May 3, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, May 2nd, 2025, 1:50 pm

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দাবিতে মাঠে নামছে হেফাজত

 

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে আগামী শনিবার (৩ মে) ঢাকায় মহাসমাবেশ করতে যাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম। আর এই সমাবেশের মাধ্যমে কওমী মাদরাসাভিত্তিক এই সংগঠনটি সরকারকে চাপে রাখতে চাইছে। এরমধ্যেই ঢাকার এই সমাবেশ লোক জড়ো করতে সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা দেশের বিভিন্ন জেলায় সফর করেছেন।

এদিকে হেফাজতের এই কর্মসূচির পেছনে কোনো রাজনীতি আছে কি-না সেই প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। এই দাবিকে নাকচ করে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, এখান থেকে ইসলামী দলগুলোর কোনো রাজনৈতিক অভিপ্রায় দেখছি না আমি। আর এই কর্মসূচির পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।

কর্মসূচির দিয়ে হেফাজত কী আদায় করতে চায়? এই প্রশ্নের জবাবে দলটির নেতারা জানান, মূলত মামলা প্রত্যাহার এবং ‘শাপলা চত্বরে গণহত্যার’ বিচারের জন্য সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ প্রয়োগের প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়। কারণ হেফাজত নেতারা মনে করেন, তাদের মামলা প্রত্যাহার কার্যক্রমে ‘যথেষ্ট গতি নেই’। তখন থেকেই হেফাজতের এই সমাবেশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে কমিশনের বিষয়টি যুক্ত হয়।

কিন্তু এর মধ্যেই মামলা প্রত্যাহারের জন্য সমাবেশ করে সরকারকে চাপ দেওয়ার প্রয়োজন কেন পড়লো? জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, মামলা প্রত্যাহার পিছিয়ে গেলে নির্বাচনের পর নতুন যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারা এসব মামলাগুলোকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। আমরা একটা রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে পড়ে যাবো।

হেফাজত কেন নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনই বাতিল চায়? এমন প্রশ্নে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে ছেলেকে মেয়ের তুলনায় দ্বিগুণ সম্পত্তি এবং মেয়েকে ছেলের তুলনায় অর্ধেক সম্পত্তির যে বিধান আছে, এই বিধানকে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন পরিবর্তন করার দাবি জানাচ্ছে। এটা তো সরাসরি কোরআন-বিরোধী অবস্থান। ইসলামে পতিতাবৃত্তি নিষিদ্ধ, কিন্তু কমিশন একে শ্রমিকের স্বীকৃতি দিতে বলছেন। তাদের পুনর্বাসন না করে স্বীকৃতি দিলে এটা তো আরও উৎসাহিত হবে।

তিনি আরও বলেন, কমিশনের বিভিন্ন প্রস্তাব আছে- যেগুলো কোরআন এবং ইসলাম-বিরোধী। ফলে এ ধরনের প্রস্তাব থাকার কারণে এই প্রতিবেদন বাতিল, এটাকে প্রত্যাখান করা এবং এ ধরনের প্রস্তাবনার দায়ে কমিশনকেও বাতিল করতে হবে। এটাই আমাদের দাবি।

এইদিকে হেফাজতে ইসলাম মহাসমাবেশ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারাদেশের মাদরাসাগুলো সফর করছেন সংগঠনটির নেতারা। আর তুলে ধরছেন ৪ দাবি। দাবিগুলো হলো- নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ও এর প্রতিবদন বাতিল; সংবিধানে বহুত্ববাদের পরিবর্তে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল; হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলা প্রত্যাহার ও শাপলা চত্বরের কথিত হত্যাকাণ্ডসহ সব গণহত্যার বিচার; ফিলিস্তিন ও ভারতে ‘মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের’ আহ্বান।

অন্যদিকে হেফাজত ইসলামের সামাবেশের করার ঘোষণায় নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব বাতিল করার জন্য সরকারকে ‘মনস্তাত্ত্বিক চাপ’ তৈরির অভিযোগ উঠেছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, আমরা জানতাম যে বিরোধিতা হবে। কিন্তু সেজন্য যে রিপোর্ট তুলে ফেলে দিতে বলবে, এ রকম চিন্তা করিনি। মানুষকে তো একাডেমিক আলোচনা করতে দেবেন। একাডেমিক বিরোধিতায় আসেন, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আপনি একটা মিটিং ডাকলেন, শত শত লোক আসলো, সবাই ইয়েস স্যার বলবে এবং আমাদেরকে বের করে দিতে চাইবেন, আমাদেরকে চিহ্নিত করবেন- এটা ঠিক নয়। এটা মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা কিন্তু ধর্মীয় আইনে কোনো বাধা দেওয়ার কথা বলিনি। ধর্মীয় আইনকে টাচ করিনি। আমরা শুধু বলেছি, একটা সিভিল ‘ল’ করা উচিত, যে আইনের মাধ্যমে প্রতিটি নারী তাদের সম-অধিকার অর্জন করবে এবং এটা ঐচ্ছিক হবে। আমরা সরকারের কাছে একটা প্রতিবেদন দিয়েছি বলেই যে এটা গ্রহণ হয়ে গেলো তেমনটা তো না।

তবে হেফাজত ইসলামের নেতা মামুনুল হক তাদের কর্মসূচির মাধ্যমে ভীতি বা আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ নাকচ করেন। উল্টো দাবি করেন, নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে ‘ইসলামবিরোধী’ প্রস্তাবের কারণে মুসলমানদের মধ্যে ‘আতঙ্ক তৈরি হয়েছে’।

পুরো কমিশনকেই ‘উদ্দেশ্যমূলক’ দাবি করেনন মামুনুল হক। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ধর্মপালনকারী শ্রেণির মধ্য থেকে কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়েছে এই কমিশনে? কমিশন গঠনটাই তো একটা উদ্দেশ্যমূলক মনে হচ্ছে। আমরা আশঙ্কা করছি, এই কমিশনের যে প্রস্তাবনা সেটা দ্রুত কার্যকর করার পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। তখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে যাবে। ফলে আমরা বড় কর্মসূচি করছি যেন সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি। ইতিমধ্যেই কিন্তু মাঠে ব্যাপক আওয়াজ হচ্ছে। কিন্তু সরকারি মহল থেকে নির্লিপ্ত অবস্থা দেখা যাচ্ছে। তার মানে তারা আমাদের এ সকল কথা-বার্তাকে কোনো পাত্তা দিচ্ছে না।