অনলাইন ডেস্ক :
লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে থাকলেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে দলে জায়গা হয়নি এনামুল হকের। তবে নির্বাচকদের নজরে ভালোভাবেই আছেন তিনি। আবদুর রাজ্জাক বললেন, দলের কম্বিনেশনের কারণে আপাতত বাইরে রাখা হয়েছে টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যানকে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সবশেষ দুই আসরেই ধারাবাহিক পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন এনামুল। ২০২২ সালের রেকর্ড ১ হাজার ১৩৮ রান করেন তিনি। এবার আবাহনী লিমিটেডের শিরোপা পুনরুদ্ধারের পথে বড় অবদান রাখেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৫৯.৫৭ গড়ে করেন আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৩৪ রান। সেঞ্চুরি ও ফিফটি করেন তিনটি করে। তবুও ওয়ানডে দলে এনামুলের জায়গা না পাওয়ার পেছনে নিজের মতামত তুলে ধরলেন রাজ্জাক। সোমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বললেন, নির্বাচকদের ভাবনার মধ্যেই আছেন এনামুল।
“বিজয় (এনামুল হক) ভালো খেলেছে। টিম কম্বিনেশনে হচ্ছে না। কোনো দ্বিধা নেই সে ভালো খেলছে, খুব ভালো ফর্মে আছে। সামনে প্রচুর খেলা আছে। বিজয় হিসাবের বাইরে চলে যায়নি। বিজয় হিসাবের মধ্যেই আছে।” আফগানিস্তানের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজের দল থেকে জাকের আলিকে রাখা হয়নি এবার। ওই সিরিজে কোনো ম্যাচ না খেলেই বাদ পড়েছেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। এর পেছনের কারণও ব্যাখ্যা করলেন রাজ্জাক। “দল নিয়ে আহামরি কিছু বলার নেই। জাকের আলিকে সিস্টেমের মধ্যে রাখার জন্য এনেছিলাম। ওই সময় খেলার সুযোগ কম ছিল। আমরা জাকেরকে চিন্তা করছি সাদা বলেও ভালো করবে, এ মুহূর্তে ভালো ফর্মে আছে। বেশ কিছু দিন ধরে ভালো খেলছে। চেষ্টা করছি সাদা বলের দলেও ওকে অন্তর্ভুক্ত করার।”
“যেসব খেলোয়াড় ভালো খেলছে, ফর্মে আছে ওদের রাখার চেষ্টা আমরা করব। যেকোনো সময় কাজে আসতে পারে। এবার যেমন টেস্টের আগে তামিম হুট করে চোটে পড়ল। আমাদের রেডি না থাকলে কঠিন ব্যাপার হতো। ৩-৪ বছর আগে বেশ সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম, ব্যাকআপ ওরকম প্রস্তুত থাকত না। যত বেশি ব্যাকআপ রাখা যাবে তত ভালো। নতুন যে আসবে সে যেন তৈরি থাকে। এখন দলে যারা আছে, যে যেই সংস্করণে ক্যাপেবল তাকে সেই সংস্করণে সুযোগ দেওয়া হবে। যখন যেমন টিম কম্বিনেশন দরকার সেরকম দলই করা হয়। কাউকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়নি।” প্রিমিয়ার লিগের সবশেষ আসরে আলো ছড়িয়ে ১৬ মাস পর ওয়ানডে দলে ফিরেছেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। শিরোপাজয়ী আবাহনীর হয়ে ১৬ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরির সঙ্গে ১০টি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে ৭১.৬৯ গড়ে আসরের সর্বোচ্চ ৯৩২ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার। স্ট্রাইক রেটও বেশ ভালো, ৯১.৬৪! ২০২২ সালের প্রিমিয়ার লিগের পারফরম্যান্সও খারাপ ছিল না নাঈমের।
১২ ম্যাচে ৩৮.১৬ ম্যাচে করেন ৪৫৮ রান। দল নির্বাচনে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে প্রিমিয়ার লিগের পারফরম্যান্স, বললেন রাজ্জাক। তবে ওয়ানডে দলে খুব বেশি পরিবর্তনের সুযোগ দেখেন না তিনি। এসব তরুণ ক্রিকেটারদের রাখা হচ্ছে ব্যাকআপ হিসেবে। “ওরা তরুণ খেলোয়াড়, ওরাই খেলবে সামনে। অনেকদিন ধরে যেন খেলতে পারে। আমাদের ওয়ানডে দলে খুব বেশি পরিবর্তনের সুযোগ এ মুহূর্তে নেই। নাঈম প্রিমিয়ার লিগে ভালো করেছে। ওর ব্যাপারও ওরকম। যেহেতু পারফর্ম করেছে, কোনো সমস্যা হলে দল যেন উপকৃত হয়।” “অবশ্যই প্রিমিয়ার লিগের পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হয়েছে। নাঈম কিন্তু আমাদের পাইপলাইনের খেলোয়াড়, বাইরের না।” আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ড সফরে ওয়ানডে অভিষেক হয় মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির। একটি ম্যাচ খেলে ব্যাটিংয়ে ৮ রান করার পর বল হাতে ৮ ওভারে ৬৮ রান খরচায় উইকেটশূন্য ছিলেন তরুণ এই অলরাউন্ডার। ওই ম্যাচ পরই এবার বাদ পড়ে গেলেন তিনি স্কোয়াড থেকেই।
মৃত্যুঞ্জয়ের মধ্যে দারুণ সম্ভাবনা দেখেন রাজ্জাক। তবে পরিণত হতে তার আরও সময় লাগবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের স্পিন গ্রেট। “ভালো অলরাউন্ডার, খুবই ভালো। খুব ভালো সম্ভাবনা আছে। এখনই জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুত তা বলব না। তবে ওর ভালো সম্ভাবনা আছে।” “সময় লাগবে। এখনও ও পুরোপুরি তৈরি না। আমাদের এই একটা জায়গা আছে। লেগ স্পিনারেরও জায়গা আছে। তবে ভালো তো হতে হবে, যে জায়গাই হোক। অনেক খেলোয়াড় থাকে যাদের আরেকটু সময় লাগবে। তাদের ঐ সময় দেওয়া হবে। তার মানে এই না খেলিয়ে খেলিয়ে সময় দেওয়া।” ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ধারাবাহিক বাংলাদেশ। অভিজ্ঞ ও তরুণ ক্রিকেটারের মিশেলে এই সংস্করণের দল একরকম সেট বললেই চলে। পরিবর্তনের সুযোগ খুব একটা নেই। তাই এশিয়া কাপের দল আর বিশ্বকাপের দল একই থাকার সম্ভাবনাই বেশি বললেন রাজ্জাক। “একদিক থেকে ঠিক। তবে এটা সভাপতির চেয়ে মিডিয়া থেকে বেশি দেখেছি। প্রায় একই হয় তবে কিছু ব্যাপার তো উন্মুক্ত রাখাই লাগে। পারফরম্যান্স, সুস্থতা, চোটের ব্যাপার আছে। সেক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আসতেই পারে। যদি দেখা যায় সুন্দরভাবে সেট তাহলে তো… তবে এটা অফিসিয়ালি বলা খুবই কঠিন।” আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে চোটের কারণে খেলতে পারেননি অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। আসছে ওয়ানডে সিরিজের দলে আছেন দুইজনই।
এরইমধ্যে অনুশীলনও শুরু করে দিয়েছেন তারা। আফগানদের সঙ্গে ওয়ানডের লড়াইয়ে সুস্থ অবস্থায় দলের দুই তারকাকে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী রাজ্জাক। “সাকিব ভালো রিকভার করেছে। তামিম গত সেশন থেকে বেশ ভালো করছে, প্র্যাকটিস শুরু করেছে, ব্যাটিং করছে। আশা করা যাচ্ছে পরের সিরিজেই ওদের দুজনকে পাব। তারপরও এটা তো মেডিকেল টিমের ব্যাপার। এটা নিয়ে কিছু বলে ফেলা কঠিন। আশা করি দুজনকেই পাব।” চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে আগামী ৫ জুলাই শুরু হবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ। একই মাঠে পরের দুই ম্যাচ ৮ ও ১১ জুলাই। এরপর দুই দলের টি-টোয়েন্টি দুটি হবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে, আগামী ১৪ ও ১৬ জুলাই।
আরও পড়ুন
একটা ধাক্কায় কোহলির ৪ লাখ টাকা জরিমানা
মাশরাফি–সাকিব কি খেলবেন বিপিএলে?
মিমো-নিলয়দের প্যাডসর্বস্ব দল হারালো বিমানবাহিনীকে