July 31, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, July 30th, 2025, 4:54 pm

নির্বাচনি মাঠে পোস্টার বহাল রাখা এবং জনসভা-পথসভা নিষিদ্ধের দাবি

নির্বাচন মাঠে দীর্ঘদিন পোস্টারের ব্যবহার হয়ে আসছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পোস্টারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু, নির্বাচনে পোস্টার ব্যবহার করার পক্ষে মত দিয়েছে জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)।

অন্যদিকে জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় এমন সড়ক, মহাসড়ক ও জনপথে জনসভা কিংবা পথসভা করতে পারবেন না প্রার্থী বা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি। নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০২৫-এর খসড়া মতামতে এ প্রস্তাব যুক্ত করার সুপারিশ করেছে বিএনপি।

এ ছাড়া নির্বাচনি প্রচারে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রার্থীদের প্রচার শুরুর আগে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করার বিধানটি আচরণবিধিতে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করেছে টিআইবি।

আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার খসড়া প্রকাশের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংস্থা ও নাগরিকদের কাছ থেকে একগুচ্ছ সুপারিশ পেয়েছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনে পোস্টার ব্যবহার করা যাবে না- ইসির এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন এনডিএমের মহাসচিব মোমিনুল আমিন। তিনি তার সুপারিশ প্রস্তাবে বলেছেন, পোস্টার লাগানোর ক্ষেত্রে আচরণবিধি থাকতে পারে কিন্তু কোনোভাবেই পোস্টারবিহীন নির্বাচন কাম্য নয়। এ ছাড়া প্রস্তাবিত পিভিসি ব্যানার ব্যবহার না করা-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছেন তিনি।

নির্বাচনি প্রচারে শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে প্রার্থীদের প্রচার শুরুর আগে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করার বিধানটি আচরণবিধিতে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। পাশাপাশি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে ও পরবর্তীতে প্রতি বছর নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আয় ও সম্পদের হিসাব নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেওয়ার সুপারিশ করেছেন তিনি। তা এক মাসের মধ্যে ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার বিষয়টি আচরণবিধিকে যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

 

সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান মতামতে জানিয়েছেন, কোনো প্রার্থী তার নির্বাচনি এলাকায় কোনো ধরনের আর্থিক বা বৈষয়িক লাভের নিমিত্তে কোনো ভোটার বা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি কিংবা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রতিশ্রুতি দিতে পারবেন না। পরিবেশদূষণ রোধে ব্যানারের পাশাপাশি ডিজিটাল শব্দ যুক্ত করার পক্ষে মতামত দিয়েছেন ইসির উপসচিব মো. মুনীর হোসাইন খান।

নির্বাচনে প্রার্থীদের রাস্তায় মিছিল, মাইক বাজানো, সভা-সমাবেশ, মশাল মিছিল, মোটর শোভাযাত্রা আইন করে বন্ধের সুপারিশ করেন কৃষিবিদ লায়ন মো. কামাল উদ্দিন।

 

রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালায় বিএনপি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও এনডিএমসহ ছয়টি রাজনৈতিক দল মতামত দেয়। তবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, তরুণ প্রজন্মের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জাতীয় পার্টি (জাপা), গণঅধিকার পরিষদ ও নাগরিক ঐক্যসহসহ নিবন্ধিত বেশিরভাগ দল অংশ নেয়নি। এ ছাড়া দুটি এনজিও, পাঁচজন আমলা, একজন প্রবাসীসহ ৯ জন সাধারণ মানুষ ইসির খসড়ায় মতামত দেয়।

একইভাবে দুই এনজিও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ২০টি সুপারিশ ও ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইইডি) নির্বাহী পরিচালক নুমান আহম্মদ খান পাঁচটি, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান ১৩টি, সাবেক অতিরিক্ত সচিব একেএম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী একটি, ইসির উপসচিব মো. মুনীর হোসাইন খান ছয়টি, কবি-সাহিত্যিক ও কৃষিবিদ লায়ন মো. কামাল উদ্দিন একটিসহ আরও অনেকে মতামত জানান।

জনসংযোগসংক্রান্ত প্রস্তাবে সংসদ সদস্যের পরিবর্তে জনপ্রতিনিধি ও নির্বাচনি এলাকার ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ, সাক্ষাৎ বা পরিচিত হওয়ার সঙ্গে প্রচারমূলক কার্যক্রম সন্নিবেশ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগেুলোর সঙ্গে সংলাপ ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা ও নির্বাচনি প্রচারের জন্য প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগের জন্য অনধিক তিনটি জনসভা করার বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

আচরণবিধি থেকে যান্ত্রিক ও জনসভা শব্দ দুটি বাদ দেওয়া ও একটি দলের শীর্ষ দুজনের (দলীয় প্রধান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান, মহাসচিব) হেলিকপ্টার বা অন্য কোনো আকাশযান ব্যবহারের সুযোগ রাখার প্রস্তাব করেছে বিএনপি।

অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করে নির্বাচনি প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না অন্তর্ভুক্ত করা ও নির্বাচনি প্রচারে ১৮ বছরের নিচে কেউ অংশ নিতে পারবে না তা যুক্ত করা, নির্বাচনে বিলবোর্ডের ব্যবহার পুনর্বিবেচনার সুপারিশ করেছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট মেজর (অব.) আবদুল মান্নান।

এনডিএমের মহাসচিব মোমিনুল আমিন নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনায় সংসদীয় আসনের নির্দিষ্ট স্থানে প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীর ছবি সংবলিত বিলবোর্ড স্থাপনের সুপারিশ করেছেন।

বাংলাদেশ রক্ষণশীল দলের মহাসচিব খায়েজ আহম্মেদ ভূঁইয়া সুপারিশ করেছেন— কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তার মনোনীতি প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তিকে খারাপ মন্তব্য করতে পারবে না। নির্বাচনের দিন ভোটাররা ভয়ভীতিহীনভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে যাতে নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারেন সেটা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছেন বিএনএফের এসএম আবুল কালাম আজাদ।

এ ছাড়া নতুন প্রস্তাবে নির্বাচনি ব্যয়সীমা ৪০ লাখ টাকায় উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। ১০ হাজার টাকার বেশি ব্যয় হলে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করার সুপারিশ করা হয়েছে।