নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিদ্যমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশের নৌবাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে গতবারের তুলনায় এবার আমদানি ও কনটেইনার আসার পরিমাণ কমেছে। জাহাজ আসার হার গত বছরের তুলনায় এবার বাড়লেও বন্দর ও কাস্টমসের আয় কমেছে। ফলে ১৯ বেসরকারি আইসিডিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সর্বশেষ গত চার মাসেই ১৭০ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে বেসরকারি ওই ডিপোগুলো। অথচ ওসব আইসিডিতেই রপ্তানি পণ্য শুল্কায়নের শতভাগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন এবং ৩৭ ধরনের আমদানি পণ্য খালাস করা হয়। বেসরকারি আইসিডি এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর গতবার ৩২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডেল করলেও এবার তা স্পর্শ করতে পারেনি। মূলত আমদানি কার্যক্রমে বিধিনিষেধ, ডলারের দাম ওঠানামা করা ও আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতার প্রভাব দেশের নৌবাণিজ্যে পড়েছে। বিগত এক যুগ ধরে নৌবাণিজ্য ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকলেও এবার তাতে হোঁচট খেয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে এবার ব্যতিক্রম চিত্র দেখা যাচ্ছে। গত বছর বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০ ফুট দীর্ঘ ৩২ লাখ ১৪ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডেল করলেও এবার ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষ সাড়ে ৩১ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডেল করেছে। গত বছর ১১ কোটি ৬৬ লাখ টন কার্গো পণ্য হ্যান্ডেল হয়েছে। আর গত ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্গো পণ্য ওঠানামা হয়েছে ১১ লাখ ৮০ টন। তবে চট্টগ্রাম বন্দরে এবার জাহাজ আসার পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ৪ হাজার ২০৯টি জাহাজ এলেও গত ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ৩০০টি জাহাজ বন্দরে এসেছে। কিন্তু জাহাজ আসার পরিমাণ বাড়লেও বন্দরের আয় কিছুটা কম হবে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে অবস্থিত বেসরকারি আইসিডিগুলো গত ৪ মাসে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে। দেশে পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি কমে গেছে। ফলে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের উৎপাদনও কমে গেছে। গত চার মাসে আমদানি ও রপ্তানি প্রায় ২০ শতাংশ কমে গেছে। আর আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টমসেও রাজস্ব আয়ে বড় প্রভাব পড়েছে। ক্রমাগত কমেছে রাজস্ব আয়। গত আগস্ট মাসে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে কাস্টমসের রাজস্ব আয় ছিল ৫ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে ওই আয় কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ অক্টোবর মাসে কাস্টমসের আয় হয় ৪ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। আগস্ট থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত রাজস্ব আয় কমেছে ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। ওই ধারা নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসেও অব্যাহত ছিল। ফলে কাস্টমসের আয়ও এবার কমার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে দেশের নৌবাণিজ্যের বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, এবার বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল ছিল। যুদ্ধের প্রভাবে অনেক দেশের রিজার্ভ এলোমেলো হয়ে গেছে। ডলারের দামও ব্যাপক হারে ওঠানামা করেছে। বাংলাদেশেও ওসবের প্রভাব ছিল। সেজন্যই এবার নৌবাণিজ্যের পরিমাণ আগের তুলনায় কিছুটা কম।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান জানান, প্রতি মাসে আইসিডিগুলো গড়ে ১৭০ থেকে ১৭৫ কোটি টাকা লাভ করে। কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে উল্টো ১৭০ কোটি টাকা লোকসান করেছে। ডলার সংকটে ঋণপত্র খোলা কমে যাওয়া, বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা, আন্তর্জাতিক বাজারে যুদ্ধের প্রভাব পড়া ও দেশে শিল্পকারখানায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় এবার বছরের শেষদিকে পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে ভাঁটা পড়েছে। আর তার প্রভাবে ডিপোগুলোতেও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ভাঁটা পড়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমে এবার গতি কিছুটা কম ছিল। এক যুগ ধরে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিবছরই নিজেদের রেকর্ড নিজেরাই ভাঙতো। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম হচ্ছে। গতবার ৩২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডেল করলেও এবার আর তা হয়নি। তবে জাহাজ আসার পরিমাণ কিছুটা বাড়লেও সার্বিকভাবে বাণিজ্যের পরিমাণ আগের তুলনায় এবার কম ছিল।
আরও পড়ুন
রেমিট্যান্স আহরণে ‘গোল্ড অ্যাওয়ার্ড’ পেলো ইসলামী ব্যাংক
চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার দিনে সৃষ্ট যানজটে বিএনপির দুঃখ প্রকাশ
মাসুদা ভাট্টির বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের প্রতিবেদন