December 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, November 21st, 2024, 10:03 pm

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি: আনু মুহাম্মদ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির অন্যতম সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আশু করণীয়’ প্রস্তাব ১০০ দিনে কতটা বাস্তবায়ন হলো- শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য আসলে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। তেল, ডিম, পেঁয়াজের মতো পণ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মাত্র কয়েকটা কোম্পানি এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। অনেক সময় কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়৷ এই জায়গাটায় সরকারের যথাযথ ভূমিকা দেখা যায়নি।’

গত ৫ অক্টোবর অধিকার কমিটির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১৩ দফা দাবি জানানো হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে এই ১৩ দফা প্রস্তাব পড়ে শোনান গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহা মির্জা। এরপর অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ সেগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন।

এ সময় আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘শহীদ, নিখোঁজ ও আহতদের পূর্ণ তালিকা এখনও কেন প্রকাশিত হয়নি, তা আমাদের বোধগম্য নয়৷ শহীদ ও আহতদের পরিবারের দায়িত্ব এখনও গ্রহণ করা হয়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছে৷ কিন্তু মামলাগুলো সুনির্দিষ্ট না হওয়ার ফলে এটা সম্পর্কে আমাদের সংশয় আছে যে কতটা হবে৷ ১৫ বছরে দায়ের হওয়া মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা এখনও প্রত্যাহার হয়নি। সংবিধান সংস্কার কমিশন অচিরেই একটা রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থিত করবে। তার ভিত্তিতে জনমত যাচাই করে একটা চূড়ান্ত রূপরেখা আমরা দেখতে পাব৷ বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আরও অনেক কাজ করার বাকি আছে। ইতোমধ্যে বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে৷ এগুলো সরকারের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক লুট, অর্থপাচার বা শেয়ার কারসাজির বিষয়ে বিগত সরকারের সময়ে হওয়া দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে৷ সেখানে অপরাধী হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে যাদের শনাক্ত করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কীভাবে বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেল, সে বিষয়ে বর্তমান গভর্নরের পরিষ্কার বক্তব্য দাবি করছি। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবির বিষয়ে সরকারের ভূমিকা ও দৃষ্টিভঙ্গি আগের সরকারের মতোই। তাদের ওপর নির্ভরশীল অর্থনৈতিক কাঠামো অব্যাহত থাকলে শেখ হাসিনার সময়ের অর্থনৈতিক মডেলের কোনো পরিবর্তন হবে না। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেক জায়গায় নতুন করে চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। নতুন একটা চাঁদাবাজ দল আবার আবির্ভূত হচ্ছে৷ হাটবাজারে ইজারাদারদের জুলুম এখনো বন্ধ হয়নি। এ ব্যাপারে সরকারের সক্রিয় ভূমিকা দাবি করেছেন তিনি।

গত ১৫ বছরে আমাদের শিক্ষাখাত সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে মন্তব্য করে আনু মুহাম্মদ বলেন, এখান থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের অনেক কাজ দীর্ঘমেয়াদে করতে হবে। কিন্তু এই সরকার এগুলো শুরু করতে পারে। এটা হতে পারে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে সারা দেশে ব্যাপকসংখ্যক পাঠাগার স্থাপন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে।’

স্বাস্থ্য খাত প্রসঙ্গে এই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্বাস্থ্যরক্ষা ও চিকিৎসাকে একটা সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা এই সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। সংবিধান সংস্কার হচ্ছে৷ আমরা আশা করি, সংবিধানে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা একটা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হিসেবে থাকবে এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হবে৷ এই সরকার স্বাস্থ্য খাতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে পারতো, কিন্তু আমরা কোনো উদ্যোগই দেখিনি। আহতদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট অদক্ষতা বা ব্যর্থতার স্বাক্ষর দেখা গেছে। ওষুধের দাম বাড়ছে। এই সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল পাবলিক বা সর্বজনের হাসপাতালের মান বৃদ্ধির জন্য সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত সব ব্যক্তি, মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্যসহ সরকারি কর্মকর্তাদের সবার পাবলিক হাসপাতালে চিকিৎসা বাধ্যতামূলক করা। এই ঘোষণাটা দিয়ে এই সরকার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ঢাকা শহর ও দেশের বিভিন্ন স্থান মাঠ ও পার্কগুলো দখল হয়ে আছে। এগুলো উন্মুক্ত করাটা এই সরকারের পক্ষে খুবই সম্ভব ছিল। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে হলে বিকল্প নিয়ে আসতে হবে৷ সংবিধানের রূপরেখায় পাহাড় ও সমতলের সব জাতিগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে। সারাদেশে স্বৈরশাসনের পতন হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি, যা দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। পার্বত্য চট্টগ্রামে কীভাবে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এবং সেখানে হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে আমরা সরকারের সক্রিয় উদ্যোগ দাবি করি। পাশাপাশি বিভিন্ন জাতি ও পণ্য পরিবহনে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার দাবি করছি। সব প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা কার্যকর করতে হবে৷ পাশাপাশি লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য প্রয়োজন৷ প্রধান উপদেষ্টা বিমানবন্দরে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ লাউঞ্জ উদ্বোধন করেছেন। এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এর পাশাপাশি প্রবাসে গিয়ে শ্রমিকেরা যে বিভিন্ন জালিয়াতি ও অত্যাচারের মধ্যে পড়ছেন, অকালমৃত্যু হচ্ছে, এসব বিষয়ে দূতাবাসগুলো যাতে আরও সক্রিয় উদ্যোগ নেয়, তার জন্য পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আরও সক্রিয় উদ্যোগ দাবি করছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ ও আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন এবং সদস্য অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা রিতু বক্তব্য দেন। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সীমা দত্ত, চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান, গুম থেকে ফিরে আসা মাইকেল চাকমা, মাহতাব উদ্দীন,বাকী বিল্লাহ, রাফিকুজ্জামান ফরিদ, আফজাল হোসেন, অমল ত্রিপুরাসহ অনেকে।