January 30, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, January 28th, 2025, 2:38 pm

পরীমনির জামিনদার কে এই তরুণ?

পরীমনি ও তার জামিনদার শেখ সাদী

 

আদালত গতকাল এক হাজার টাকা মুচলেকায় পরীমনির জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন। জামিন মঞ্জুরের আদেশের পর পরীমনির মুখে ছিল হাসি। বিচারক এজলাস কক্ষ ত্যাগ করার পর পরীমনি তাঁর আইনজীবী ও তাঁর সঙ্গে যাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে হাসিমুখে গল্প করতে থাকেন। আদালতকক্ষে দেখা যায়, ভক্তদের সঙ্গেও হাসিমুখে কথা বলছেন।

এরপর ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০টা ২৭ মিনিট। চিত্রনায়িকা পরীমনি এজলাসের ঠিক পেছনের বেঞ্চে বসা ছিলেন। তখন পরীমনির আইনজীবীরা জামিননামা লেখায় ব্যস্ত। পাঁচ মিনিটের মধ্যে জামিননামার প্রয়োজনীয় তথ্য লেখার পর জামিনদারের স্বাক্ষরের জন্য কাগজটি তরুণ গায়ক শেখ সাদীর হাতে যায়। তখন পরীমনি ঠিক তাঁর ডান পাশেই বসা ছিলেন। এ সময় শেখ সাদী জামিননামায় নিজের নাম ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা লেখেন।

পরীমনির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আদালতে পরীমনি আসতে না পারায় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে পরীমনিকে খবরটি জানান।’

নীলাঞ্জনা রিফাত বলেন, ‘আদালতের জামিন আদেশের পর পরীমনির জামিননামা লেখা হয়। আমি জামিনদার হয়েছি। আরেকজন জামিনদার হয়েছেন শেখ সাদী। জামিননামাটি আদালতে জমাও দিয়েছি।’

জামিননামা জমা দেওয়ার পর আরও ১০ মিনিট পরীমনি ও শেখ সাদী পাশাপাশি বসা ছিলেন। তখন পরীমনিকে ঘিরে একদল আইনজীবী ও উৎসুক জনতা ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় আদালতের ওই এজলাস কক্ষের সামনে পরীমনিকে দেখার জন্য লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। তখন ঢাকা জেলা পুলিশের আদালত পরিদর্শক আখতার হোসেন উৎসুক জনতাকে আদালতের সামনে থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তখন পরীমনি আদালতকক্ষের ভেতরে তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে হাসিমুখে গল্প করতে থাকেন। কোনো কোনো আইনজীবী তাঁর ছবিও তোলেন। ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সাততলার এজলাস কক্ষ থেকে তাঁকে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে লিফটের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সাততলা থেকে লিফট নামতে সময় নেয় প্রায় ১০ মিনিট। পরীমনি যখন আদালত ভবনের নিচতলায় আসেন, তখন সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রচণ্ড ভিড় ছিল। এই ভিড় ঠেলে ঢাকার সিজেএম আদালতের প্রধান ফটকের সামনে রাখা ডায়াসের কাছে যান। তখন পরীমনি হাসিমুখে কথা বলতে শুরু করেন। কিন্তু উৎসুক জনতার চিৎকার–চেঁচামেচিতে পরীমনির কথা গণমাধ্যমকর্মীরা ঠিকমতো শুনতে পারছিল না। একপর্যায়ে পরীমনি বিরক্ত হন। তিনি বলতে শুরু করেন, যদি চিৎকার–চেঁচামেচি করেন, তাহলে আমি কথা বলব না। তখন পরীমনি হাসিমুখে বলতে থাকেন, আমি আপনাদের এত ভালোবাসা পেয়েছি…। পরীমনি গণমাধ্যমকর্মীদের কথা বলা শেষ করে, সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কারে চড়ে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।

ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদের দায়ের করা মারধর ও হত্যাচেষ্টার মামলায় ঢাকার সিজেএম আদালত গত রবিবার পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। এদিকে ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদের বিরুদ্ধে পরীমনির দায়ের করা ধর্ষণচেষ্টা মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৯–এ বিচারাধীন। এই মামলায় পরীমনির সাক্ষ্য গ্রহণ চলমান।

কে এই জামিনদার শেখ সাদী?

তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় গায়ক শেখ সাদী। আদালতে শুরু থেকে পরীমনির সঙ্গে ছিলেন তিনি।

শেখ সাদী জানান, একই অঙ্গনে দীর্ঘদিন কাজ করার কারণে পরীমনির সঙ্গে বেশ আগেই পরিচয় হয়েছিল। তখন থেকে পেশাগত বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে নিয়মিত কথাবার্তা হয়। তরুণ গায়ক শেখ সাদীর বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গান রয়েছে। ইউটিউবে এসব গানের ভিউ কোটি পার হয়েছে।

তিন বছর আগে ‘গুণিন’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় চিত্রনায়িকা পরীমনির সঙ্গে নায়ক শরিফুল রাজের পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে প্রণয়। এরপর এই দম্পতির একটি ছেলেসন্তান হয়। পরে তাঁদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। প্রায় দেড় বছর আগে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। পরীমনি তাঁর সন্তান ও কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত আছেন। অন্যদিকে রাজও তাঁর মতো করে ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। লম্বা সময় আলাদা থাকার বিষয় পরীমনি ও রাজের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

পরীমনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একটা চড়াই–উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে আমার জীবন চলছে। বিপদের সময় যে পাশে থাকেন, সে জীবনের জন্য আশীর্বাদ। আমি এই জীবনে অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী পেয়েছি, এখনো আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছে। আমার সুখ-দুঃখের গল্পগুলো তাঁদের সঙ্গে শেয়ার করি। এতে আমি মানসিকভাবে ভালো থাকি।’

আর শেখ সাদী বলেন, ‘আমিও ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি অনেক দিন হলো। পরীমনি অনেক ইতিবাচক গুণ রয়েছে। বিপদ–আপদে মানুষের পাশে থাকেন। আমি তাঁর মঙ্গল কামনা করি সব সময়।’

পরীমনির ফেসবুক পেজে দেখা যায়, চার দিন আগে শেখ সাদীর একটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। তাতে পরীমনি লিখেছেন, ‘…পৃথিবীকে জানতে দিয়ো, তুমি এই পৃথিবীর আলো…।’