এ ছাড়া দেশের আরো কয়েকটি জেলায় সাদামাটির মজুদ চিহ্নিত হলেও এর পরিমাণ নিয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি জিএসবি। পাশাপাশি দেশের ছয় জেলায় বিপুল পরিমাণ নুড়িপাথর মজুদ রয়েছে। নুড়িপাথরের মোট মজুদের পরিমাণ ২২০ কোটি টন। দিনাজপুরের হাকিমপুরে আকরিক লৌহ মজুদ রয়েছে ৬৫ কোটি টন। এ ছাড়া কাচবালির মজুদ রয়েছে ৩ হাজার ২০০ কোটি টনের বেশি।
এদিকে এ বিষয়ে জিএসবির মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন জানান, জিএসবির প্রধান কাজই খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান করা। যেসব খনিজ সম্পদ আবিষ্কৃত হয়েছে তার অনেকগুলোই এখনো অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে। আমরা এসব সম্পদের একটি আনুমানিক মূল্য নির্ধারণ করেছি। এসব খনিজ সম্পদের ল্যান্ড সার্ভে বা ফিজিবিলিটি স্টাডি হলে পরিপূর্ণ ধারণা পাওয়া যাবে। তখন অর্থের পরিমাণ আরো বাড়তে বা কমতেও পারে।
আরও পড়ুন
অন্যতম দর্শনীয় স্থান মহামায়া লেক
টেলিযোগাযোগ খাতে অস্থিরতার শঙ্কা, বাড়বে ইন্টারনেটের দাম
মা-নবজাতকের মৃত্যু: ৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ