April 21, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, April 20th, 2025, 10:48 am

নারীর প্রতি মর্যাদাহানিকর ভাষা ব্যবহার বন্ধের সুপারিশ করেছে কমিশন 

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রীয় দলিলপত্র, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শব্দচয়নে, লিখনে, বলনে ও ভাষণে নারীর প্রতি অর্থাৎ যে কোনো ব্যক্তির প্রতি মর্যাদাহানিকর ভাষা বন্ধের সুপারিশ করেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। যেমন ধর্ষিতা না বলে ধর্ষণের শিকার ও নির্যাতিতা না বলে নির্যাতনের শিকার বলা যেতে পারে।

অভিযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার লক্ষ্যে সব আদালত ও থানায় নারী, শিশু ও বয়স্কসহ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য হেল্প ডেক্স চালু ও সক্রিয় করার পাশাপাশি সব আদালত ও আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যালয়ের জন্য প্রতিবন্ধী সহায়ক অবকাঠামোর ব্যবস্থা করতে হবে। ইশারা ভাষা জানা ব্যক্তিদের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা নিশ্চিত করতে অনুবাদক ও অর্ধ-বার্ষিক তালিকা তৈরিরও প্রস্তাব দিয়েছে এই কমিশন।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও নারী পক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরিন পারভিন হক নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের এসব সংস্কার প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, নারী ও শিশুর জন্য সহিংসতামুক্ত সমাজ গঠনে আইন ও আইনগত কাঠামোতে সংস্কার করে নারীর পারিবারিক ও জনপরিষদে সমঅধিকার নিশ্চিত করতে ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে অভিন্ন পারিবারিক অধ্যাদেশ প্রণয়ন করতে হবে। অভিন্ন পারিবারিক আইন সব সম্প্রদায়ের জন্য ঐচ্ছিকভাবে প্রযোজ্য হবে।

কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালের উচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে যৌন হয়রানি, যৌন নিপীড়ন ও হেনস্তার সংজ্ঞা সুস্পষ্ট করে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করারও দাবি জানায় নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন।

এছাড়াও বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর প্রয়োগ নিশ্চিত করা‌র লক্ষ্যে প্রত্যেক সেবাদানকারী সরকারি ও বেসরকারি কর্তৃপক্ষকে (পরিবহন মালিক সমিতি ও দোকান মালিক সমিতিসহ) তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মরত নারীদের প্রতি সম্মানজনক মর্যাদাপূর্ণ ও অধিকতর সংবেদনশীল আচরণ নিশ্চিত করতে যথাযথ আচরণ বিধিমালা তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

সব জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে ননস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে সরকারি বিভাগের সম্পূর্ণ অংশীদারত্ব এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সহজ বাংলায় প্রটোকল তৈরি করার কথা উল্লেখ করে কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, রাজস্ব বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে সমর্থিত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত কার্যাবলীর সঙ্গে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধমূলক কর্মসূচিকে একীভূত করতে হবে। সহিংসতা রোধে নীতি ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল ও সরকারি-বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত ও কর্পোরেটসহ সব প্রতিষ্ঠানের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অভিযোগ কমিটি গঠন ও সক্রিয় করা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০৩০ পর্যালোচনা করে যুগোপযোগী করা, বাস্তবায়নের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং বাজেটে খাতওয়ারি সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা‌র প্রস্তাব দিয়েছে এই সংস্কার কমিশন। কমিশনের প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, পুলিশ, আইনজীবী, বিচারক ও চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট সব সেবাদানকারীর জন্য জেন্ডার সংবেদনশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানে শক্তিশালী পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা কার্যকর করা প্রয়োজন।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য নারীর প্রতি সহিংসতা সংক্রান্ত হাইকোর্টের নির্দেশনা সুনির্দিষ্ট করে সহজে বোধগম্য ও বাস্তবায়ন করা জরুরি। এসময় দুই অঙ্গুলি পরীক্ষা (টু ফিঙ্গার টেস্ট) নিষিদ্ধকরণ বিষয়ক রায়ের কথা তুলে ধরা হয়। এর পাশাপাশি দেশব্যাপী একটি টোল ফ্রি ও কার্যকর হটলাইন স্থাপনে পুলিশ, আইনজীবী, বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট সব সেবাদানকারীদের জন্য জেন্ডার সংবেদনশীলতা বিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করার ‌কথা বলা হয়। সশস্ত্র বাহিনী বার অ্যাসোসিয়েশন ও বার কাউন্সিলের সদস্যদেরও এ জাতীয় প্রশিক্ষণের আওতাভুক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয়।

শিক্ষা পদ্ধতি ও পাঠ্যক্রম সংস্কারের মাধ্যমে সম্মতি বিষয়ক ধারণা, যৌন নির্যাতন ও হয়রানি কী এবং বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হয়রানি থেকে নিজেকে কীভাবে রক্ষা করা যায় সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয় নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে। আরও বলা হয়, মর্যাদাপূর্ণ ও যথাযথ সংবেদনশীল আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করার লক্ষ্যে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে। নারীর প্রতি সম্মানজনক, মর্যাদাপূর্ণ ও যথাযথ সংবেদনশীল আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির লক্ষ্যে সামাজিক সচেতনতা বিষয়ক কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।

যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ নারীর লজ্জার বিষয় না বরং নির্যাতনকারী ও দর্শকের লজ্জা-এমনটি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, তাই নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার নারীকে দোষারোপ করার রীতির অবসানকল্পে সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন।