October 9, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, July 28th, 2023, 9:48 pm

বর্ষাকালেও আশানুরূপ বৃষ্টির অভাবে বাড়ছে খরা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ভরা বর্ষাতেও আশানুরূপ বৃষ্টি নেই। বরং পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খরা। আর দেশের কৃষি উৎপাদনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে খরা। দেশে বছরে খরায় ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৩৫ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমি। টাকার অঙ্কে তা ২ হাজার ৭৩৪ কোটি। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বদলে যাচ্ছে ঋতুচক্রের স্বাভাবিক নিয়ম, পরিবেশে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, লবণাক্ততাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের এ মিছিলে কয়েক বছর ধরে নতুন করে যোগ দিয়েছে খরা। ভরা বর্ষায় নেই বর্ষণ, মাঠ ফেটে চৌচির। কৃষিতে এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অত্যধিক তাপমাত্রা, জলাধার শুকিয়ে যাওয়া, বন উজাড় এবং অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে আরো বড় খরার আশঙ্কা রয়েছে বলেও আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে ভরা মৌসুমেও দেশের বিভিন্ন স্থানের ওপর বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। আকাশে মেঘ নেই। ঝরছে না বৃষ্টি। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গরম এ রকমই থাকবে। মাঝেমধ্যে তাপমাত্রা কম থাকতে পারে, তবে গরমের অনুভূতি কম থাকবে না। এর কারণ বাতাসে এখন জলীয় বাষ্পের মাত্রা বেশি, বৃষ্টি কমে গেছে। এখন তাপমাত্রা যদি ৩২ থেকে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাঝেও থাকে, আর্দ্রতার কারণে গরম অনুভূত হবে বেশি। সূত্র জানায়, চলতি জুলাইয়ের প্রথম ২০ দিনে প্রায় ৬০ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। শেষ ৩০ বছরে জুলাইয়ে এত কম বৃষ্টি দেখা যায়নি। ২০২২ সালে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৮ শতাংশ ও ২০২১ সালের জুলাইয়ে ৫ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। গত এপ্রিলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৬.৪ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় মে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৪.১ শতাংশ এবং জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাপপ্রবাহের মতিগতিও বদলাচ্ছে, সেই সঙ্গে বদলাচ্ছে এর প্রভাবের এলাকা।

জলবায়ুর এমন বিরূপ প্রভাবের কারণে প্রকৃতিতে শৈত্যপ্রবাহ, খরা ও অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির মতো নানা বৈরিতা এখন বাস্তবতা। এ পটভূমিতে খালবিল, নদীনালা, জলাশয় সংরক্ষণ করা জরুরি। শহর-গ্রামে বাড়াতে হবে সবুজ। সূত্র আরো জানায়, এদেশের আমন আবাদ সম্পূর্ণ বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এবার বর্ষায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। উৎপাদিত চালের ৩৮ শতাংশ আসে আমন থেকে। বৃষ্টিনির্ভর এ ফসল রোপণ হয় শ্রাবণে (মধ্য জুলাই-মধ্য আগস্ট)। জুন থেকে প্রস্তুত হয় বীজতলা। কিন্তু আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগস্টেও একই ধরনের তাপপ্রবাহ দেশজুড়ে বয়ে যেতে পারে। ফলে আমন উৎপাদন ঝুঁকিতে পড়তে পারে। গত তিন বছর সাতক্ষীরায় ঠিকমতো মৌসুমি বৃষ্টি না হওয়ায় প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন ফসলে। প্রয়োজনীয় বৃষ্টির অভাবে রোপা আমন চাষ তো দূরের কথা, অধিকাংশ কৃষক এখনও বীজতলা তৈরি করতেই পারেননি। আর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় গ্রামের নদনদী, খাল-বিল, পুকুর ও ডোবায় পানি নেই। ফলে এবার পাটের ভালো ফলন হলেও জাগ দেওয়া যাচ্ছে না।

সোনালি আঁশ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। ক্ষেতেই পাট ফেলে রেখেছেন তারা। এদিকে অতিসম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় খরা সম্মেলনে জানানো হয়, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের ২২ জেলা খরার ঝুঁকিতে রয়েছে। ৩০ লাখ শিশু প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে খরার প্রভাবের শিকার। খরাপ্রবণ জেলাগুলোয় মোট জমির পরিমাণ প্রায় ৫০ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর, যার ৭৭ শতাংশ জমি মাঝারি থেকে চরমভাবে খরার ঝুঁকিতে আছে। খরার কারণে প্রতিবছর ওই অঞ্চলে প্রায় ২ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। ১৯৯১ সালে উঁচু বরেন্দ্র এলাকায় পানির স্তর ছিল ২৭ ফুট, ২০০০ সালে তা নামে ৪০ ফুটে। নিচু বরেন্দ্র এলাকায় ১৯৯১ সালে পানির স্তর ছিল ২০ ফুট, ২০০০ সালে তা নামে ২৯ ফুটে। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ প্রায় ২০ বার খরার কবলে পড়ে। তবু খরা মোকাবিলায় যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

খরার কারণে এলাকাভেদে ২০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত কৃষি উৎপাদন কমতে পারে। তীব্র খরার কারণে আউশ ফসলের প্রায় ৪০ শতাংশ ক্ষতি হয়। খরিফ মৌসুমের খরার কারণে প্রতিবছর প্রায় ২৩ লাখ হেক্টর জমির আমন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রবি মৌসুমে ১২ লাখ হেক্টর জমি বিভিন্ন মাত্রার খরার কারণে আক্রান্ত হয়। খরা মৌসুমে কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে ৮১ শতাংশ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৮০ লাখ মানুষ খরার কারণে উদ্বাস্তু হবে।

অন্যদিকে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, বোরোর পর সবচেয়ে বেশি ধান আসে আমন থেকে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় অন্যতম ভূমিকা রাখছে। বৃষ্টিনির্ভর আমনে সেচ দেওয়ায় খরচ বেড়েছে। সরকার সব ধরনের সারের দাম ৫ টাকা করে বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে ৪০ শতাংশের বেশি খরচ বেড়েছে। আমন উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে ডিজেলে ভর্তুকির বিকল্প নেই। এ ছাড়া খরাসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করতে হবে। এ ব্যাপারে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক জানান, এ বছর আমনের আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে ৩৩ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। সারাদেশের ৪ লাখ ৯০ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক এ প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে বীজ ও সার পাবেন। পরিস্থিতি অনুযায়ী সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।