December 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, July 12th, 2024, 9:49 pm

নিজেকে ‘ফিটনেস-ফ্রিক’ দাবি করেন জাহানারা

অনলাইন ডেস্ক :

জিম সেশন ও ফিটনেস ট্রেনিংসের নানা ছবি-ভিডিও নিয়মিতই নিজের ফেইসবুক পাতায় পোস্ট করেন জাহানারা আলম। ফিটনেসের প্রতি তার অনুরাগের প্রমাণ তার ক্যারিয়ারজুড়ে মিলেছে নানা সময়ে। নিজেকে তিনি দাবি করেন ‘ফিটনেস-ফ্রিক।’ এক বছর পর তার জাতীয় দলে ফেরার ক্ষেত্রেও এটি সহায়তা করেছে বলে মনে করেন তিনি। সামনের এশিয়া কাপে তাকিয়ে দেশের অভিজ্ঞ এই পেসারের স্বপ্ন, ২০১৮ আসরের মতোই শিরোপার আলোয় উদ্ভাসিত হওয়া। একসময় জাহানারাকে ছাড়া বাংলাদেশ দল ভাবাই যেত না। দলের অবিসংবাদিত সেরা পেসার ছিলেন তিনি। বেশ কিছু রেকর্ড গড়েন তিনি। তবে সময়ের স্রোতে তার পারফরম্যান্সে পলি জমে যায়। একসময় যা ছিল অভাবনীয়, সেটিই বাস্তব রূপ পায় গত বছর।

দলে জায়গা হারান তিনি। বাদ পড়ার আগে শেষ ১০ ওয়ানডেতে তার উইকেট ছিল ৮টি। অবস্থা ভীষণ নাজুক ছিল টি-টোয়েন্টিতে, শেষ ১০ টি-টোয়েন্টিতে উইকেট ছিল কেবল ২টি। বাংলাদেশের হয়ে তিনি সবশেষ খেলেছেন গত বছরের মে মাসে শ্রীলঙ্কা সফরে। এক বছরের বেশি সময় পর দলে ফিরলেন শ্রীলঙ্কা সফর দিয়েই। এবারের লঙ্কা অভিযান এশিয়া কাপের জন্য। বাইরে থাকার সময়টায় নিজেকে ঘষেমেজে মরচে ছাড়ানোর চেষ্টা করেছেন তিনি একটি ক্রিকেট একাডেমিতে।

ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের তত্ত্বাবধানে চেষ্টা করেছেন আরও শাণিত হয়ে উঠতে। বিকেএসপিতে জাতীয় দলের ক্যাম্পের ফাঁকে বিসিবির ভিডিও বার্তায় তিনি শোনালেন সেই অধ্যাবসায়ের গল্প। “দীর্ঘ এই এক বছরের ৯ মাস আমি মাসকো একাডেমিতে অনুশীলন করেছি। সালাউদ্দিন স্যারসহ ওখানে যারা কোচিং স্টাফ ছিলেন, ওঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন আমার সঙ্গে এবং চেষ্টা করেছেন আমি যেন ভালো পারফরম্যান্স করতে পারি।”

“প্রতিটি সময় চেষ্টা করেছি নিজেকে তৈরি করে রাখার জন্য, যেন নারী দলের যখনই প্রয়োজন হবে, আমি যেন প্রস্তুত অবস্থায় থাকতে পারি। সবশেষ প্রিমিয়ার লিগে ভালো পারফরম্যান্সও হয়েছে, দীর্ঘ ৯ মাসের পরিশ্রম বলতে পারেন। সবকিছু মিলিয়ে অনেক ভালো অনুভূতি যে আবারও বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করতে পারব।” এবারের প্রিমিয়ার লিগে ৯ ম্যাচে ২৫ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন তিনিই। এই পারফরম্যান্স তো বটেই, দলে ফেরায় বড় ভূমিকা রেখেছে তার ফিটনেসও। ৩১ বছর বয়সী পেসারের মতে, সবসময় ফিটনেসকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়াতেই ক্যারিয়ারের নানা পথ মাড়িয়ে এত বছর পরও এতটা তরতাজা ও চনমনে তিনি।

“আমি সবসময়ই ফিটনেস-ফ্রিক। ৯ বছর বয়স থেকেই খেলাধুল করি, সেটা হ্যান্ডবল, ভলিবলৃসবাই জানেন এসবৃ আন্তস্কুল, আন্তজেলা, আন্তবিভাগ, তখন থেকেই আসলে শুরু। ২০০৭ সালে যখন ক্রিকেট শুরু করি, তখন থেকে চেষ্টা করেছি যেন ফিটনেস ভালো পর্যায়ে থাকে।” “আমি যেহেতু একজন পেস বোলারৃ২০০৭ সাল থেকে চেষ্টা করেছি একই গতি ধরে রাখতে। বরং গতি বেড়েছে আমার, কমেনি। আমার ফিটেনস ও শক্তি আমাকে সহায়তা করেছে। আপনারা জানেন যে, জিম ও রানিং করতে আমি খুবই পছন্দ করি। বিশেষ করে, এই বয়সে এসে, সাড়ে ১৫ বছর জাতীয় দলকে সার্ভিস দিয়েছি, সাড়ে ১৭ বছর আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারৃ সবকিছু মিলিয়ে এখনও যে পর্যায়ের ‘ওয়েট ট্রেনিং’ করি বা অনুশীলন করি, ওই ‘পাওয়ার’ আমাকে সহায়তা করে গতি ও ফিটনেস ধরে রাখতে।”

ছেলে-মেয়ে মিলিয়েই এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ট্রফি এসেছে জাহানারাদের হাত ধরেই। ২০১৮ এশিয়া কাপে সবাইকে চমকে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। কুয়ালা লামপুরে রোমাঞ্চকর ফাইনালে শেষ বলে দুই রান নিয়ে জাহানারাই ছিলেন ঐতিহাসিক মুহূর্তটির স্বাক্ষী। এরপর দেশের মাঠে গত এশিয়া কাপে চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে সেমি-ফাইনালেই খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। সেই হতাশা পেছনে ফেলে এবার ছয় বছর আগের উৎসব ফেরাতে চান জাহানারা।

“এশিয়া কাপে দলের প্রথম লক্ষ্য আমাদের অবশ্যই সেমি-ফাইনাল খুব ভালোভাবে খেলা। এখানে একটা সমীকরণ আছে আমাদের, যেটা আমি মনে করি, আমরা যদি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমি-ফাইনাল খেলতে পারি, তাহলে পাকিস্তানকে হয়তো পাব। সেদিক থেকে আমাদের জন্য একটু সহজ হতে পারে। আমরা সেটিই চেষ্টা করব।” “কাজেই প্রথম ম্যাচই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। ইতিবাচক ফল যদি আমরা বাংলাদেশ দলের জন্য আনতে পারি, এটা ভালো হবে এবং অবশ্যই আমরা চেষ্টা আমাদের সুখস্মৃতি ফিরিয়ে আনার জন্য, যেটা আমরা ২০১৮ সালে করেছিলাম।”

প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তাদেরকে হারাতে পারলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে প্রবলভাবেই। সেক্ষেত্রে সেমি-ফাইনালে এড়ানো যাবে ফেভারিট ভারতকে। জাহানারা বলছেন সেই সমীকরণের কথাই। দলের লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট হলেও নিজের লক্ষ্য তার তেমন কিছু নয়। তিনি স্রেফ চান প্রতিটি ম্যাচে দলের জয়ে বড় অবদান রাখতে।

“চেষ্টা করেছি সামনের এশিয়া কাপের জন্য খুব ভালোভাবে প্রস্তুত হতে। প্রিমিয়ার লিগের আগে দলের বাইরে ছিলাম। সেখানেও চেষ্টা করেছি নিজেকে তৈরি করতে। প্রিমিয়ার লিগ আমার জন্য টার্নিং টুর্নামেন্ট ছিল। এখন জাতীয় দলের ক্যাম্প চলছে। আশা করি, এই প্রস্তুতি ম্যাচে পারফরম্যান্সে মেলে ধরতে সহায়তা করবে আমার জন্য।” “ব্যক্তিগতভাবে নিজের লক্ষ্য থাকবে যেন প্রত্যেকটি ম্যাচে খুব ভালো অবদান রাখতে পারি দলের জয়ে।” এবারের এশিয়া কাপ হবে শ্রীলঙ্কার ডাম্বুলায়। আগামী শুক্রবার শুরু আসর, বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ২০ জুলাই। ‘বি’ গ্রুপে লঙ্কানদের পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্য দুই সঙ্গী মালেয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড। গত আসরে থাইল্যান্ড চমক উপহার দিয়েছিল সেমি-ফাইনালে উঠে।