অনলাইন ডেস্ক
ফেরেশতাগণ আল্লাহর সম্মানিত বান্দা, আল্লাহর বার্তাবাহক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী। তারা মর্যাদাবান, সচ্চরিত্রবান, স্বভাব ও কাজে পবিত্র। তারা আল্লাহর আদেশে বাধ্য, কোনো অবাধ্যতা করে না এবং যা আদেশ পান তাই করে থাকেন।
ফেরেশতারা নুরের সৃষ্টি
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ফেরেশতাগণকে সৃষ্টি করা হয়েছে নুর থেকে, এবং জিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে আগুনের শিখা থেকে, আর আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে তোমাদের যেমন বলা হয়েছে তা থেকে। (কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুকনো ঠনঠনে, কালচে কাদামাটি থেকে। -সুরা হিজর: ২৬) (সহিহ মুসলিম)
এই নুর কী ধরণের নুর তা নিয়ে বিশদ আলোচনার প্রয়োজন নেই। আমাদের জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে ফেরেশতাগণ নুর থেকে সৃষ্টি, যেমন হাদিসে এসেছে। তবে এই নুর সৃষ্টি, এটি আল্লাহর নিজের সত্তার নুর নয়।
ফেরেশতাদের কখন সৃষ্টি করা হয়েছে?
ফেরেশতাগণ মানুষ সৃষ্টির আগেই সৃষ্টি হয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর স্মরণ করো, যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন, আমি পৃথিবীতে একজন খলিফা বানাতে যাচ্ছি। (সুরা বাকারা: ৩০) এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে আদমের (আ.) সৃষ্টির আগেই ফেরেশতাগণকে সৃষ্টি করা হয়েছিল।
কোরআন-হাদিসের বর্ণনায় ফেরেশতাদের কিছু বৈশিষ্ট্য
১. ফেরেশতারা শক্তিশালী ও আকৃতিতে বিশাল
ফেরেশতারা আল্লাহ তাআলার বিশাল ও শক্তিশালী সৃষ্টি। আল্লাহর ইচ্ছায় প্রয়োজনে তারা নির্মম ও কঠোর হতে পারেন। জাহান্নামের ফেরেশতাদের বর্ণনায় আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে কঠোর ও শক্তিশালী ফেরেশতাগণ, আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়। (সুরা তাহরীম: ৬)
সুরা তাকওয়ীরে জিবরাইলকে আল্লাহ তাআলা ‘শক্তিশালী, সম্মানিত ও বিশ্বস্ত বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় কোরআন সম্মানিত রাসুলের আনীত বাণী, যিনি শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাবান, যাকে সেখানে মান্য করা হয়, যিনি বিশ্বাসভাজন। (সুরা তাকওয়ীর: ১৯-২১)
হাদিসে জিবরাইল (আ.) এবং আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের বিশালতার বর্ণনা এসেছে। জিবরাইল সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি তাকে আকাশ থেকে নামতে দেখেছি। দেখলাম, তার বিশাল অবয়ব আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী সব কিছু ঢেকে ফেলেছে! (সহিহ মুসলিম)
আরশ বহনকারী একজন ফেরেশতার বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমাকে আরশের একজন বাহকের সাথে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তার কানের লতির নিচ থেকে কাঁধ পর্যন্ত জায়গার দূরত্ব সাতশত বছরের পথ। (সুনানে আবু দাউদ)
২. ফেরেশতাদের ডানা আছে
ফেরেশতাদের ডানা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, আর ফেরেশতাগণকে দূত করেছেন—তাদেরকে করেছেন দুই, তিন ও চার ডানার অধিকারী; তিনি সৃষ্টিতে যা চান তা বৃদ্ধি করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সুরা ফাতির: ১)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিবরাইলকে তার আসল রূপে দেখেছেন। তার ছয়শত ডানা আছে। প্রতিটি ডানা দিগন্ত ঢেকে দেওয়ার মতো বিশাল। তার ডানাগুলো থেকে যেন মণি-মুক্তার দ্যুতি ঝরে পড়ে। (মুসনাদে আহমদ)
৩. ফেরেশতারা পুরুষ বা নারী নন
ফেরেশতারা পুরুষ বা নারী নন। মুশরিকরা মনে করতো, ফেরেশতারা নারী। আল্লাহ তাআলা তাদের এই ধারণাকে অমূলক বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তারা বলেছে, রহমানের বান্দা ফেরেশতারা নারী! তারা কি তাদের সৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেছে? তাদের এই সাক্ষ্য লিখে রাখা হবে এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। (সুরা যুখরুফ: ১৯)
৫. ফেরেশতারা পানাহার করেন না
ফেরেশতারা পানাহার করেন না। কোরআনের বর্ণনায় যখন ফেরেশতারা নবি ইবরাহিমের (আ.) অতিথি হয়ে মানুষের রূপে আসেন এবং তিনি তাদের সামনে খাবার আনেন, তখন তারা তা খাননি। আল্লাহ তাআলা বলেন, যখন সে দেখল তাদের হাত খাবারের দিকে যাচ্ছে না, সে তাদের সম্পর্কে সন্দিগ্ধ হল আর তাদের ব্যাপারে ভীতি অনুভব করল। তারা বলল, ভয় পেয়ো না, আমাদেরকে পাঠানো হয়েছে লূতের সম্প্রদায়ের কাছে। (সুরা হুদ: ৭০)
৬. ফেরেশতারা রূপ পরিবর্তন করতে পারেন
ফেরেশতারা নিজেদের স্বাভাবিক রূপ ত্যাগ করে অন্যান্য রূপে রূপান্তরিত হতে পারেন। কোরআনে এসেছে, আল্লাহ তাআলা জিবরাইলকে মারিয়ামের কাছে মানুষরূপে পাঠিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর স্মরণ কর এই কিতাবে মারিয়ামকে যখন সে তার পরিবারবর্গ থেকে পৃথক হয়ে পূর্ব দিকের কোন এক স্থানে চলে গেল। আর সে তাদের নিকট থেকে নিজেকে আড়াল করল। তখন আমি তার নিকট আমার রূহকে (জিবরাইল) প্রেরণ করলাম। সে তার সামনে পূর্ণ মানবের রূপ ধারণ করল। মারিয়াম বলল, আমি তোমার থেকে পরম করুণাময়ের আশ্রয় চাচ্ছি, যদি তুমি মুত্তাকী হও। সে বলল, আমি তো তোমার রবের বার্তাবাহক, তোমাকে একজন পবিত্র পুত্রসন্তান দান করার জন্য এসেছি। (সুরা মারিয়াম: ১৬-১৯)
জিবরাইল (আ.) নবীজিকে অনেক সময় একজন পুরুষের রূপে এসে দ্বীনের বিষয়ে প্রশ্ন করতেন। যেমন ওমর ইবনুল খাত্তাবের (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা একদিন রাসুলুল্লাহর (সা.) সামনে বসেছিলাম, এমন সময় এক ব্যক্তি এলেন যার পোশাক ছিল অতিশয় সাদা, চুল ছিল গভীর কৃষ্ণবর্ণ, তার শরীরে সফরের কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না এবং আমরা কেউ তাকে চিনতাম না। (এরপর হাদীসে আছে, তিনি রাসুলকে ইমান, ইসলাম, ইহসান এবং কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে প্রশ্ন করেন।) পরে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে ছিল জিবরাইল, তিনি তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শেখাতে এসেছিলেন। (সহিহ মুসলিম)
আরও পড়ুন
সিটি কলেজে ভাঙচুর চালাচ্ছে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা
সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি আগুনে পুড়ে গেছে
চলচ্চিত্রে এসে মিনা পাল থেকে যেভাবে তিনি কবরী হয়ে উঠেছিলেন