September 4, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, September 4th, 2025, 2:18 pm

পাথর চাপায় সিলেটে রায়হান হত্যা মামলা: আত্মসমর্পন করেনি আকবর,দেশ ছাড়ার গুঞ্জন

সিলেট অফিস :

কোম্পানিগন্জের আলোচিত সাদা পাথর লুটের ঘটনা নিয়ে যখন সারা দেশের সকল মিডিয়া ব্যস্ত,টিক তখনই সিলেটের পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি পুলিশের বহিস্কৃত উপ পরিদর্শক

(এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। বিশেষত আদালতের নির্দেশনা মেনে নির্ধারিত সময়ে আত্মসমর্পন না করায় এ গুঞ্জন আরও জোরালো হয়েছে।

উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরদিনই গত ১১ আগস্ট সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পান আকবর। এরপর ১৪ আগস্ট হাইকোর্টের চেম্বার জজ আদালতে তার জামিন স্থগিত করে ১০ দিনের মধ্যে নিম্ন আদালতে এসে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হলেও তিনি এসে হাজির হননি।

এছাড়া আজ বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সিলেট মহানগর জজ আদালতে বিচারাধীন থাকা এ মামলার ধার্য তারিখ ছিলো। কিন্তু আজও তিনি আদালতে হাজির হননি বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌশলী (পিপি) আশিক উদ্দিন।

তিনি জানান, আকবরের অনুপস্থিতিতেই আজ দুপুরে এ মামলার শুনানি শেষ হয়।

ফলে আকবর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন এমন শঙ্কা আরও জোরালো হয়েছে।

অবশ্য আকবরের জামিনের খবর জানাজানির পরই রাহয়ানের মা সালমা বেগম আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন- আকবর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন।

দু’দিন আগে সিলেটে ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশ কনফারেন্সেও বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। পলাতক আকবর হোসেনকে খুঁজে বের করে আইনের হাতে সোপর্দ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে ওই বৈঠকে।

এ ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনেই তার মৃত্যু হয়েছিল।

এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে। তারা ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আকবরকে ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

২০২১ সালের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পিবিআই। অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে (৩২) প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। অন্যরা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক আশেক এলাহী (৪৩), কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ (৩২), টিটু চন্দ্র দাস (৩৮), সাময়িক বরখাস্ত এসআই মো. হাসান উদ্দিন (৩২) ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান (৩২)।

কারাগারে থাকা অবস্থায় গত মাসে (১০ আগস্ট) উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান আকবর। আর জামিনের আদেশের পরদিনই সে কারাগার থেকে বেরিয়ে যায়। আর আকবর জামিন পাওয়ায় প্রতিবাদে সরব হন নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম।

পরে ১৪ আগস্ট চেম্বার জজ আদালতে তার জামিন স্থগিত করা হয় এবং পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু আকবর আদালতে হাজির হননি।

রায়হান হত্যা মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার ফজল চৌধুরী মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছেন, হাইকোর্টের চেম্বার জজ আদালত সাবেক এসআই আকবরের জামিন বাতিল করে ১০ দিনের মধ্যে নিম্নআদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আত্মসমর্পণের সময় পেরিয়ে গেলেও সে আদালতে এসে হাজির হয়নি। ফলে সে এখন পলাতক।

সিলেট জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন জানান, তিনি বলেন, যেহেতু উচ্চ আদালতের কথামতো আকবর নিম্নআদালতে আসেনি, সুতরাং এখন পলাতক হয়ে গেছেন।

এসআই আকবর ছাড়া এ মামলায় আরও ৩ আসামি আগে জামিন পেয়েছিলেন। এর মধ্যে সাবেক এসআই হাসান উদ্দিন শুরু থেকেই পলাতক। বন্দরবাজার ফাঁড়ির সাবেক কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশীদ জামিন পাওয়ার পর এক তারিখ এসে আদালতে হাজিরা দিয়েছিলেন।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, গত তারিখে তারা আদালতে না এসে সময় নিয়েছেন। বর্তমানে কারান্তরীণ রয়েছে মামলার অপর আসামি সাবেক এএসআই আশেক এলাহী। এ ছাড়া মামলার ৬ নম্বর আসামি কোম্পানীগঞ্জের সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। তিনি ফ্রান্সে বসবাস করছেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।