অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে বন্দর–সংক্রান্ত চুক্তি কিংবা এলডিসি থেকে উত্তরণের মতো দীর্ঘমেয়াদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাংবিধানিক কিংবা নৈতিক এখতিয়ার নেই—এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, যে সরকারকে জনগণ নির্বাচিত করেনি, সেই সরকার দেশের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিতে পারে না।
চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল এবং ঢাকার পানগাঁও নৌ টার্মিনালের পরিচালনাধিকার বিদেশি কোম্পানির কাছে দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে চলমান বিতর্কের প্রেক্ষাপটে সোমবার (২৪ নভেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক দীর্ঘ ইংরেজি পোস্টে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। একই সঙ্গে ২০২৬ সালে বাংলাদেশকে এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণের বিষয়ে সরকারের ঘোষণাও তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেন।
পোস্টে তিনি তুলে ধরেন—গাজীপুরের এক ছোট পোশাক কারখানার মালিকের গল্প, যিনি এক দশকের পরিশ্রমে কারখানা গড়ে তুললেও হঠাৎ নীরবে শুল্কসুবিধা প্রত্যাহারের কারণে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন। এর ফলে কর্মীদের বেতন দেওয়া, কারখানা চালু রাখা ও পরিবারের নিরাপত্তা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
নারায়ণগঞ্জের এক তরুণ স্নাতকের গল্পও আসে তারেক রহমানের লেখায়। রপ্তানি কমে যাওয়ার চাপ প্রথমে ওভারটাইম বন্ধ করে, পরে শিফট কমিয়ে এবং শেষ পর্যন্ত তার বাবার চাকরিচ্যুতির মধ্য দিয়ে তাদের পরিবারকে গভীর অনিশ্চয়তায় ঠেলে দেয়। তারেক রহমানের মতে, এসব সংকট সংবাদ শিরোনামে না এলেও সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে নীরবে বিস্তৃত হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন—যেসব সিদ্ধান্ত মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে, সে সিদ্ধান্ত নিতে জনগণের মতামত নেওয়া হয়নি। এলডিসি থেকে উত্তরণ নিয়ে সরকারের বিবৃতি যতটা আলোচনায় রয়েছে, প্রকৃত গুরুত্ব তার চেয়ে বেশি।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি আগেই জানিয়েছে—২০২৬ সালের সময়সীমা আগাম টেনে আনা একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, অথচ তা নিচ্ছে এমন একটি অন্তর্বর্তী সরকার, যাদের কোনো গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট নেই। অথচ এ সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতিতে বহু দশকের প্রভাব ফেলবে।
তিনি উল্লেখ করেন, সরকার দাবি করছে সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া ‘অসম্ভব’, কিন্তু ইতিহাসে অ্যাঙ্গোলা ও সামোয়ার মতো দেশগুলো সময় বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছে। জাতিসংঘের নিয়মেও বলা আছে—অর্থনৈতিক ধাক্কা পেলে সময়সীমায় নমনীয়তা দেওয়া যায়। তাই জাতীয় স্বার্থে অতিরিক্ত সময় চাওয়াটা দায়িত্বশীলতার পরিচয় হতেও পারত।
তারেক রহমানের মতে, সরকার সব বিকল্পের পথ নিজেদের হাতেই বন্ধ করে দিচ্ছে, ফলে আন্তর্জাতিক আলোচনায় বাংলাদেশের দর–কষাকষির শক্তি দুর্বল হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়েও একই সমস্যা দেখছেন তিনি। তার ভাষায়—বন্দর নিয়ে সাম্প্রতিক চুক্তিগুলো ‘রুটিন ওয়ার্ক’ নয়, বরং জাতীয় সম্পদ জড়িত দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত সিদ্ধান্ত, যা একটি অনির্বাচিত সরকারের নেওয়া উচিত নয়।
তিনি বলেন, জনগণের যৌক্তিক প্রশ্নকে উপেক্ষা করা হচ্ছে, সমালোচনা গ্রহণ করা হচ্ছে না, আর দ্রুততার অজুহাতে সব বিকল্পকে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
তারেক রহমান জোর দিয়ে বলেন—এটি কোনো ব্যক্তিকে আক্রমণ বা সমালোচনা নয়; বরং রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ও ভবিষ্যৎ সুরক্ষার প্রশ্ন। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত যেসব সরকারের জনগণের প্রতি জবাবদিহি রয়েছে।
তিনি মনে করিয়ে দেন—বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ ও বন্দর সংস্কারের পক্ষে। কিন্তু যুক্তি হলো—জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় এমন সরকার এসব দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি দিতে পারে না। কৌশলগত ধৈর্য দুর্বলতা নয়, এবং গণতান্ত্রিক বৈধতা মানেই বিলম্ব নয়।
তারেক রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কখনো নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নীরব ছিল না। তাদের প্রত্যাশা—তাদের মতামতকে সম্মান করা হোক, সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হোক।
এ কারণেই অনেকেই ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। তারেক রহমানের ভাষায়—এ নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণ প্রমাণ করবে যে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে তারাই, যারা বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
ঝামেলা ছাড়াই ছাব্বিশের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, আশা ফখরুলের
কেরু চিনিকলে শ্রমিকদের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, অবরোধে আটকে এমডি–কর্মকর্তারা
কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৬ ইউনিট