নিজস্ব প্রতিবেদক
সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে একলাফে ১৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানার মালিকেরা। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে বিষয়টি লিখিত জানিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
ঈদের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবস গত বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ট্যারিফ কমিশনে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে সুকৌশলে অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ ওই চিঠিতে তারা জানিয়েছেন, ১ এপ্রিল থেকে এ বর্ধিত দাম কার্যকর হবে। অথচ পুরো সময় সরকারি ছুটি থাকায় এর মধ্যে দাম বৃদ্ধির বিষয়টি পর্যালোচনার সুযোগ থাকছে না সরকারের।
দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক–কর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হওয়াকে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও শুল্ক–করের এ হিসাবেও রয়েছে নয়ছয়ের অভিযোগ। ফলে শুল্ক–কর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হলেও দাম বাড়ানোর প্রয়োজন আছে কি না, অথবা কতটা দাম বাড়ানো উচিত সে বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সরকারের অনুমোদন ছাড়া সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি বেআইনি। তবে দীর্ঘদিন সে আইনের তোয়াক্কা করেননি ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানার মালিকেরা। বিগত সরকারের সময় দফায় দফায় এভাবে ট্যারিফ কমিশনে চিঠি দিয়ে দাম বাড়ানো হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে না জানিয়েও দাম বাড়িয়েছে।
তবে এবার হুট করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে সরকারের দেওয়া শুল্ক–কর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া। যদিও গত ১৮ মার্চ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় রাখতে আমদানি পর্যায়ে অব্যাহত শুল্ক-কর রেয়াত আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসেনি ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত। এরমধ্যে শেষ কর্মদিবসে এমন দাম বাড়ানোর ঘোষণা সরকারের সংস্থাগুলোকে বাড়তি চাপে রাখার জন্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ সময়ে (১ এপ্রিলের মধ্যে) ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানো হলে দাম আগের মতোই থাকবে। আর যদি শুল্ক-কর রেয়াতের এই সুবিধা উঠে যায়, তাতে আমদানি খরচ বাড়বে। ফলে দাম বাড়ানো ছাড়া আর উপায় থাকবে না।
এসব বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তারা নিজেরা কার্যকর করলে সেটি সরকার অনুমোদিত হবে না। দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করা হয় বৈঠক করে। যা এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি।
দাম বাড়ানোর হিসাবে নয়ছয়
দাম সহনীয় রাখতে গত ১৫ ডিসেম্বর সয়াবিন তেল আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ছাড়ের মেয়াদ ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ায় সরকার। তবে ওই সময় কিন্তু ভোজ্যতেলের দাম কমায়নি কোম্পানিগুলো। বরং সে সময় বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কথা বলে দেশের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।
ওই সময় বিভিন্ন হিসাবে দেখা যায়, শুল্ক-কর রেয়াতের কারণে ভোজ্যতেল আমদানিতে কোম্পানিগুলোর সাশ্রয় হয়েছে প্রতি লিটারে ১১ টাকা। কিন্তু এখন শুল্ক-কর রেয়াত উঠে যেতেই ১৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ শুল্ক-করের এ খেলায়ও লিটারে ৭ টাকা বাড়তি মুনাফা করতে চায় কোম্পানিগুলো।
এসব বিষয়ে কথা বলতে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধিসহ সিটি, টি কে ও মেঘনা গ্রুপের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। তবে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
যদিও নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, শুল্কছাড়ের এ সুবিধা উঠে গেলে কোম্পানিগুলো লোকসানে পড়বে। কারণ, বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেশি। এছাড়াও বিশ্ববাজারে দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আরও কয়েকমাস থাকবে। সবকিছু মিলিয়েই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কিছুটা বাড়িয়ে করা হয়েছে। কারণ, একবার দাম বাড়ালে কয়েকমাস আর বাড়ানো সম্ভব হবে না।
সংসারের খরচ বাড়বে
সয়াবিন তেলের এ অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের খরচ বাড়বে। শুধু ভোজ্যতেলের পেছনে সংসারের খরচ মাসে অন্তত ১০০ টাকা বেড়ে যাবে।
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর বাড়ানো হয়েছিল। তখন লিটারপ্রতি দাম নির্ধারণ করা হয় ১৭৫ টাকা। আগামী ১ এপ্রিল থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯৩ টাকা। সেই হিসাবে লিটারে দাম বাড়ছে ১৮ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৩৫ টাকা।
একইভাবে খোলা সয়াবিন ও খোলা পাম তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে লিটারপ্রতি ১৭০ টাকা। বর্তমানে সরকার নির্ধারিত দাম লিটারপ্রতি ১৫৭ টাকা। এ হিসাবে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ছে লিটারপ্রতি ১৩ টাকা।
রাজধানীর রামপুরার বাসিন্দা বলেন, দফায় দফায় এমন দাম বৃদ্ধি, কথায় কথায় তেলের সরবরাহ সংকট মেনে নেওয়া যায় না। এখনই দামের চোটে ভোজ্যতেল কেনা দায়। আরও দাম বাড়লে কেনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। সরকারকে এ বিষয়টি কঠিনভাবে পর্যালোচনার অনুরোধ জানান এ ক্রেতা।
আরও পড়ুন
জাতিকে এগিয়ে নিতে ঈদুল ফিতরের বার্তা ধারণের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত পরিবারের পাশে থাকবে বিএনপি : আমিনুল হক
ইমামের পাশে উপদেষ্টা আসিফের নামাজ আদায়, জানা গেল কারণ