নিজস্ব প্রতিবেদক
নরসিংদীতে ট্রেনে কাটা পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের বাদুয়ারচরের পুরানপাড়া রেলসেতু থেকে তাঁর খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ।
গতকাল বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রামগামী আন্তনগর তূর্ণা-নিশীথা একপ্রেসে কাটা পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়। আজ সকালে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে খবর পেয়ে নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। দুপুর ১২টায় লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়।
মৃত যুবকের নাম সাইদুর রহমান (৩৭)। তিনি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার পূর্ণকলস গ্রামের আবদুর রহমান মুন্সীর ছেলে। রাজধানী ঢাকার কাফরুলে বসবাস করে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার একটি ইন্টারনেট সেবাদান প্রতিষ্ঠানে তিনি প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করতেন। পারিবারিক কলহের জেরে সাইদুর রহমান আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর স্বজনেরা।
মৃত্যুর আগে সাইদুর রহমান ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘প্রতিটা ছেলের জীবনেই প্রথম তার মা, দ্বিতীয় তার স্ত্রী ও তৃতীয় তার সন্তান। আমার পারসেপশনটা (উপলব্ধি) ছোটবেলা থেকেই। আমি বিবাহিত জীবনে ব্যালেন্স করতে পারলাম না। আজ চার মাস তেইশ দিন আমরা সেপারেশনে আছি।…সম্পদ সব সময় সম্মান বয়ে আনে না, তহুরা (স্ত্রী)। মাঝে মাঝে সম্পদের জন্য সম্পর্কের পাশাপাশি অনেক জীবনও চলে যায়। আজকে তুমি নিজে আমাকে ডেকে এনে বাচ্চাকে দুই চোখ ভরে দেখতে দিলে না।…আমি তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত ভাবতেও পারি না। সেই তুমি আমার সাথে প্রতারণা করলে।…এই পৃথিবীতে আমার সফর এই পর্যন্তই ছিল। পৃথিবী আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। বিদায় আলবিদা।’
সাইদুরের স্বজনেরা জানান, গত কোরবানি ঈদের সময় সাইদুরের স্ত্রী তহুরা খাতুন (৩২) পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে সাদিয়াকে নিয়ে বাবার বাড়ি নরসিংদীর চিনিশপুরের সোনাতলা গ্রামে চলে আসেন। পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রির টাকা পেয়ে তহুরা খাতুন আর ঢাকায় ফিরতে চাননি, চেয়েছিলেন নরসিংদীতে বাড়ি করে থেকে যেতে। কিন্তু সাইদুর চাকরি ও মা–বাবাকে ছেড়ে নরসিংদী আসতে চাননি। এই নিয়ে সাইদুর ও তহুরার মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সাইদুর তাঁর মেয়েকে দেখতে শ্বশুর বাড়ি যান। এ সময় এ দম্পতিকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন সাইদুর পক্ষের স্বজনেরা। তবে তহুরার স্বজনেরা সাইদুরকে মারধর করে ধাওয়া দেন।
সাইদুর রহমানের ছোট ভাই রুবেল রহমান বলেন, ‘রাতে ভাইয়া (সাইদুর) আমাকে কল করে বলে, “জানিস, সাদিয়া আমার সামনে আসতে ভয় পাচ্ছিল, সে কোলে পর্যন্ত আসছিল না। তারা আমাকে দা নিয়ে ডাকাত বলে দৌড়ানি দিয়েছে। পালিয়ে এসেছি। তহুরা যদি আজ রাত ১২টার মধ্যে আমাকে কল না দেয়, আমারে আর খুঁজে লাভ নেই।”’
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে তহুরা খাতুনের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবারের অন্য সদস্যদেরও বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, গতকাল রাত সাড়ে ১২টায় পুরানপাড়া সেতুতে চট্টগ্রামগামী তূর্ণা-নিশীথা ট্রেনে ওই ব্যক্তি কাটা পড়েন। তাঁর ছিন্নভিন্ন পাঁচ টুকরা লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
আরও পড়ুন
সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিবন্ধনসহ যা করতে হবে পর্যটকদের
জান্নাতে বাবা-মায়ের সাথে সন্তানরা যেভাবে মিলিত হবে
কিশমিশ-মনাক্কায় যত উপকার