বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপের পরিণত হওয়ায় মোংলা বন্দরসহ সুন্দরবন উপকূলে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত বহাল রেখেছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে,টানা বৃষ্টি আর বৈরি আবহাওয়ার কারণে পশুর চ্যানেল ও বনের নদ-নদীতে ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিন দিন যাবত প্লাবিত হচ্ছে সুন্দরবনের সরকারি বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন পর্যটক স্পট এবং গোটা সুন্দরবন। করমজলের রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সুন্দরবনে ভ্রমনে আসা দর্শনার্থীদের।
বন বিভাগ বলছে, রক্ষিত সকল প্রাণীই নিরাপদে রয়েছে, তবে পানি আরও বৃদ্ধি পেলে কেন্দ্রে রাখা প্রাণীসহ বনের গহিনের বন্যপ্রাণীর ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
জানা যায়, পানি বৃদ্ধির কারণে বন্দরের বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য খালাস কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে নদী ও খাল পাড়ি দিয়ে চলাচল করছে কর্মজীবী সাধারণ মানুষ।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় মোংলা বন্দর ও সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে।
জানা গেছে,বনের করমজলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষনের জন্য ১২টি আধা পাকা সেড রয়েছে। যার মধ্যে বাচ্চাসহ ৩৬ টি হরিণ, ৯১ টি ছোট বড় কুমির ও বিলুপ্ত প্রজাতির ৪৩৬টি বাটাগুর বাস্কা কচ্ছপ রযেছে। এছাড়াও এর আশপাশে উম্মুক্তভাবে রয়েছে হরিণ, বানর, গুইসাপ ও আজগর সাপ, তক্ষকসহ নাম না জানা বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও হরেক রকমের পাখি রয়েছে। এদিকে নদীতে পানি আরও বৃদ্ধি পেলে আর জোয়ারের পানিতে বন্যপ্রাণী সম্ভাব্য চরম ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বন বিভাগ।
বনবিভাগ বলছে, গত শনিবার থেকে এবারের পূর্ণিমার গ্রহণের কারণে সুন্দরবনে এবার বেশি পানি হয়েছে। গত তিন দিন প্রায় চার ফুট পানিতে তলিয়েছে বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রসহ পুরো বন। এতে বেশি ক্ষতি হয়েছে যে সকল বন্যপ্রাণী গাছে উঠে বসবাস করতে পারেনা এবং মাটিতে ডিম পাড়ে সে সকল বন্যপ্রাণী বা তাদের বাচ্চাগুলো মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী বলে জানান তারা।
তারা আরও বলেন, বনে পানি ঢুকে যাওয়ায় উম্মুক্ত ভাবে থাকা বিভিন্ন বন্যপ্রাণীকে বনের মধ্যে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। করমজলেও এসে আশ্রয় নিয়েছে বনের হরিণ, বানর, শুকরসহ অন্যান্য প্রাণী। তবে এখন পর্যন্ত বনের কোথাও তেমন কোন প্রাণীর মৃত্যু বা ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে, দুর্যোগপুর্ণ আবহাওয়া আর ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সুন্দরবনে পর্যটক আসতে পারছেনা। ফলে গত তিন দিনে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষাধিক টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা-কচিখালী, দুবলা, নিলকমলসহ অন্যান্য পর্যটক স্পটগুলো।
তবে বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থীদের আসার আগ্রহ রয়েছে বলে জানায় কমরজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্টার হওলাদার আজাদ কবির।
অপরদিকে, বন্দরে অবস্থানরত বিভিন্ন পণ্য বোঝাই দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক জাহাজ পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। জাহাজের কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চললেও সার ও খাদ্যবাহী জাহাজের পণ্য খালাস-বোঝাই কাজ বৃষ্টির সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
বন্দরকেন্দ্রিক চলাচলরত বিভিন্ন নৌযান ও সুন্দরবন সংলগ্ন সাগর নদীতে মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। মোংলা বন্দরের ও পশুর নদীর দুই পাড়ে কয়েকশ’ পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ ও ট্যুরিস্ট বোর্ডও নিরাপদে ও শক্ত অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া বন্দর সংলগ্ন আশপাশের বিভিন্ন খালেও নৌযানগুলো নিরাপদে নোঙ্গর করে রয়েছে।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
রংপুরে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন মহানগর ও জেলা শাখার দ্বিবার্ষিক সম্মেলন
র্যাব রংপুরে ৩৫১.৩৮ গ্রাম হেরোইন সহ স্বামী-স্ত্রী আটক করেছে
দুর্নীতির ফাইল নষ্ট করতেই সচিবালয়ে আগুন: রংপুরে রিজভী