খুলনা, প্রতিনিধি:
প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা সড়ক বিভাগের অধীনে কয়রা-নোয়াবেকি-শ্যামনগর মহাসড়কে সড়কের নির্মাণকাজে নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতি ও কাজ না করেই ২০ কোটি টাকা আত্নসাত করার অভিযোগ উঠেছে।
খুলনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের আওতায় কয়রা-নোয়াবেকি-শ্যামনগর জেলা মহাসড়কের ০ থেকে ৭ কিলোমিটার অংশ পুনর্নির্মাণের জন্য ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর দরপত্র আহ্বান করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহাবুব ব্রাদার্সের নামে কাজের ওয়ার্কওর্ডার হলেও শেখ জুয়েলের বন্ধু খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তসলিম আহমেদ আশা ও সেচ্ছাসেবক লীগের খুলনা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক নাসিম কাজ বাগিয়ে নেয়।
গত বছরের ২৩ এপ্রিল আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য রশীদুজ্জামান মোড়ল কাজটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩১ ডিসেম্বর তবে বিশেষ সূত্রে জানাযায় ফাইনাল বিল কম্পলিট তবে কাজ এখনো শেষ হয়নি। ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতা তসলিম আহমেদ আশা ও নাসিম আত্মগোপনে থাকায় সালাম নামের একব্যক্তি দায়সারা ভাবে কাজ করছেন।
সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, সড়কের কাজে নিম্নমাণের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার ও পরিমাণে কম দেয়া হয়েছে। সিডিউল অনুযায়ী কোনো কাজ হয়নি। শেষ না হতেই দুই পাশ ধসে পড়ছে। কয়েক স্থানে দেবে গেছে কার্পেটিং। রাস্তা কার্পেটিংয়ের পরদিনই রাস্তার বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় রাস্তা নিয়ে কয়েক গ্রামের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। সেখানে সড়ক ও জনপদ বিভাগ এর তত্ত্বাবধানে রাস্তার কাজ চলছে তবে নির্মাণকাজ শেষের আগেই এমন পরিস্থিতির কারণে সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সদরের মধুর মোড় থেকে বেদকাশি দীঘিরপাড় পর্যন্ত সড়কের নির্মাণকাজের প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, কিন্তু গেলো বছরের ৩১ ডিসেম্বর কাজের ফাইনাল বিল প্রদান করা হয়েছে। এর পরের ১ কিলোমিটার অংশে বালি ভরাটের কাজ চলছে। তবে ব্রিজ/ পোল এর ঢালায় এ দেখা যায় সম্পূর্ণ লবনাক্ত পানি দিয়ে ঢালায় কাজ চলছে এবং পাথরের ভিতরে সম্পূর্ণ ডাস্ট এর মিশ্রণ দেওয়া। এর মধ্যে কয়েক স্থানে সড়কের মাঝে বিদ্যুতের খুঁটি ও দোকানপাট রেখে কাজ চলছে। এ ছাড়া পুরাতন প্যালাসাইডিং রেখে দেওয়া হয়েছে বেশিরভাগ জায়গায়। কয়েক স্থানে মাটি ভরাট করায় সড়কের পাশের প্যালাসাইডিং হেলে পড়তে দেখা গেছে। ২ নম্বর কয়রা কালভার্টের পর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় সড়কের দুই পাশে দেবে গিয়ে এবড়োখেবড়ো হয়ে পড়েছে। সড়কের তলায় মাটি ও বালুর মিশ্রণ বেশি ব্যবহার করেছেন। প্রজেক্টের বালি ভরাট করার পর লোকাল পর্যায়ে বিভিন্ন জায়গায় সেই বালু বিক্রয় করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ডিপার্টমেন্ট থেকে সার্ভেয়ার দ্বারা যে চিহ্ন দেওয়া লেভেল / রাস্তার উচ্চতা সঠিক নেই। স্থানীয়দের জায়গা থেকে মাটি তুললেও তারা সঠিক মূল্য পায় নাই।
স্থানীয় বাসিন্দা রহিম বলেন, সড়কটি পুনর্নির্মাণের কথা থাকলেও সে নির্দেশনা মানা হয়নি। পুরাতন সড়কের উপরেই নতুন করে কার্পেটিং হয়েছে। কিছু স্থানে পুরোনো কার্পেটিং তুলে ফেলা হলেও নিচের বালু ও খোয়া সরানো হয়নি। তা ছাড়া বিটুমিন, পাথরের মান ও মিশ্রণ ভালো না হওয়ায় সড়কটি বেশিদিন টিকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়াও নাম প্রকাশ না করা শর্তে জৈনিক ব্যক্তি বলেন, সড়কের বেজ মজবুত না হলে এর ওপরের অংশ মজবুত হয় না। ঠিকাদার সড়কের তলায় মাটি ও বালুর মিশ্রণ বেশি ব্যবহার করেছেন। খোয়ার পরিমাণ কম দেওয়ায় এবং বালির পরিমান বেশি দেওয়ায় বিভিন্ন স্থানে এরই মধ্যে দেবে যেতে শুরু করেছে।
প্রায় তিন বছর এ সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল। দীর্ঘ ভোগান্তির পর গত বছর নতুন করে কাজ শুরু হলেও কাজে ব্যাপক দূর্নীতি ও অনিয়মের ফলে কাজের মান ভালো হচ্ছে না আগের করা গাইড ওয়াল ও প্যালাসাইডিংয়ের স্থায়িত্ব কমে গেলেও সেগুলো রেখেই নতুন ঠিকাদার কাজ করছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকির অভাবে সড়ক নির্মাণের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, রাস্তায় সড়ক বিভাগের কোন কর্মকর্তা আসেননা, ভালভাবে পরিস্কার না করেই তার ওপর কার্পেটিং করা হচ্ছে। কার্পেটিংয়ে নিম্নমাণের বিটুমিন ব্যবহার ও পরিমানে কম দেয়া হয়েছে। যেকারণে কার্পেটিং কাজের দুদিন পরেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। এছাড়াও অভিযোগ কার্পোটিং এর পুরুত্ব ঠিক নাই ,পিচের পরিমাণ কম,প্যালাসেটিং ভেঙ্গে গেছে, নিচের লেয়ার (যেমন -বেচ টাইপ-১ ও ২ এর থিকনেস কম যেখানে সোল্ডারে মাটি নাই অথচ অনেক মাটি ধরা রয়েছে এখানেই বড় দুর্নীতি হয়েছে। ঢালাই এর মান খুবই নিম্নমানের এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিনে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদার কে পাওয়া যায়নি। লেবার সর্দার দিয়ে চলছে সড়ক ও জনপদের রাস্তার সংস্করণের কাজ। এবিষয়ে সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ তানিমুল হক বলেন কন্টাক্ট ডিভিশন বলছে স্থানীয়রা মাটি দিতে চায় না, তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাটি দেয়ার জন্য ইতিমধ্যে জমি কিনেছে, আর প্যারাসাইডিং এর ব্যাপারে পুরাতনটা রাখাই যাবে না সেটা রাখলে আরো সমস্যা, তবে দুইটা ইস্যু খুব সিরিয়াস সেটা পাথরের ডাস্ট ব্যবহার ও ঢালায়ে লবণাক্ত পানি আমি অবশ্যই এ ব্যাপারে কোয়ারি করে ব্যবস্থা নিব আর বিল এর ব্যাপারে অফিশিয়ালি ভাবে রেডি আছে কিন্তু তাদেরকে দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন
তিস্তানদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনঃরুদ্ধার প্রকল্প’ নিয়ে মতবিনিময়- চায়নার কান্ট্রি ম্যানেজার হান কুন
৫ ঘণ্টার ব্যবধানে বাজার ও বিদ্যালয়ে আগুন
আমিনবাজারের পাওয়ার গ্রিডে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১১ ইউনিট