দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক গঠন ও গায়ের রং নিয়ে সহপাঠীদের বডি শেমিং ও বিদ্রূপ সহ্য করছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ডি এম মুশফিকুজ্জামান। স্কুলজীবন থেকেই এই আচরণের শিকার মুশফিক বিশ্ববিদ্যালয়েও একই সমস্যার মুখে পড়েন। সহপাঠী, বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে—এই ধারাবাহিক বুলিং তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। তাদের ধারণা, অভিমান থেকেই ছাদ থেকে লাফ দিয়েছেন মুশফিক।
তবে পুলিশ বলছে—সিসিটিভি ফুটেজে তাকে ছাদ থেকে লাফ দিতে দেখা গেলেও, ময়নাতদন্তের আগে এটি আত্মহত্যা না অন্য কিছু, তা নিশ্চিত নয়। মুশফিকের পরিবারও দাবি করেছে—এটি ‘পরিকল্পিত হত্যা’ কি না তদন্ত করে দেখতে হবে।
মুশফিক ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথমেটিকস অব ফিজিক্যাল সায়েন্স বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বাবা-মা’র সঙ্গে খিলগাঁওয়ে থাকতেন তিনি। বুধবার বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ফরাসউদ্দিন ভবন ও মূল ভবনের মাঝের ফাঁকা স্থানে তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢামেকে পাঠায়।
সহপাঠীরা জানান, ক্লাস শুরুর আগে গল্প করার সময় সামান্য তর্ক-বিতর্ক হয়। মুশফিক সেসময় অভিযোগ করে বলেছিলেন—সহপাঠীরা তাকে সবসময় নিয়ে হাসাহাসি করে, মজা করে। কথা বলতে বলতে তিনি ক্লাস থেকে বেরিয়ে যান। কিছুক্ষণ পরই নিচে তার দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
মুশফিকের বাবা জানান, কয়েক দিন আগে পড়া নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ছেলেকে নাকি ছাদে নিয়ে যেতে চাপ দেওয়া হয়েছিল। এসব কারণে পরিবার মনে করে—এটি শুধু আত্মহত্যা নয়, হত্যার সন্দেহও খতিয়ে দেখা দরকার।
সহপাঠী আল শাহরিয়ার ইমন ফেসবুক লাইভে বলেন, মুশফিকের কথা বলার ধরন, গায়ের রং আর স্থূল গঠন নিয়ে প্রায়ই সহপাঠীরা হাসাহাসি করতো। এমনকি মরদেহ পাওয়ার পরও তাকে নিয়ে কটু মন্তব্য করা হয়েছে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন জানান—বডি শেমিং ও বুলিং ভয়াবহ মানসিক নির্যাতন। সহপাঠীদের কাছ থেকে অব্যাহত কটূক্তি একজন তরুণকে গভীরভাবে আঘাত করতে পারে। এসব বন্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং সব শিক্ষার্থীকে পরামর্শের আওতায় আনা প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে—সিসিটিভিতে একা ছাদে ওঠা ও লাফ দেওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হবে।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
লন্ডনে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে ৯০ জন গ্রেপ্তার
যুদ্ধবিরতির পর থেকে গাজায় প্রতিদিন ২ জন শিশু নিহত হচ্ছে: ইউনিসেফ
আসাম থেকে পুশ ইন হওয়া ভারতীয় নাগরিক সখিনা বেগম জামিন পেয়েছেন