October 11, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, September 27th, 2025, 5:43 pm

প্রবেশপত্র নিয়ে তর্কের জেরে কামিল মাদ্রাসার সহকারি অধ্যাপককে বেধরক মারপিট

জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ

জয়পুরহাটের কালাইয়ে হাতিয়র কামিল মাদ্রাসায় ফাজিল পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিয়ে তর্কের জেরে ওই মাদ্রাসার আরবি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মাওলানা সেলিম রেজাকে বেধরক মারপিট করেছে এক নারী শিক্ষার্থীর স্বামী ও ভাসুর। এ খবর বাহিরে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা ওই শিক্ষার্থীর স্বামী ও দেবরকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে

অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পুলিশ এসে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে ওই শিক্ষার্থীর স্বামী ও দেবরকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তাদেরকে ১৫ দিনের কারাদন্ডাদেশ দিয়েছেন। এ ঘটনা বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৬ টার দিকে কালাই আহলে হাদীদ মসজিদ

মার্কেটে ঘটেছে।

আহত মাওলানা সেলিম রেজা হাতিয়র কামিল মাদ্রাসার আরবি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক। এছাড়া তিনি কালাই আহলে হাদীস জামে মসজিদের খতিব এবং এলাকার ২২টি মসজিদের সংযুক্ত কালাই আহলে হাদীস ঈদগাঁ মাঠের খতিবও। তাঁর কালাই আহলে হাদীস মসজিদ মার্কেটে কাপড়ের ব্যবসাও রয়েছে। অপরদিকে

দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, কালাই পৌরশহরের থুপসাড়া মহল্লার নুর মোহাম্মদের দুই ছেলে আব্দুল্লা আল মাহমুদ (৩৮) ও নুরনবী (৩৫)।

এদিকে ওই ঘটনার প্রতিবাদে আজ শুক্রবার জুমার নামাজ আদায়ের পর কালাই আহলে হাদীস মসজিদের মুসল্লীরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে। এ সময় বক্তব্য দেন উপজেলা

জামায়াতের নায়েবে আমীর ও কালাই টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ তাইফুল ইসলাম ফিতা’ পৌর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল আলিম সরকার, উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক ও কালাই ডিগ্রি কলেজের সভাপতি মো. তাজ উদ্দিন আহম্মেদ, আহলে হাদীস মসজিদের আজকের জুমার নামাজের ইমাম গোলাম

মোস্তফা, মাওলানা মোজাফ্ফর হোসেনসহ প্রমুখ।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও ভ্রাম্যমান আদালত সূত্রে জানা যায়, নুরনবীর স্ত্রী মৌসুমী আক্তার হাতিয়র কামিল মাদ্রাসা থেকে সম্প্রতি কামিল পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়। বৃহস্পতিবার সকালে নুরনবী তার স্ত্রীর কাগজপত্র নিতে মাদ্রাসায় যান। এ সময় জমা দেওয়া ফাজিল পাশের প্রবেশপত্র পাওয়া যায়নি মাদ্রাসা অফিসে। এ নিয়ে নুরনবী অফিস কক্ষে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেন। তখন মাদ্রাসায় আরবি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মাওলানা ফারুক হোসেন ও মাওলানা সেলিম রেজা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে নুরনবী দুই সহকারি অধ্যাপকের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে আসেন। পরে বিকেলে মাওলানা সেলিম রেজা মাদ্রাসা থেকে কালাই আহলে হাদীস মসজিদ মার্কেটে এসে তার কাপড়ের দোকানে বসেন।

এদিকে একই মার্কেটে কাপড়ের ব্যবসা করেন অভিযুক্ত নুরনবী। মাদ্রাসায় তর্কের জের ধরে নুরনবী ও তার বড় ভাই মাহমুদ মিলে মাওলানা সেলিমের দোকানে গিয়ে আবারও কাগজ চান। দুই/এক কথার মধ্যে তারা দুই ভাই মিলে

বেধরক মারপিট করতে থাকেন মাওলানা সেলিম রেজাকে। একপর্যায়ে তিনি মার্কেটের গলিতে পড়ে গুরুতর আহত হন।

এ খবর শহরে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা কালাই আহলে হাদীস মসজিদ মার্কেটে অবস্থান নিয়ে ওই দুই ভাইকে তাদের দোকানঘরে অবরুদ্ধ করেন এবং মহাসড়কে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান ও কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন এসে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে অভিযুক্ত দুই ভাইকে উদ্ধার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নিয়ে যান। তখন উত্তেজিত

জনতা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। এ অবস্থায় পরিবেশ শান্ত করতে সেখানে

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে দুই ভাইকে ১৫ দিনের কারাদন্ডাদেশ দেন।

আহত মাওলানা সেলিম রেজার সাথে থাকা শামীম আহম্মেদ বলেন,‘সেলিম হুজুরের অবস্থা ভাল না। তাকে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় তাদেরকে জেল দিলেই হবে না, মার্কেট থেকে তাদের দোকানঘরের বরাদ্দ বাতিল করতে হবে। বিষয়টি মার্কেটের সাধারন সম্পাদককে জানিয়েছি। এখন পর্যন্ত তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।’

 

হাতিয়র কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম বলেন,‘মাদ্রাসার বিষয় মাদ্রাসাতেই সমাধান হবে, বাহিরে কেন একজন শিক্ষককে মারপিট করা হলো ? তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আদালতে যাওয়া হবে।’

মার্কেটের সাধারন সম্পাদক আনিছুর রহমান তালুকদার বলেন,‘এ বিষয়ে আমি কোনো বক্তব্য দিবো না।’

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন বলেন,‘বর্তমানে পরিবেশ শান্ত। ঘটনার পর থেকে কালাই আহলে হাদীস মসজিদ মার্কেট বন্ধ রয়েছে। কারাদন্ডাদেশপ্রাপ্ত দুইভাইকে শুক্রবার সকালে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান বলেন,‘অভিযুক্ত দুইভাইকে ১৫ দিনের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। মার্কেট পরিচালনা কমিটি কি ব্যবস্থা নেয় তার উপর আমরা নজর রাখছি।’