ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির সংগঠক শরীফ ওসমান হাদির মরদেহ বহনকারী ফ্লাইটটি সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৩ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৩৮৫ ফ্লাইটটি সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে।
বিমানের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, হাদির মরদেহ বহনকারী ফ্লাইটটি আজ সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। বিমানবন্দরের আট নম্বর গেট দিয়ে মরদেহের কফিন বের করা হবে। এরপর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নেওয়া হবে।
দুপুরে ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে জানানো হয়, সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বিমানটি ঢাকায় পৌঁছাবে। পোস্টে আরও বলা হয়, ‘আমাদের জুলাই জজবার প্রাণ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অকুতোভয় বীরকে গ্রহণ করতে সবাই এয়ারপোর্ট থেকে শাহবাগগামী রাস্তার দুই পাশে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান নেবেন। সেখান থেকে শহীদ ওসমান হাদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে আনা হবে।’
গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শরীফ ওসমান হাদি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সাত দিন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। হাদি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন।
হাদির মৃত্যুর পর আগামীকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ ঘোষণা দেন। ভাষণে তিনি বলেন, শহীদ হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে।
ইনকিলাব মঞ্চ জানায়, আজ শুক্রবার বাদ জুমা দেশের সব মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে হাদির মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়েছে। একই সঙ্গে সহিংসতা পরিহার করে নিজ নিজ এলাকায় খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আগামীকাল শনিবার বাদ জোহর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে দাফনের স্থান বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি।
হাদির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, সাবেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনও শোক জানিয়েছে।
এনসিপি স্বাস্থ্য সেলের প্রধান ও হাদির চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ডা. আহাদ এক ভিডিও বার্তায় মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে আমরা খবর পেয়েছি, হাদি ভাই পরপারে চলে গেছেন।’
এর আগে বুধবার সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে হাদিকে দেখতে যান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান। পরে তিনি ফোনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে হাদির শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানান।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান। পরে তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এবং ১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়।
সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা যায়, মোটরসাইকেলে আসা দুজন হামলাকারী গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনায় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ গুলি চালান এবং আলমগীর হোসেন ওরফে আলমগীর শেখ মোটরসাইকেল চালান।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই তারা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে দেশত্যাগ করেন।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
কবি নজরুলের পাশে শহীদ ওসমান হাদিকে সমাহিত করা হবে
শনিবার ওসমান হাদির জানাজা সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়
আজ নয়, কাল ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে নেওয়া হবে শহীদ ওসমান হাদির মরদেহ