October 10, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, October 8th, 2025, 12:19 pm

নিয়ম ভেঙে ডাকসু ভবনে ৯ লাখ টাকায় এসি বসাচ্ছেন ভিসি

ফাইল ফটো

 

বাজেট ঘাটতির মধ্যেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে ৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ৯টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র (এসি) বসানোর কাজ চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অফিস ছাড়া অন্য কোথাও এসি স্থাপনের অনুমতি নেই। কিন্তু উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ ডাকসু নেতাদের চাপে এই অনুমোদন দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এই সিদ্ধান্তকে অনিয়ম বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “আমি ছুটিতে থাকাকালে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কোন নিয়মে বা এখতিয়ারে এটি করা হয়েছে, আমি জানি না। আমি থাকলে অবশ্যই প্রশ্ন তুলতাম—এটা হওয়া উচিত ছিল না।”

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে অনুমোদন না পেলেও ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম বারবার ফোন করে চাপ প্রয়োগ করেন। পরে উপাচার্য পুনরায় ফাইল এনে অনুমোদন দেন।

ঘাটতি বাজেটে চলা বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে গবেষণা কার্যক্রম, আবাসন ও শ্রেণিকক্ষ সংকট, এমনকি পার্টটাইম কর্মরত শিক্ষার্থীদের সম্মানি প্রদানে সমস্যার মুখে রয়েছে। তবুও রাজস্ব বাজেট থেকে এসি বসানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার সময় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বিদেশে ছিলেন। তার অনুপস্থিতিতে কোষাধ্যক্ষের রুটিন দায়িত্ব পালন করেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ। তিনি বলেন, “আমি ফাইলটি উপাচার্যের কাছে ফরওয়ার্ড করেছি, অনুমোদন করিনি। বিষয়টি আমার রুটিন দায়িত্বের অংশ ছিল। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সংকটের মধ্যে এমন ‘ফ্যান্সি’ কাজে অর্থ ব্যয় করা উচিত নয়।”

সরকারি ক্রয় বিধিমালা (পিপিআর) অনুযায়ী, কেবল দুর্লভ বা জরুরি পণ্যের ক্ষেত্রে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণ করা যায়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে উন্মুক্ত দরপত্র না দিয়ে সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় এসি কেনা হয়েছে, যা নিয়মবহির্ভূত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তা (বিদ্যুৎ) আমিনুল ইসলাম জানান, প্রশাসনের অনুমোদন পাওয়ার পরই তারা ডাকসু ভবনে ‘গ্রি’ কোম্পানির ৯টি এসি বসানোর কাজ শুরু করেছেন।

এসি স্থাপনের এই উদ্যোগ নতুন নয়। ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনের পর একইভাবে এসি লাগানোর চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু তখন প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। পরে তৎকালীন জিএস গোলাম রাব্বানী স্পন্সরের মাধ্যমে নিজের কক্ষে এসি লাগালে তা নিয়ে সমালোচনা হয় এবং শেষ পর্যন্ত এসি খুলে নেওয়া হয়।

বর্তমান ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এইচ এম মোশারফ হোসেন বলেন, “ডাকসু নেতারাই সরাসরি প্রশাসনের কাছে এসি চেয়েছেন। বিষয়টি আমার মাধ্যমে হয়নি।”

অন্যদিকে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, “আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব—নিয়ম অনুযায়ী এটি করা হয়েছে কি না, তা যাচাই করব।”

ভিপি আবু সাদিক কায়েম অবশ্য চাপ প্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ডাকসুর কক্ষগুলোতে বসার মতো পরিবেশ ছিল না। আমরা শুধু দ্রুত কাজের উপযোগী পরিবেশ তৈরির কথা বলেছি, এসি দেওয়ার জন্য আলাদা কোনো দাবি করিনি।”

এনএনবাংলা/