নিজস্ব প্রতিবেদক:
ব্যাংক খাতে গত দেড় যুগে বা ১৮ বছরে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। তার মধ্যে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ৯৭৪ কোটি টাকা নতুন করে অবলোপন করা হয়েছে। আর ওই সময় পুরোনো এবং নতুন অবলোপন থেকে আদায় হয়েছে মাত্র ৪৭২ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো মূলত হিসাবের খাতা পরিষ্কার দেখাতেই ওই পথে হাঁটছে। তাতে সাময়িক খেলাপি ঋণ কম দেখালেও ঠিকই প্রকৃত খেলাপি বাড়ছে। অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০০৩ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে ৫৭ হাজার ৯৭৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। যা ব্যাংকিং খাতের বর্তমান যে পরিমাণ খেলাপি রয়েছে তার ৫৭.৩১ শতাংশ। ওই সময়ে অবলোপন স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৬০৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের ১৭ হাজার ২১৯ কোটি টাকা ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। বেসরকারি ৪১ ব্যাংকের ২৪ হাজার ৯৫৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, বিদেশি ৯ ব্যাংকের ১ হাজার ৭১ কোটি টাকা, বিশেষায়িত ৩ ব্যাংকের ৩৬৫ কোটি টাকা। আর ব্যাংকিং খাতে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবলোপন করা ঋণ থেকে আদায় হয়েছে ৪৭১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আগের বছর ২০২০ সালের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ৭৩৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আর ২০১৯ সালের একই সময়ে আদায় করা হয়েছে ৮৩১ কোটি ২১ লাখ টাকা। নিয়মানুযায়ী ব্যাংকের অশ্রেণীকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। তবে খেলাপির নানা শ্রেণিভেদে ২০ থেকে ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আওতায় ২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন করে আসছে। যদিও প্রথমে ৫ বছরের বেশি ঋণ অবলোপন করা যেত, এখন তা তিন বছর হলেই অবলোপন করা যায়। সাধারণত খেলাপি হওয়ার পর যে ঋণ আদায় করার সম্ভাবনা খুবই কম ওই ঋণই ব্যাংকগুলো অবলোপন করে। ওই ঋণ পুনঃতফশিল বা পুনর্গঠন করা যায় না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে খেলাপি ঋণ অবলোপনের ক্ষেত্রে নীতিমালায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। আগে মামলা ছাড়া ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অবলোপন করা যেত। আর এখন ২ লাখ টাকা পর্যন্ত মামলা ছাড়াই অবলোপন করা যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন শিথিল নীতিমালার কারণে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ অবলোপন বাড়িয়েছে। ফলে গত কয়েক বছরে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। ২০১৯ সালে বিশেষ নীতিমালার আওতায় ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেয় সরকার। যদিও কোভিডের কারণে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি বিবেচনায় কয়েক দফায় সুযোগ দেয়া হয়, যা গত ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। তাই ওই ধরনের ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ থাকায় ব্যাংকগুলো আর্থিক প্রতিবেদন পরিচ্ছন্ন দেখাতে কৌশলেই মন্দমানের খেলাপি ঋণ অবলোপন করার পথে হাঁটছে।
এদিকে ঋণ অবলোপন বিষয়ে অর্থনীতিবিদদের মতে, ঋণ অবলোপনের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রাখা হচ্ছে। ওই কারণে খেলাপি ঋণ দেখানো হচ্ছে মাত্র এক লাখ কোটি টাকা। অথচ সব মিলিয়ে প্রকৃত খেলাপি ঋণ চার লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। খেলাপি ঋণের বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। ওসব টাকা ফেরত আনতে ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিকল্প নেই। ঋণখেলাপিদের জেলে ঢুকিয়ে সম্পত্তি ক্রোক করে কিছু টাকা আদায় করা যেতে পারে। অন্য কোনো উপায়ে টাকা ফেরত আসবে না। মূলত ঋণ আদায়ে সব ধরনের চেষ্টা ব্যর্থ হলেই ব্যাংকগুলো তখন অবলোপনের পথে হাঁটে। তবে ওই টাকা আদায়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু অনেক সময় অর্থঋণ আদালতের নানা দীর্ঘসূত্রতার কারণেও ঋণ আদায়ের গতি শ্লথ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন
২০২৪ সালে ৪০ কোটি টাকার বীমাদাবি প্রদান করলো প্রগ্রেসিভ লাইফ ইনসিওরেন্স
তারেক রহমানকে নিয়ে দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া: ফারুক
শেখ হাসিনাসহ ৭৫ জনের পাসপোর্ট বাতিল