বিশ্বের ১১টি দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাবেক শীর্ষ ব্যক্তিরা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে বাংলাদেশের এ সংকটকালে অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞ সহায়তার আশ্বাস দেন।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ড. ইউনূসের হোটেল স্যুটে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ভাইরা ভিকে-ফ্রেইবার্গা।
তিনি নিজামী গাঞ্জাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের (এনজিআইসি) সহ-সভাপতি, যা বিখ্যাত পারস্য কবি নিজামী গাঞ্জাভির নামে প্রতিষ্ঠিত।
প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন—
স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বোরুত পাহর
সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরিস তাদিচ
লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এগিলস লেভিটস
ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল
গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপান্দ্রেউ
বুলগেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোসেন প্লেভনেলিয়েভ ও পেতার স্তোয়ানোভ
ক্রোয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো জোসিপোভিচ
বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট এমলাদেন ইভানিচ
মরিশাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমিনা গুরিব-ফাকিম।
এছাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন—কমনওয়েলথের সাবেক মহাসচিব, জর্জিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চার সাবেক সভাপতি, কয়েকজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক সহ-সভাপতি ও এনজিআইসির সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন, রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি এবং আইএইএ ও জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির শীর্ষ প্রতিনিধিরা।
নেতারা দারিদ্র্য দূরীকরণ, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং মানবিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে অধ্যাপক ইউনূসের আজীবন অবদানের প্রশংসা করেন। তারা বলেন, “আমরা এখানে এসেছি আপনাকে ও বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন দিতে। আমরা সম্পূর্ণ আপনার পাশে আছি।”
তাদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রশংসনীয় হলেও ১৬ বছরের দুর্নীতি, অপশাসন ও শোষণের কারণে দেশ এখনো নানা চ্যালেঞ্জে জর্জরিত। অনেক নেতা অন্তর্বর্তী সরকারকে পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করার আশ্বাস দেন।
কেরি কেনেডি, যিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন, দেশের মানবাধিকার অগ্রগতির প্রশংসা করে বলেন, “মানবাধিকার ক্ষেত্রে আপনাদের সাফল্য অসাধারণ।”
জর্জটাউন ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মেল্যান ভারভির জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান শিগগিরই বাংলাদেশের “জুলাই বিপ্লব”-এর প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানাবে। এনজিআইসির সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিনও বলেন, “আপনাদের যখনই প্রয়োজন আমরা পাশে আছি।”
বিপুল সমর্থন পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এটা আমার কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আপনাদের সবাইকে একসঙ্গে সমর্থন জানাতে দেখে আমি অভিভূত।”
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে তিনি একটি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, “আমরা গত ১৫ বছর ধরে এক ধরনের ভূমিকম্পের ভেতর দিয়ে গেছি, যার মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৯।”
তিনি স্বীকার করেন, জনগণ দ্রুত পরিবর্তন প্রত্যাশা করলেও সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কামনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের আপনার পরামর্শ, সমর্থন ও নৈতিক শক্তি দরকার।”
এ সময় তার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
শতভাগ নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পর্যবেক্ষকদের প্রতি আহ্বান সিইসির
ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা: ইসি সানাউল্লাহ
আইসিইউতে খালেদা জিয়া