March 10, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, March 9th, 2025, 1:32 pm

“নারী মুক্তির আকাঙ্ক্ষা: গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতা” শীর্ষক মতবিনিময় সভা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আরিফা সুলতানা, কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক নারী সংহতি: সম্প্রতি দেশজুড়ে বেড়েছে নারীবিদ্বেষী সঙ্ঘবদ্ধ তৎপরতা। সমাজের সর্ব স্তরের নারীদের ওপর চলমান এসব তৎপরতাকে বিচ্ছন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার কোন সুযোগ নেই।

এই বাস্তবতায় ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’কে সামনে রেখে নারী সংহতির আয়োজনে “নারী মুক্তির আকাঙ্ক্ষা: গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতা” শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৮ মার্চ নারী সংহতির ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বেলা ১১টায় এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নারী দিবসের শুভেচ্ছা ও আগস্ট অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মতবিনিময় সভার সূচনা করেন নারী সংহতির সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা চন্দ। সভার সঞ্চালনাকালে  তিনি শিশু আসিয়াকে ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সভার সভাপতিত্ব করেন, নারী সংহতির সভাপতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষক শ্যামলী শীল। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেশের মানুষ আশা করেছিলো জুলাই অভ্যূত্থানের পরে নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশের মানুষ আশাবাদী ছিলো। যদিও গত সাত মাসে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। আর সেই অবনতির প্রথম শিকার হচ্ছে নারীরা। লালমাটিয়ায় দুই নারীর ধূমপান নিয়ে স্বারাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ধূমপানকে সিভিল অফেন্স সেটা চিহ্নত করলেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নারীর ওপর হামলার বিষয়ে চুপ থাকার মধ্য দিয়ে সমাজে নারীর ওপর সহিংসতাকে একভাবে জাস্টিফাই করলেন। একই সঙ্গে দেশে চলমান রাজনৈতি পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

একই সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নে সংসদে নারী সংরক্ষিত আসন বাড়ানোর দাবি ও সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারীর সমানাধিকারে বিষয়টিকে আবারো সামনে নিয়ে আসেন শ্যামলী শীল।

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, হিসাব বিজ্ঞান বিভাবের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা নারীর  আর্থসামাজিক অবস্থা উল্লেখ করে বলেন, নারী দিবসের এতো বছর পরও নারী শ্রমের বিনিময়ে এই সমাজ থেকে কি মর্যাদা পাচ্ছেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

আর্ন্তজাতিক নারী দিবসে লড়াকু নারীদের ও নারী সংহতির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ বলেন, নারী-পুরুষের সবার ঐক্যের মধ্য দিয়ে একটা স্বৈরাচারী শাসককে ক্ষমতা থেকে নামানো সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে দেশে চলমান নৈরাজ্য অবসানে অর্ন্তরবর্তীকালীন সরকারের আরো কঠোর অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পূর্বের সরকারের মতো সহিংসতা ও নৈরাজ্যের দায় অন্য কারো ওপর চাপিয়ে দিয়ে সাফাই গাইলে হবে না। নিরাপত্তা পরিস্থিতি শক্ত হাতে নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করতে পরিবারিক, ধর্মীয় ও সামাজিক শিক্ষার ওপর জোর দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। রাষ্ট্রের সবক্ষেত্রে নারীদের আরো বেশি সরব হওয়ার প্রতি জোর দেন তিনি।

গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহি সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, দেশের বর্তমান নৈরাজ্যিক পরিস্থিতিকে অর্ন্তবর্তী সরকারের যে অগ্রাহ্য করার প্রবণতা দেখা যায় সেটা মোটেই সু্স্থ্য বা স্বাভাবিক নয়। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য রোধ করতে হবে। দেশে কোন রাজনৈতিক শক্তি ছাড়া নারী প্রশ্নকে সামনে এগিয়ে নেয়া সম্ভব না। এজন্য অভ্যুত্থানের চেতায় উদ্বুদ্ধ ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক শক্তির উত্থান জরুরী।

জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার বলেন, গণঅভ্যুত্থানে নারীদের অংশগ্রহন ব্যপকমাত্রায় থাকলেও পরর্বতীতে নেতৃত্বে বা নীতিনির্ধারক অবস্থানে নারীদের দেখা যায়নি।

নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার সীমা দাস সামু শ্রমজীবী নারীদের বেতন বৈষম্য ও স্ববেতনে মাতৃত্বকালীন ছুটি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

বিএনএসকের সংগঠক এনা সাইমুম রিমা নারীদের একক রাজনৈতিক দল নির্মানের প্রস্তাবনা দেন।

বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়  ধর্ষণ-যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের জন্য আইন এবং বিচার প্রক্রিয়া পুরুতান্ত্রিক। ফলে পাহাড়ে-সমতলে নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন বন্ধ করা এবং সহিংসতা বন্ধের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। নারীর উপর যে-কোনো নিপীড়ন-নির্যাতন বিশেষ করে যৌন সহিংসতার ক্ষেত্রে ‘ভিক্টিম ব্লেমিং’ বন্ধ করার দাবি তোলেন তারা। হাইকোর্ট প্রণীত যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা ও অভিযোগ সেলের কার্যকর ও পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।

এ মতবিনিময় সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মী কৃষ্ণকলি ইসলাম, নারী সংহতির কেন্দ্রিয় নেতা রেবেকা নীলা, গ্রন্থ প্রবর্তনার পরিচালক সীমা দাস সামু, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা, জাসদ সমাজতান্ত্রিক দল নারী জোটের ঢাকা জেলার সভাপতি ফারজানা জামান দিবা, নারী পক্ষের সৈয়দা সালমা পারভীন, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার সীমা দাস সামু, সামাজতান্ত্রিক নারী জোটের সভাপতি তানিয়া রব, আইনজীবী আবেদা গুলরুখ, অর্থনীতিবিদ সুজিত চৌধুরী, শৈশবের প্রতিষ্ঠাতা ফারহানা মান্নান, শিল্পী বড়ুয়া,র্গামেন্টস শ্রমিক সংহতির নেতা প্রবীর সাহা, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিষদের সদস্য জুলহাসনাইন বাবু, সমগীতি সাংস্কৃতি সংগঠনের অর্ক সুমন, আইনজীবী নাসিমা রহমান তুহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।