November 27, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, November 27th, 2025, 7:31 pm

পোলট্রি মুরগিতে ‘সুপারবাগ’, সংকটে জনস্বাস্থ্য

 

বাংলাদেশে পোলট্রি খামারে অ্যান্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহার ক্রমেই নতুন জনস্বাস্থ্য সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, দেশের ব্রয়লার বা পোলট্রি মুরগির শরীরে বাসা বেঁধেছে ‘মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট’ বা সুপারবাগ। এটি শুধুমাত্র মানুষের জীবনরক্ষাকারী অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হ্রাস করছে না, পরিবেশের জন্যও ঝুঁকি তৈরি করছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে উৎপাদিত ব্রয়লার মুরগির ৭০-৮০ শতাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের কাছ থেকে আসে। কিন্তু অধিকাংশ খামারি ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে ফিড ডিলার বা ওষুধ কোম্পানির পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছেন।

গবেষণায় বলা হয়েছে, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, এনরোফ্লক্সাসিন ও টেট্রাসাইক্লিনের মতো ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মুরগির মাংসে অ্যান্টিবায়োটিকের অবশিষ্টাংশ লক্ষ্য করা গেছে। খুচরা বাজারে সংগৃহীত নমুনার ২২% তে ফ্লোরোকুইনোলোন এবং ১৮% তে টেট্রাসাইক্লিনের অবশিষ্টাংশ ধরা পড়েছে।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হলো, মুরগির অন্ত্রে ‘এমসিআর-১’ (mcr-1) জিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা কোলিস্টিন নামক গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিককে অকার্যকর করে দেয়। খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানুষের শরীরে অল্পমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশ করলে অ্যালার্জি, অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের ব্যাঘাত এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসের ঝুঁকি থাকে।

পরিবেশের ওপরও পোলট্রি খামারের বর্জ্যের নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, একটি ব্রয়লার মুরগি জীবদ্দশায় ১.৫ থেকে ২ কেজি বর্জ্য উৎপাদন করে। দেশে বছরে ২০০ মিলিয়নের বেশি মুরগির বর্জ্য অপরিশোধিত অবস্থায় জমি ও জলাশয়ে ফেলা হচ্ছে, যা ভূগর্ভস্থ পানি ও নদীর পানিকে দূষিত করছে।

ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “ব্রয়লারশিল্প আমাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করছে, তবে অ্যান্টিবায়োটিক সংকট এই অর্জনকে হুমকিতে ফেলছে। ‘ওয়ান হেলথ’ নীতি অনুসরণ করেই মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের স্বাস্থ্য রক্ষা সম্ভব।” তিনি আরও বলেন, প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিক ব্যবহার, বায়োসিকিউরিটি জোরদার, নিরাপদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা করা যেতে পারে।

গবেষকরা সতর্ক করে বলছেন, এখনই যদি ‘ওয়ান হেলথ’ নীতির মাধ্যমে সমন্বিতভাবে কাজ করা হয়, তবে ব্রয়লার শিল্পকে নিরাপদ, লাভজনক ও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

এনএনবাংলা/