November 16, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, November 16th, 2025, 3:44 pm

ফেনী সরকারি কলেজে ফ্যাসিস্ট সময়ে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট: নেপথ্যে কতিপয় শিক্ষকের এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

 

ফেনী প্রতিনিধি

ফেনী সরকারি কলেজে ফ্যাসিস্ট আমলের ১৫ বছরে কিছু শিক্ষকের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। যারা গত পনের বছরে যখন যে অধ্যক্ষ‌ কর্মরত ছিলেন তাঁর সকল অপকর্মে সহযোগিতার মাধ্যমে পুরো কলেজ নিয়ন্ত্রণ করত।

বিশ্বস্ত সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, বিগত পনের বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনামলে কর্মরত অধ্যক্ষগন কলেজের শিক্ষার্থীদের থেকে আদায়কৃত বিভিন্ন বেসরকারি তহবিলের অর্থ ব্যয়ে চরম অনিয়ম ও সীমাহীন দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করেন। এ কাজে তাঁদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন কলেজে কর্মরত কতিপয় অসাধু শিক্ষক। বিনিময়ে তাঁরা অধ্যক্ষদের কাছ থেকে লাভ করেন প্রভূত অবৈধ ও অনৈতিক আর্থিক সুযোগ-সুবিধা। নিরবে নিভৃতে অর্থ আত্মসাত ও আর্থিক অনিয়মের ধারাকে নিরুপদ্রব ও নিষ্কন্টক রাখার স্বার্থে কলেজের সকল শিক্ষক- কর্মচারীকে খুশি রাখতে কলেজের বিভিন্ন তহবিল থেকে শিক্ষক – কর্মচারীদের মধ্যে বিধিবহির্ভূত নানারকম উপহার, উপটৌকন প্রদানের প্রথাও চালু করা হয। যেমন,১লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষে সকল পুরুষ শিক্ষককে দামী পাঞ্জাবি, নারী শিক্ষককে বৈশাখী শাড়ি, কর্মচারীদের শার্ট, ফতুয়া ইত্যাদি বিতরণের ব্যবস্থা চালু করা হয়। এ খাতে কলেজ তহবিল থেকে প্রচুর অর্থ খরচ করা হয়। বর্ষার শুরুতে শিক্ষক – কর্মচারীদের ছাতা উপহার দেয়ার এক অদ্ভুত রীতিও এ কলেজে চালু হয়। শিক্ষকদের পরিবার পরিজন নিয়ে বার্ষিক আনন্দ ভ্রমণ আয়োজনে প্রতি বছর কলেজ ফান্ড থেকে মোটা অংকের ভর্তুকি প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়, যা একেবারেই অনৈতিক ও অবৈধ। দেশের আর কোনো সরকারি কলেজে এমন নজির নেই। শিক্ষকদের বার্ষিক আনন্দ ভ্রমণের সার্বিক ব্যয় নির্বাহের কথা শিক্ষকদের প্রদেয় ব্যক্তিগত চাঁদা এবং শিক্ষক পরিষদের তহবিল থেকে। কিন্তু শিক্ষক পরিষদের জমানো টাকা বছর শেষে শিক্ষকদের মধ্যে আকর্ষণীয় গিফট ভাউচারের মাধ্যমে বন্টন করে দেয়ার এক ব্যতিক্রমধর্মী রেওয়াজ এ কলেজে চালু রয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনের আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এবং সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মোটাদাগে সম্মানী প্রদানের নিয়ম‌ও এ কলেজে চালু করা হয়। অথচ পরীক্ষা সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন ছাড়া অন্য কোন দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো প্রকার সম্মানী নেয়া সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত। বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে এবং নানা রকম co-curriculer activities বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেখা যায়, কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও সংশ্লিষ্ট কমিটির শিক্ষকবৃন্দের মোটা অংকের সম্মানী প্রদানের ফলে প্রকৃত ব্যয়ের চেয়ে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে অন্তত চার, পাঁচগুণ পর্যন্ত ব্যয় প্রদর্শিত হয়। এসব আর্থিক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা ফেনী কলেজে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গতবছর জুলাই বিপ্লবের পর বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ এনামুল হক খোন্দকারের যোগদানের পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এসব অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও আর্থিক অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমাপ্তি ঘটতে শুরু করে। বর্তমান কর্মরত অধ্যক্ষ কলেজে পূর্ব থেকে প্রচলিত সকল অবৈধ অনৈতিক আর্থিক সুযোগ-সুবিধার আদান প্রদান সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন।  সকল প্রকার দূর্নীতি ও আর্থিক অপচয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেন এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের লিখাপড়ার মানোন্নয়নে নিয়মিত শ্রেণী কার্যক্রম মনিটরিং সহ কলেজে কর্মরত সকল স্টাফের সরকারি চাকরি বিধি মোতাবেক শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার অনুশীলন নিশ্চিতে বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। আর তখনি  বিগত অধ্যক্ষদের আমলে অবৈধ অনৈতিক সুবিধাভোগী এবং অধ্যক্ষ মহোদয়দের ভুয়া বিল ভাউচার প্রস্তুতকারী কতিপয় অসাধু শিক্ষকের অবৈধ আয়- রোজগারে টান পড়ায় তাঁরা ভিতরে ভিতরে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তাই তারা বর্তমান অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আদাজল খেয়ে কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছেন। তাঁরা সরকারি চাকরি বিধি লঙ্ঘন করে বর্তমান অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কলেজের ভিতরে ও বাহিরে  বিভিন্ন সময়ে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে নিজেদের মধ্যে শলা পরামর্শ করে অধ্যক্ষকে নানা ভাবে হয়রানি ও বিব্রত করার চেষ্টা করছেন।তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে বর্তমান অধ্যক্ষকে মানসিকভাবে বিব্রত ও বিপর্যস্ত করতে তারা মাঝে মাঝে তার পেছনে তাকে ব্যাঙ্গাত্মক ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় নানা রকম মন্তব্য করেন।

এই সুবিধাবাদী চক্রের অন্যতম কৌশল হল, যে কোনো অধ্যক্ষকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ‌অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে স্হানীয় পত্রিকায় পরমায়েশি নিউজ করানো । এর‌ই ধারাবাহিকতায় বর্তমান অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও দু’একবার সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কাল্পনিক ফরমায়েশি সংবাদ ছাপানো হয়। এতদসত্ত্বেও পূর্বের অধ্যক্ষদের মতো বর্তমান অধ্যক্ষকে ম্যানেজ করার সব রকমের চেষ্টা ব্যর্থ হ‌ওয়ায় তারা অত্যধিক সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। বিগত অধ্যক্ষদের সময়ে বিভিন্ন খাতে সংঘঠিত লাগামহীন আর্থিক অপচয়,অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তারা শুধু নিরব ছিলনা, ছিল সহযোগী।

বিগত অধ্যক্ষদের সময়ে কী পরিমাণ আর্থিক অপচয় ও দূর্নীতি হয়েছে, নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত কয়েকটি তথ্য ও দৃষ্টান্ত থেকে পাঠকদের ধারনা লাভ করা সহজ হবে। এখানে মাত্র কয়েকটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হল।

বিগত অধ্যক্ষদের সময়ে উল্লিখিত অসাধু সুবিধাভোগী শিক্ষকদের যোগসাজশে সরকার নির্দেশিত বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনে প্রকৃত খরচের চেয়ে বহুগুণ খরচ দেখিয়ে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে অনেক টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। যেমন বর্তমান অধ্যক্ষ যোগদানের পর মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ উদযাপনে খরচ হয়েছে যেখানে ৪৮১৫৪/- মাত্র। অথচ উক্ত অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে তার আগের বছর অর্থাৎ মাতৃভাষা দিবস ‘২০২৪ এ খরচ করা হয় ২২০৩০৪/-( দুই লাখ বিশ হাজার তিনশ চার টাকা মাত্র), যা প্রকৃত খরচের চেয়ে নিঃসন্দেহে কয়েকগুণ বেশি হবে। অতিরিক্ত টাকাটা ভুয়া বি মা২০২৩ধ্যমে পকেটস্থ করা হয়েছে। মাতৃভাষাল ভাউচারের দিবস ‘ উদযাপনে‌ও খরচ করা হয়েছে ১৩৮৪২৮/- ( এক লাখ আটত্রিশ হাজার চারশ’ আটাশ টাকা মাত্র)।

৬ ডিসেম্বর ফেনী মুক্তি দিবস ও ১৪ ডিবউদযাপনে র্তমান অধ্যসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস ‘২০২৪ ক্ষ খরচ করেছেন যথাক্রমে ৪১৮২০/- ও ৪৮১৫৪/-, এ দু’টি অনুষ্ঠান আয়োজনে তার আগের বছর তখনকার অধ্যক্ষ খরচ করেছেন যথাক্রমে ১২৫৮১১/- এবং ১১৪৮৫৫/-। মহান বিজয় দিবস ২০২৪ উদযাপনে বর্তমান অধ্যক্ষ খরচ করেছেন ৯৭৪৯১/- আর তার আগের বছর অর্থাৎ বিজয় দিবস ‘২০২৩ উদযাপনে খরচ প্রদর্শিত হয় ২৮৪০৯১/- ( দুই লাখ চুরাশি হাজার একানব্ব‌ই টাকা মাত্র)। যা প্রকৃত খরচের চেয়ে অনেক বেশি। ২০২২ সালে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন দেশের কোন কলেজে পৃথক কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্দেশনা না থাকলেও ফেনী কলেজে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে ৩২৩৪৪০/ ( তিন লাখ তেইশ হাজার চারশো চল্লিশ টাকা মাত্র) খরচ দেখিয়ে ভুয়া বিল ভাউচার করে সম্পূর্ণ টাকা তদানীন্তন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও উল্লিখিত কতিপয় শিক্ষক পকেটস্থ করেছেন। উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনে সরকারি নির্দেশনা ছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটা প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্প্রচারের ব্যবস্থা করবে। এ কাজে এক টাকাও খরচের কোনো সুযোগ ছিলনা। কলেজের বার্ষিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে বর্তমান অধ্যক্ষের যোগদানের আগের বছর এবং তার আগের বছর অর্থাৎ গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছর ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই বছরে খরচ করা হয়েছে যথাক্রমে ৮৮৪০২০/- ও ৬৯০৯৮৩/- আর উক্ত অনুষ্ঠান আয়োজনে বর্তমান অধ্যক্ষের সময়ে অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে খরচ হয়েছে ৪৩৯০০০/-, যা আগের বছরের খরচের তুলনায় অর্ধেকের চেয়েও কম। পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ উদযাপনে গতবছর অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে খরচ করা হয়েছে কলেজের দু’টি তহবিল থেকে প্রায় নয় লক্ষ টাকার কাছাকাছি। এ বছর বর্তমান অধ্যক্ষের সময়ে উক্ত অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে খরচ হয়েছে মাত্র ১৩৮০০০/- (এক লক্ষ আটত্রিশ হাজার টাকা)। ফেনী কলেজের অফিসিয়াল সামগ্রী তথা স্টেশনারি দ্রব্যাদি যথা কাগজ,কলম, ফাইলপত্র,স্টাপলার মেশিন,আলপিন এবং কম্পিউটার টোনার ইত্যাদি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। এসব সামগ্রীর কেনাকাটার নামে প্রতিবছর কলেজ ফান্ড থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার ভুয়া বিল ভাউচার করা হয়েছে। অথচ এসব অফিসিয়াল সামগ্রী ক্রয়ের জন্য প্রতি অর্থবছরে দুই বার করে রাজস্ব খাত থেকে প্রয়োজনীয় সরকারি বরাদ্দ প্রদান করা হয়। উক্ত বরাদ্দ থেকেও প্রয়োজনীয় অফিস সামগ্রী কেনাকাটার পর‌ও কিছু উদ্বৃত্ত থাকার কথা। সে ক্ষেত্রে ফেনী কলেজে রাজস্ব খাত থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দ নিঃশেষ করে কলেজ ফান্ড থেকেও এসব কেনাকাটায় অস্বাভাবিক বিল ভাউচার করা হয়েছে। দু’ একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি সুস্পষ্ট হবে। যেমন বর্তমান অধ্যক্ষের যোগদানের আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কম্পিউটার টোনার বা কালি ক্রয় করা বাবদ খরচ করা হয়েছে ৯৬৫৮১৫/-। তার আগের বছর ২০২২-২৩ অর্থবছরে উক্ত টোনার ক্রয়ে খরচ হয়েছে ১৩০১৫৮৮/-। এর আগের অর্থবছর ২০২১-২২ সালে এ খাতে খরচ হয়েছে ১৩৬০৫৬৭/-। আবার এ খাতে প্রাপ্ত সরকারি বরাদ্দ প্রায় সাড়ে আট লাখ থেকে সাড়ে নয় লাখ টাকাও উক্ত খাতে খরচ দেখিয়ে নিঃশেষ করা হয়েছে। একটি সরকারি অফিসে কী পরিমাণ স্টেশনারি দ্রব্যাদি প্রয়োজন হয় এবং এসব সামগ্রী কেনাকাটায় সর্বোচ্চ কত টাকা খরচ হতে পারে,তা সংশ্লিষ্ট সকলের ধারণা থাকা স্বাভাবিক।বর্তমান অধ্যক্ষ যোগদানের পর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কম্পিউটার টোনার ক্রয় বাবদ খরচ হয়েছে কলেজ তহবিল থেকে মাত্র ১৫০০০/- টাকা। এভাবে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে কলেজের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বেসরকারি তহবিল থেকে সর্বমোট খরচ করা হয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯৯৪৭৮২২/- (নিরানব্বই লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার আটশত বাইশ টাকা মাত্র)। ২০২২-২৩ অর্থবছরে খরচ করা হয়েছে ১৩৭৫২০৪২/-( এক কোটি সাতত্রিশ লক্ষ বায়ান্ন হাজার বিয়াল্লিশ টাকা মাত্র)। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খরচ হয়েছে ১৩১৯৫১২২/- ( এক কোটি একত্রিশ লক্ষ পঁচানব্ব‌ই হাজার একশত বাইশ টাকা মাত্র)। বর্তমান অধ্যক্ষ যোগদানের পর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উক্ত তিনটি তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা ও কর্ম সম্পাদনে খরচ হয়েছে ৩১৯৬৮১১/- ( একত্রিশ লক্ষ ছিয়ানব্বই হাজার আট শ’ এগারো টাকা মাত্র)। এর প্রত্যেকটি খরচ বাস্তব ও দৃশ্যমান ।

বর্ষায় কলেজ ক্যাম্পাসে পানি নিষ্কাশনের কোনো ড্রেইনেজ সিস্টেম না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলে পুরো ক্যাম্পাস পানিতে তলিয়ে যায়। অথচ গত ২০২৩- ২৪ অর্থবছরে পানির সুয়ারেজ লাইন সংস্কার ও ড্রেন মেরামত দেখিয়ে ১১৮৩৪৩৩/- ( এগারো লক্ষ তিরাশি হাজার চারশত তেত্রিশ টাকা মাত্র) খরচ দেখানো হয়েছে। অতচ এ প্রতিবেদক সরেজমিনে কলেজে গিয়ে  কোন ড্রেনের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। কলেজের মাঠ সংস্কারের নামে বিগত সময়ে প্রায় ঊনত্রিশ লক্ষ টাকার মতো খরচ করা হয়েছে মর্মে রেকর্ড রয়েছে। উক্ত অর্থের কত শতাংশ বাস্তবে খরচ হয়েছে, কলেজের নিরপেক্ষ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা অবহিত আছেন। বর্তমান অধ্যক্ষ কর্তৃক কলেজের মাঠ সংস্কারের নামে যেখানে একটা টাকাও খরচ করা হয়নি, তথাপি কিছু শিক্ষক অধ্যক্ষকে বিব্রত করতে স্হানীয় এক পত্রিকায় তাঁর বিরুদ্ধে   মাঠ সংস্কারের নামে অর্থ খরচ করা হয়েছে মর্মে ভুয়া রিপোর্ট প্রকাশ করায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৬০৪৫০টাকা খরচ করা হয়েছে শুধুমাত্র ব্যাজ ও আইডি কার্ড বানাতে। এক অর্থবছরে শিক্ষার্থী অনুযায়ী এ খাতে খরচ হ‌ওয়ার কথা সর্বসাকুল্যে এক লক্ষ থেকে দেড় লক্ষ টাকা। করোনাকালীন সময়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে কলেজের দশটি শ্রেনির কক্ষ সংস্কারে ব্যয় করা হয়েছে ২১২৪৭৬৬ টাকা, যা ছিল সম্পূর্ণ অবাস্তব। কোন কাজ না করে শুধু ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন নয়, কোন অনুষ্ঠান না করেও টাকা খরচের নজির সৃষ্টি হয়েছে এ কলেজে। ২০২২ সালে মহাপরিচালকের সাথে মতবিনিময় সভার খরচ দেখানো হয়েছে ২৯২৬০০/-। এ প্রতিবেদক তৎকালীন কর্মরত ছিলেন এরকম কয়েকজন শিক্ষককে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বিষ্ময় প্রকাশ করেন এবং বলেন কলেজে এ রকম কোনো মতবিনিময় সভাই অনুষ্ঠিত হয়নি।  ২০১৯ সালে ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদ (ফেকসু) এর অফিস রুম সংস্কার ও আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ প্রায় ১২৫৯০০০/- এবং কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনে প্রমোদ বিহারের আয়োজন বাবদ প্রায় ১১০০০০০/- খরচ করা হয়। এই প্রতিবেদক কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর বিমল কান্তি পালের সাথে তাঁর সময়ের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে টেলিফোনে জানতে চাইলে তিনি ইতোপূর্বে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন বিধায় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে সম্মত হন নি। অপর অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোক্তার হোসেইন এর সাথেও টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বর্তমান অধ্যক্ষ জুলাই বিপ্লবের পর ফেনী কলেজে যোগদান করে পূর্ণ সততা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কলেজের জরুরি অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহ সার্বিক বিষয়ে কলেজের মানোন্নয়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করে স্হানীয় শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের  নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে  সাক্ষাত করে তাঁকে কলেজে  এনে কলেজের অবকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যা সরেজমিনে প্রদর্শন করে তড়িৎ গতিতে সমস্যাগুলো সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ জানান। এর ফলে শিক্ষা প্রকৌশলের উদ্যোগে কলেজের পূর্ব দিকের রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় প্রায় পাঁচশো ফুট দীর্ঘ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করানো হয়,যা দীর্ঘদিন ধরে কলেজ প্রশাসন থেকে উদ্যোগ গ্রহণ না করায় ঝুলে ছিল এবং  ক্যাম্পাসের ঐ অংশটায় সীমানা প্রাচীর বিহীন উম্মুক্ত থাকায় রাতের বেলায় রেলস্টেশনের মাদকসেবী, ছিনতাইকারী ইত্যাদি অবাঞ্ছিত লোকজন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে আইনশৃঙ্খলা পরিপন্হী নানা রকম অপকর্ম ঘটাতে চেষ্টা করত। শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ কর্তৃক ঠিকাদার নিয়োগ পূর্বক উক্ত সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু করা হলে দক্ষিণ -পূর্ব কর্নারে কলেজের মালিকানাধীন জায়গায় স্হানীয় এক লোক নিজের মালিকানা দাবি করে প্রাচীর নির্মাণে বাঁধা দান করতে থানা ও কোর্টে বর্তমান অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ ফোর্স সহ হাজির হয়। বর্তমান অধ্যক্ষ তড়িৎগতিতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সকল বাঁধা অতিক্রম করে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করান।  বর্তমান অধ্যক্ষের তৎপরতায় শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ থেকে কলেজের কিছু অবকাঠামোগত সংস্কারের জন্য চলতি অর্থবছরে প্রায় সাড়ে বত্রিশ লক্ষ টাকা সরকারি বরাদ্দ পাওয়া যায়। তা দিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন, কলেজে বিদ্যমান পুকুরের দক্ষিণ পাড় ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় গার্ড ওয়াল নির্মাণ, কলেজের অনার্স ভবন ও বিজ্ঞান ভবনের রং করা সহ প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ এবং উত্তর -পূর্ব পাশের অবশিষ্ট সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করানো যাবে। উক্ত কাজগুলো আগামী ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে মর্মে জানা যায়।

কলেজের মানবিক ভবন ও বিজ্ঞান ভবনের পেছনের দিকের জায়গাগুলো ছিল ঝোপঝাড় ও ঘনজঙ্গলে পরিপূর্ণ।এ জায়গাগুলোতে ছিল খানাখন্দক ও ডোবা এবং  ময়লা আবর্জনার বাগাড়। এগুলোতে ছিল বিষধর সাপ,বিচ্ছু সহ মশা,মাছি ও ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপদ্রব। এসব স্থান সংলগ্ন ভবনগুলোতে পঁচা গলা ময়লা আবর্জনার দূর্গন্ধে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অবস্হান করা অসহনীয় ছিল। বর্তমান অধ্যক্ষ যোগদান করেই এ জায়গাটাতে কয়েক গাড়ি ভিটে বালি ফেলে এবং ঝোপঝাড়,জঙ্গল পরিষ্কার করে এটিকে খানিকটা উঁচু করে সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন করে পূর্বের ময়লা আবর্জনার দূর্গন্ধময় ডোবা, খানাখন্দক ও বাগাড়কে নানা প্রজাতির ফুলের চারা লাগিয়ে দ‌ষ্টিনন্দন ফুলের বাগানে পরিণত করেন। এ কাজে কলেজের কোন বেসরকারি ফান্ড থেকে টাকা খরচ না করে সরকারি রাজস্ব খাত থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দ দ্বারা এর প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটানো হয়। ইতোপূর্বের অধ্যক্ষগন সরকারি বরাদ্দের যে টাকাটা কলেজের কোনো কল্যাণে ব্যবহার না করে সম্পূর্ণ পকেটস্থ করেছেন। কলেজর পরিবেশগত উন্নয়নে বর্তমান অধ্যক্ষের এমন সততা ও উদারতা সত্বেও একজন কুচক্রী শিক্ষককে ভালো কাজের প্রশংসা না করে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করতে শুনা যায়।

কলেজ অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠান করার জন্য ছিল না নিজস্ব সাউন্ড সিস্টেম। ছিলনা প্রয়োজনীয় চেয়ার টেবিল সোফা ও দর্শকদের বসার আসন ব্যবস্থা। বর্তমান অধ্যক্ষ যোগদান করেই অডিটরিয়ামে অত্যন্ত স্বল্প খরচে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চেয়ার টেবিল ও সামনের সারিতে অতিথিদের বসার জন্য আট সেট সোফা সহ  পোনে পাঁচ শ’ চেয়ার সরবরাহ করেন এবং পূরো অডিটরিয়ামে নিজস্ব সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা করেন। পর্যাপ্ত আলোর জন্য অনেকগুলো এল‌ইডি লাইট স্থাপন করেন। এ কাজে পূর্বের অধ্যক্ষদের মতো প্রকৃত খরচের চেয়ে এক টাকাও অতিরিক্ত বিল করা হয়নি। বরং এ ক্ষেত্রেও কলেজের নিজস্ব ফান্ড থেকে পুরো টাকা খরচ না করে বাৎসরিক সরকারি বরাদ্দ থেকে এর অর্ধেক ব্যয় মেটানো হয়। কলেজের পুকুরের দক্ষিণ দিকে নূতন অনার্স ভবন ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে বহু কাল আগে থেকে বিদ্যমান শিক্ষকদের থাকার পুরনো ডরমিটরি ভবনটা পূর্ববর্তী অধ্যক্ষের সময়ে সম্পূর্ণ ভেঙে এর মেঝের মাটি গভীর ভাবে খনন পূর্বক প্রচুর টাকার পুরনো ইট,রড ইত্যাদি তুলে বিক্রি করে দেয়া হয়। যার ফলে পুরো জায়গাটাতে গভীর গর্ত হয়ে পড়ে। নূতন অধ্যক্ষ যোগদানের পর শিক্ষকদের পরামর্শ ও একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অধ্যক্ষ উক্ত জায়গাটাতে ভিটি বালু ফেলে জায়গাটা সমান করা হয় এবং এতে বর্তমানে নানা প্রজাতির ফুল ও ফলের চারা লাগিয়ে বাগান সৃজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ কাজেও প্রয়োজনের চেয়ে এক টাকাও অতিরিক্ত বিল করা হয়নি এবং কাউকে কোনো সম্মানী দেয়া হয়নি। কলেজ মসজিদের প্রস্রাবখানা ও টয়লেটের সংস্কার সহ মসজিদের সামনের রাস্তা উঁচু করা ও সংস্কার কাজ‌ও ইতোমধ্যে তিনি সম্পন্ন করান।

ফেনী পলিটেকনিক সংলগ্ন ফেনী কলেজের দীর্ঘদিন থেকে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা ছাত্রাবাসটি নূতন করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও সংস্কার পূর্বক সম্প্রতি বর্তমান অধ্যক্ষ ছাত্র ভর্তি করে পূনরায় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছেন।

বর্তমান অধ্যক্ষ কলেজে একটি বহুতল বিজ্ঞান ভবন, একটি মসজিদ, একটি শিক্ষক ডরমিটরি এবং  অনার্স, মাস্টার্স কলেজের উপযোগী একটি লাইব্রেরী ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে যোগাযোগ করে সম্প্রতি শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে  দেশের বিশটি পুরনো সরকারি কলেজের বৃহৎ পরিসরে অবকাঠামো উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্পে ফেনী সরকারি কলেজকে অন্তর্ভুক্ত করাতে সক্ষম হন। আশা করা যায়, আগামী দু’এক মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ শুরু হবে। অতঃপর প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে হাত দেয়া হবে। এভাবে বর্তমান অধ্যক্ষ কলেজে সারাক্ষণ নিরিবিলি বসে না থেকে কলেজের সামগ্রিক উন্নয়নে অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে দেনদরবার ও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন, যা পূর্বের কোন অধ্যক্ষ করেননি।  এমনকি বর্তমান অধ্যক্ষ ফেনীর সন্তান হিসেবে নিজ এলাকার শত বর্ষ প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ফেনী সরকারি কলেজের দায়িত্ব গ্রহণ করে ফেনী সদর হাসপাতাল মোড়ে অবস্থিত কলেজের প্রায় দশ একর ভূমি যা স্হানীয় ভূমি দস্যুদের দ্বারা দখলিকৃত,তা পূনরুদ্ধারের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে হাত দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে উচ্চতর আদালত ও স্থানীয় আদালতে চলমান মামলা লড়ার জন্য উকিল নিয়োগ দান পূর্বক মামলা পরিচালনা শুরু করা হয়েছে।

এভাবে বর্তমান অধ্যক্ষ কলেজের সামগ্রিক উন্নয়নে এবং এর একাডেমিক পরিবেশের উৎকর্ষ সাধনে অত্যন্ত সততা ও আন্তরিকতার সাথে শক্ত হাতে ফেনী কলেজের বর্তমান হাল ধরেছেন। তবে এতে নানা প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে চলেছে পূর্ব উল্লিখিত শিক্ষকদের সিন্ডিকেট, যারা এই কলেজে পনেরো,বিশ বছর ধরে চাকরি করে কলেজ অভ্যন্তরে এটি গড়ে তুলেছে। যে সিন্ডিকেটের কাজ হল, যখন যে অধ্যক্ষ কলেজে আসবেন তাকে নানাভাবে হাতের মুঠোয় নিয়ে তাঁর মাধ্যমে অবৈধ ও অনৈতিক সুযোগ সুবিধা আদায় করে নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করা। বর্তমান অধ্যক্ষের মাধ্যমে তাদের অবৈধ ও অনৈতিক স্বার্থ হাসিল করা সম্ভব না হ‌ওয়ায় তারা তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

বর্তমান অধ্যক্ষ সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী পুরো এক বছরের পরীক্ষা কমিটিগুলো অর্থবছরের শুরুতে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। যা ইতোপূর্বে কখনও হয়নি। অতীতে সিন্ডিকেটভূক্ত শিক্ষকরা তাদের বলয়ের শিক্ষকদের বেশি লাভজনক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে কম লাভজনক কমিটিগুলো সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে বন্টন করার ব্যবস্থা নিত। এতে তাদের বলয়ের বাইরের অনেক শিক্ষকই বঞ্চনার শিকার হত। বর্তমান অধ্যক্ষ সবকমিট এক সাথে গঠন করে দিয়ে সবার মাঝে ব্যালেন্স করার চেষ্টা করেছেন।  উক্ত সিন্ডিকেটের পছন্দ মতো কমিটি গঠন না হ‌ওয়ায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তারা আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তারা ক্যাম্পাসে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে অধ্যক্ষকে অপসারণের ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে।

এ সিন্ডিকেটের আর একটি বৈশিষ্ট্য হল, যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকবে, ছলে বলে কৌশলে সে সরকারের আস্থাভাজন হয়ে তাদের আনুকূল্য লাভ করা আর তাদের প্রতিপক্ষ শিক্ষকদের সরকার বিরোধী ট্যাগ দিয়ে তাদের অপদস্থ করা। কলেজে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই জন শিক্ষকের ভাষ্যমতে উক্ত সিন্ডিকেটটিকে দেখা গেছে অতীতের ফ্যাসিস্ট শাসকের স্হানীয় প্রতিনিধির সাথে অতিরিক্ত তেল মর্দন ও দহরমমহরম সম্পর্ক রেখে স্বার্থ হাসিল করে যেতে। এ সিন্ডিকেটের এক শিক্ষক গত ফ্যাসিস্ট আমলে নিজেকে শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দেয়া অপেক্ষা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতেন। উক্ত শিক্ষক গত চার আগস্ট ‘২০২৪এ ফেনীর মহিফালে যেদিন ১৪ জন ছাত্রকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হল, সেদিন উক্ত শিক্ষক  খুনিদের পক্ষাবলম্বন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জয়বাংলা স্লোগান লিখে পোস্ট করে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তিনি শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে অনেকদিন কলেজে আসতে পারেননি। এখনও অনেক শিক্ষার্থী তার ওপর ক্ষিপ্ত।অপর এক শিক্ষক বিগত স্হানীয় এমপির নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে কলেজ প্রশাসন থেকে নানাবিধ সুযোগ সুবিধা আদায়ের পেছনে লেগে থাকতেন। এ সিন্ডিকেটভূক্ত অন্য আর এক শিক্ষক ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন মর্মে পরিচয় দিয়ে অন্যদের ওপর দাপট দেখাতেন।আবার জুলাই বিপ্লবের পর তারাই রাতারাতি ফ্যাসিস্ট বিরোধী অতিবিপ্লবী সেজে বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা দেখে বিএনপির বেশ ধারণ করেছেন এবং তাদের সিন্ডিকেটের বাহিরের শিক্ষকদেরকে ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে প্রমাণে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন শিক্ষক এ প্রতিবেদককে বলেন ” ওনারা তখন আমাদেরকে জামায়াত শিবির ট্যাগ দিয়ে কোনঠাসা করার চেষ্টা করতেন।

কলেজের সার্বিক বিষয় ও শিক্ষকদের সিন্ডিকেট সম্পর্কে বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ এনামুল হক খোন্দকার বলেন, ” আমি যোগদানের পর পরিপূর্ণ সততা, ন্যায় ,নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম সহ সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। যে কোনো ধরনের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। কলেজে কর্মরত সকল শিক্ষককে নিয়ে এক সাথে কাজ করার চেষ্টা করছি। আশা করছি প্রত্যেকে পারস্পরিক গ্রুপিং, বিবাদ বিসংবাদ পরিহার করে সরকারি চাকরি বিধি যথাযথ অনুসরণ পূর্বক দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবেন।