October 29, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, October 26th, 2025, 5:13 pm

ধানমন্ডিতে ফিল্মি কায়দায় লন্ডন প্রবাসীর ফ্ল্যাট দখল

মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে রিট মামলা পেন্ডিং থাকা অবস্থায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে ফিল্মি কায়দায় এক লন্ডন প্রবাসীর ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনাটি ঘটে।

ঘটনার সময় ফ্ল্যাটে অবস্থানরত ভাড়াটিয়া এস. এ. কবিরকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়। এ সময় ক্যান্সার আক্রান্ত তার শাশুড়িকেও অপমান ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

জানা গেছে, রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে “ম্যাজিক কম্পিউটার” এর স্বত্বাধিকারী মো. মনজুর হোসেন ধানমন্ডির আবাসিক এলাকা—সড়ক নং ৫, ফ্ল্যাট নং ১১৪বি (পুরাতন) / ৩৪এ (নতুন)—এ অবস্থিত ২,৯৭২ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের বনানী শাখায় বন্ধক রেখে ১ কোটি ২৬ লাখ ৮২ হাজার ৩৬৩ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। সুদসহ এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ ১ লাখ ৪০ হাজার ৫৫৫ টাকা ৩১ পয়সা।

মনজুর হোসেন নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছিলেন। কিন্তু ২০১৩ ও ২০১৪ সালে তার ব্যবসায় দু’দফা অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় তিনি ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়েন। তিনি বিষয়টি ব্যাংককে লিখিতভাবে জানান এবং পরে ব্যবসা বন্ধ করে লন্ডনে পাড়ি জমান।

বিদেশে থাকলেও ব্যাংকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন মনজুর হোসেন। তবে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংক অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে। ২০১৭ সালের জুনে তিনি ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেওয়ার নোটিশ জারি করেন।

এই সুযোগে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের তৎকালীন ভাইস-চেয়ারম্যান মো. গোলাম কুদ্দুস, নিজের পরিচয় গোপন রেখে তার স্ত্রীকে দিয়ে মাসিক ৫০ হাজার টাকায় ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। পরে ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ২ নং অর্থঋণ আদালত ব্যাংকের পক্ষে সার্টিফিকেট ইস্যু করে।

এরপর গোলাম কুদ্দুস নিজ পরিচয় প্রকাশ করে ফ্ল্যাট মালিককে জানান, তিনি এখন থেকে ব্যাংকে টাকা জমা দেবেন, যা ঋণের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। মনজুর হোসেন বিষয়টি মেনে নেন এবং ব্যাংককেও অবহিত করেন। কিন্তু পরে জানা যায়, গোলাম কুদ্দুস সেই ভাড়ার টাকা ব্যাংকে পরিশোধ করেননি—যার পরিমাণ প্রায় ৩৩ লাখ টাকা।

এই বিষয়ে ফ্ল্যাট মালিক একাধিকবার বাংলাদেশ ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানান এবং ঋণ পরিশোধের আবেদন করেন।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে সরকার পরিবর্তনের পর গোলাম কুদ্দুস কোনো ভাড়া বা বকেয়া বিল না দিয়েই ফ্ল্যাট ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর ফ্ল্যাট মালিক নতুন ভাড়াটিয়া হিসেবে ব্যবসায়ী এস. এ. কবিরকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেন।

তবে ঋণ পরিশোধের আবেদন বারবার করেও কোনো সুরাহা না পাওয়ায় মনজুর হোসেন বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন।

রিটের খবর জানাজানি হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে ব্যাংকের লোক পরিচয়ে ১৫-২০ জন ব্যক্তি আদালতের আদেশ ছাড়াই এসে ভাড়াটিয়া এস. এ. কবিরকে ফ্ল্যাট ছাড়ার নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ দেখতে চাইলে তারা কোনো নথি দেখাতে পারেননি। পরে জোরপূর্বক ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে ভাড়াটিয়ার মালামাল বাইরে ফেলে দেন।

এ ঘটনায় ফ্ল্যাটে থাকা ক্যান্সার আক্রান্ত নারীকে পর্যন্ত উপেক্ষা করা হয়। পরে এস. এ. কবির ধানমন্ডি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পাশাপাশি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকেও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছেন ফ্ল্যাট মালিক মনজুর হোসেন।

তিনি বলেন, আমি ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলাম। আগুনে ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় কিছু সময় ঋণ পরিশোধ করতে পারিনি। পরবর্তীতে একাধিকবার পরিশোধের আবেদন করেও কোনো সমাধান পাইনি। ব্যাংকের ভাইস-চেয়ারম্যানের কাছে ৩৩ লাখ টাকা ভাড়ার পাওনা আছে—যা সমন্বয় করার কথা ছিল। এখন যা ঘটেছে তা সম্পূর্ণ বেআইনি ও ফৌজদারি অপরাধ।”

বর্তমানে ঢাকার ৬ নং অর্থঋণ আদালতে ব্যাংকের দায়ের করা অর্থজারি মামলা নং ৪৭০/২০২৫ চলমান রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার জানিয়েছেন, রিট আবেদনটি আদালতে দাখিল হয়েছে। অতি দ্রুত এটি শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত করা হবে।