অনলাইন ডেস্ক :
অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ, প্রতিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে জোর দিচ্ছে চীন। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পরিকল্পনা মাফিক বন্যাপ্রাণীদের জন্য অভয়ারণ্য তৈরি করা হয়েছে। এতে একদিকে পরিবেশ সংরক্ষিত হচ্ছে, প্রতিবেশের ভারসাম্যও রক্ষিত হচ্ছে। চীন ইউনান প্রদেশের এমন একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বন্য প্রাণী বিশেষ করে হাতির জন্য নিরাপদ বাসস্থান গড়ে তোলা হয়েছে। বন্য হাতির বাসস্থান ঠিক রেখে গড়ে তোলা হয়েছে পার্কও। নিজেদের এলাকায় ঘোরাঘুরি আর সংসার পাতার সুযোগ পাচ্ছে শিসুয়াংবান্না ওয়াইল্ড এলিফ্যান্ট ভ্যালির প্রাণীরা। সম্প্রতি চীন সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যম প্রতিনিধি দল ইউনানের শিসুয়াংবান্না ওয়াইল্ড এলিফ্যান্ট ভ্যালি পরিদর্শন করে। সেখানেই চীন সরকারের গৃহিত নানা পদক্ষেপ সম্পর্কে জানা যায়।
প্রতিদিন এই ভ্যালিতে সমগ্র চীন এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে যান। ছিমছাম সাজানো পরিবেশবান্ধব এই পার্ক বিনোদনেরও একটি আকর্ষণীয় স্থান। এই পার্কের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে বন্য হাতি। সেখানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে থাকে এগুলো। আবার চাইলে নিজের এলাকা ছেড়ে বাইরেও যেতে পারে। অভয়ারণ্য থেকে বেরিয়ে লোকালয়ে গিয়ে মানুষ বা ফসলের ক্ষতি করলে ক্ষতিপূরণের জন্য রয়েছে বিমার রক্ষাকবচ। প্রতিটি হাতির নামে বিমা কোম্পানিকে প্রিমিয়াম পরিশোধ করে চীন সরকার। আর মানুষের ক্ষতির হিসেবে পরিশোধ করা হয় বিমার অর্থ। শিসুয়াংবান্না ওয়াইল্ড এলিফ্যান্ট ভ্যালির কর্মীরা জানান, হাতির আক্রমণে মারা গেলে ৭ লাখ ইউয়ান (এক কোটি টাকার বেশি) পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। ফসলের ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ মেলে হিসাব অনুযায়ী। এই অভয়ারণ্যে প্রায় তিনশ এশীয় হাতি রয়েছে। চিরহরিৎ বনের ভেতর দিয়ে হাতি দেখার জন্য রয়েছে প্রায় ৪ হাজার মিটার দীর্ঘ কাঠের তৈরি হাঁটার পথ।
শিসুয়াংবান্না দাই অটোনোমাস প্রিফেকচারের প্রধান শহর জিনহং থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থান এই হাতি উপত্যকার। অভয়ারন্যের বিস্তৃতি দুই লাখ ৪২ হাজার ৫০০ হেক্টর, যা শিসুয়াংবান্নার ভূমির ১২ শতাংশ। চীনা গণমাধ্যম সিজিটিএনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাণীদের জন্য চীনের সর্বপ্রথম থিম পার্ক এই শিসুয়াংবান্না ওয়াইল্ড এলিফ্যান্ট ভ্যালি। সেখানে খুব কাছ থেকে নিরাপদে এশীয় হাতি দেখা যায়। ওয়াইল্ড এলিফ্যান্ট ভ্যালির কর্মকর্তারা জানান, ২০১০ সালে বন্য প্রাণীর সরকারি দায়বদ্ধতা থেকে পরীক্ষামূলক বিমা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। পরে বাণিজ্যিক মডেল প্রবর্তনের মাধ্যমে ২০১৪ সালে পুরো প্রদেশকে বিমা সুবিধার আওতায় আনা হয়।
সরকারি হিসাব বলছে, ২০২১ সালে এই হাতি বিমার পরিমাণ পৌঁছায় ৬৫ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন ইউয়ানে। এশীয় হাতির ক্ষয়ক্ষতির কারণে ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৭ কোটি ৩০ লাখ ইউয়ান ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করেছে ইউনান প্রদেশ। এভাবে বন্য প্রাণীর সুরক্ষা এবং মানুষের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা সমানতালে করার কথা তুলে ধরে ইউনান প্রদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক কার্যালয়ের উপ-মহাপরিচালক মা জুয়োশিন বলেন, এই বন্য হাতির অভয়ারণ্য আমাদেরকে দেখাচ্ছে কীভাবে উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করা যায়।
আরও পড়ুন
উড়োজাহাজ বিধ্বস্তে ৩৮ জনের মৃত্যু, আজারবাইজানে রাষ্ট্রীয় শোক পালন
বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষ বাড়ছে, কমছে ধনী দেশের সাহায্য
গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন চলছেই, একদিনে নিহত ৫৮