January 4, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, January 1st, 2025, 8:26 pm

পাঠ্যবই ছাপাটা এবার যুদ্ধের মতো, কবে সব দিতে পারবো জানি না

শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পাঠ্যবই ছাপার কাজটা যুদ্ধের মতো হয়েছে জানিয়ে ঠিক কবে নাগাদ সব বই ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া যাবে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে অপারগতা জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

তিনি বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান বলছেন ১৫ জানুয়ারি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলছেন ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই দেওয়া যাবে। আমি কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো কমিটমেন্ট দেবো না। পাঠ্যবই কবে ছাপা শেষ হবে, তা নিয়ে আমি কিছু বলবো না। বই ছাপার প্রক্রিয়াটা সম্পর্কে কিছু কথা বলবো। আমি মনে করি, পাঠ্যবই ছাপার কাজটা এবার শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের মতো হয়েছে।’

বুধবার (১ জানুয়ারি) ‘পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন ও মোড়ক উন্মোচন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘প্রথম সমস্যাটা হলো- আমরা বিদেশি বই ছাপাবো না। তারপর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে অনিবার্য কারণে। তাতে বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। যখন কাজ শুরু করা হয়েছিল, সেটা অনেক দেরিতে হয়েছে। অনেকগুলো বই পরিমার্জন করতে হয়েছে। রাজনীতিতে নিরপেক্ষ বলে কিছু থাকে না, দলীয় রাজনীতি নিরপেক্ষ সবকিছু যেন বইয়ে থাকে, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘শিশুদের কাছে বই যাবে, সেটা ভালো কাগজে ছাপা না হলে তো হয় না। সেজন্য উন্নতমানের ছাপা, উন্নত মানের কাগজ ও মলাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া এনসিটিবিতে আগে যারা কাজ করেছেন, তাদের অনেককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাদের বসানো হয়েছে, তারা অভিজ্ঞ। কিন্তু মুদ্রণ শিল্প সমিতির যে নেতা, তাদের সঙ্গে কীভাবে বোঝাপড়াটা করতে হয়, এটা তাদের অভিজ্ঞতায় নেই। সেটা করতে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমাকেও এর মধ্যে ঢুকতে হয়েছে।’

পাঠ্যবই নিয়ে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘গল্পের একেবারে শেষে গিয়ে ছাড়া যেমন ষড়যন্ত্রকারী কে তা বোঝা যায় না, এখানেও তেমন। সেটা সরকারের কেউ হোক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হোক, এনসিটিবির হোক, মজুতদার হোক, সিন্ডিকেট হোক। মানে যে কেউ হতে পারে। তবে এখনই আমি কাউকে দোষারোপ করছি না। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী দিনে আমরা একচেটিয়া ব্যবসা কমিয়ে আনবো। এটা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকবে।’

বই দেরিতে দিলেও পাতা ছিঁড়বে না
এবার পাঠ্যবই দেরিতে দেওয়া হলেও মান ভালো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বই দিতে এবার বেশ খানিকটা দেরি হচ্ছে, সেজন্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। এটা সত্যি দুঃখজনক।’

অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘তবে একটা বিষয় আমরা বলতে চাই, বই একটু দেরিতে পেলেও সেটা ভালো বই পাবেন। বছরের মাঝামাঝি সময়ে বইয়ের পাতা ছিঁড়ে যাবে না। তেমন বই আমরা দিচ্ছি না। এটা নিশ্চয় ভালো দিক।’

এগিয়ে যেতেই পেছনের শিক্ষাক্রমে যাওয়া
নতুন যে শিক্ষাক্রম আওয়ামী লীগ সরকার করেছিল, তা বাস্তবায়নযোগ্য নয় জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেকে সমালোচনা করছেন কেন পেছনের শিক্ষাক্রমে ফিরে গেলাম আমরা। আমি মনে করি, যে শিক্ষাক্রম করা হয়েছিল নতুন করে, সেটাতে থাকলে শিক্ষার্থীরা আরও পশ্চাৎপদে যাওয়া হতো।’

তিনি বলেন, ‘দুই বছর এ শিক্ষাক্রম চালিয়ে গেলে সেখান থেকে ফেরার উপায় ছিল না। সেটা সহজও হতো না। সেজন্য আমরা সাময়িকভাবে পেছনের শিক্ষাক্রমে গেছি। এটা আবার এগিয়ে নেওয়ার কাজ করা হবে। এবার কিছু পরিমার্জন হয়েছে। আগামীতে আরও পরিমার্জন করা হবে। যাতে শিক্ষাক্রমে ধারাবাহিকতার কোনো ঘাটতি না থাকে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম।

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার শিক্ষাবিষয়ক বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান প্রমুখ।