শেখ রেহানার আশির্বাদপুষ্ট দেশের একমাত্র সংগীতভিত্তিক টিভি চ্যানেল ছিল গান বাংলা। কুখ্যাত সংগীত শিল্পী কৌশিক হোসেন তাপস এই গান বাংলার মালিকানা দখল করে নিজের নামে চালিয়েছিলেন। যার উত্থান নিয়ে নানা মুখরোচক গল্পের ছড়াছড়ি মিডিয়াপাড়ায়। স্যাটেলাইট ফি- এর বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়।
গত বছরের ৪ নভেম্বর রাত ৩টার দিকে উত্তরার তাপসের বাসার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গত বছরের ১৮ জুলাই কোটা আন্দোলনে রাজধানীর আজমপুরে ব্যবসায়ী ইশতিয়াক মাহমুদকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তাপসকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এ মামলায় এ বছর ১৮ জুন (বুধবার ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে কেন্দ্রীয় কারাগার (কেরানীগঞ্জ) থেকে তাপস মুক্তি পান। বর্তমানে নীরবে–নিভৃতে জীবনযাপন করছেন তাপস। জনসম্মুখে তাকে খুব একটা দেখা যায় না। আড়াল থেকে করছেন দেশবিরোধী নানা চক্রান্ত।
এদিকে নতুন মামলার ভয়ে অনেকটাই ভীত তাপস। চেষ্টা করছেন সমঝোতা করতে। জানা গেছে, রাজধানীর বারিধারায় গান বাংলার প্রধান কার্যালয়টি জবরদখল করে ছিলেন গানবাংলার প্রধান নির্বাহী কৌশিক হোসেন তাপস ও চেয়ারপার্সন ফারজানা মুন্নী। বছরের পর বছর দিতেন না কোন ভাড়া।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গান বাংলা কার্যালয়টির প্রকৃত মালিক, যিনি বছরের পর বছর ভাড়া পেতেন না, ভাড়া চাইলে শুনেছেন তাপস-মুন্নী দম্পতির গুম-খুনের হুমকি, তিনি বকেয়া ভাড়ার জন্য মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
নতুন মামলা ও পরবর্তীতে জেলে যাওয়ার ভয়ে তাপস এখন সমঝোতা করতে চাইছেন। তার আগের মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীকে দিয়ে ইতোমধ্যে উদ্যোগও নিয়েছেন সমঝোতা করার। নিজের থেকে বয়সে বড় স্ত্রী ফারজানা মুন্নীর সম্পত্তি বিক্রি করেও হলে নতুন মামলা থেকে রেহাই পেতে চাইছেন। তবে ওই ভবনের প্রকৃত মালিক, তাপসের নয়ছয়ে আর ভুল করতে চান না। তার এত দিনের বকেয়া ভাড়া সবটুকু একসাথে চাইছেন।

তাপস গ্রেপ্তার হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বরে হয়ে আসে। গান বাংলার আড়ালে করেছেন নানা রকম নোংরামি, নারী কেলেঙ্কারিসহ মাদকের রমরমা ব্যবসায় জড়িত ছিলেন কৌশিক হোসেন তাপস। এমনকি সিন্ডিকেট করে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিকে নিজের বেডরুম বানানোর অভিযোগ আছে তাপসের বিরুদ্ধে।
তাপস ছিলেন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের তবলা বাদক। তার স্ত্রী ফারজানা মুন্নী ছিলেন বিগত ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনার বিউটিশিয়ান। মূলত স্ত্রীর হাত ধরেই রাতারাতি একের পর এক সিঁড়ি টপকে সামান্য একজন তবলা বাদক থেকে মিডিয়া মাফিয়া বনে যান তাপস।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে কনসার্ট আয়োজনের কাজও বাগিয়ে নিতেন তাপস। সেসবের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন আয়োজিত লাল-সবুজের মহোৎসব, জয় বাংলা কনসার্ট, মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান অন্যতম। সেখান থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। আর এসব কাজে অধিকাংশ সময়ই তাপস ব্যবহার করতেন তার জাদুর কাঠি ‘ফারজানা মুন্নী’কে।
মুন্নীর সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সখ্য, বিশেষ করে শেখ হাসিনার ‘আস্থাভাজন’ পরিচয় কাজে লাগানো ও বিদেশি তরুণীদের দিয়ে ‘মনোরঞ্জন’-এর ব্যবস্থা করা ছিল এই ধূর্ত মিডিয়া মাফিয়ার অন্যতম হাতিয়ার।
অভিযোগ আছে, গান বাংলার নাম করে ইউক্রেন ও বিশ্বের কয়েকটি দেশ থেকে নারী এনে তাদের অনৈতিক কাজে ব্যাবহার করতেন তাপস। এভাবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি, আন্তর্জাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন তিনি।

২০২২ সালের মার্চে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ঢাকায় সানি লিওনকে নিয়ে আসেন তাপস। সেসময় তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছিল, সানি লিওনকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু নিজের মেয়ের বিয়েতে এই বলিউড তারকাকে নাচাবেন বলে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই ঢাকায় সানি লিওনকে নিয়ে আসেন তাপস। ১৩ ঘণ্টার সফর শেষে কোনো বাধাবিপত্তি ছাড়াই দেশ ছাড়েন অভিনেত্রী।
এছাড়া ভারতীয় অনেক নায়িকাকে অনুষ্ঠানের নামে নিয়মিত ঢাকায় আনতেন। এদের মধ্যে নুসরাত জাহান, মিমি চক্রবর্তী, নার্গিস ফাখরিসহ অনেকেই আছেন। এসব তারকাকে দিয়েও বিভিন্ন প্রভাবশালীদের তাপস নানান সেবা দিতেন বলে কানাঘুষা আছে।
মূলত গান বাংলার প্রতিষ্ঠাতা কিংবা প্রকৃত মালিক কৌশিক হোসেন তাপস নন। তিনি ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা মুন্নী ক্ষমতাবলে চ্যানেলটির দখল নেন। ২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর, বিজয়ের দিন যাত্রা শুরু করা গান বাংলা চ্যানেলের স্বপ্নদ্রষ্টা ও মূল মালিকানায় ছিলেন আবৃত্তি শিল্পী, লেখক রবিশঙ্কর মৈত্রী। তার সাথে ছিলেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ড. এম. আমানুল্লাহ খান। যিনি চঞ্চল খান নামেও পরিচিত। আরও ছিলেন সৈয়দ আহমেদ ফারুক যিনি উনসত্তরের ছাত্রনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। ছিলেন সাংবাদিক বখতিয়ার সিকদার।
এছাড়াও গান বাংলার সঙ্গে যুক্ত থেকে এক সময়ের পরিচিত কোম্পানি ওয়ান মোর জিরো গ্রুপ এর মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানটির একছত্র নিয়ন্ত্রণ নেন কৌশিক হোসেন তাপস ও ফারজানা আরমান মুন্নি।
এনএনবাংলা/আরএম
আরও পড়ুন
উত্তরায় নাটক-সিনেমার শুটিং বন্ধে নির্দেশ, শিল্পীদের ক্ষোভ
বেশি বলেন তটিনী, কিপটে তৌসিফ
৪৯ আরোহী নিয়ে রাশিয়ার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত