বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন সোবহান পরিবারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে কোটি কোটি পাউন্ডের সম্পত্তি কেনা এবং তা বিক্রি বা হস্তান্তরের অভিযোগ উঠেছে। নাইটসব্রিজে অবস্থিত এক চারতলা বাড়ি আগে বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের নামে ছিল, যা সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় দেখানো হয়েছিল।
২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে সেই বাড়ি ব্রুকভিউ হাইটস লিমিটেড নামে একটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানের নামে হস্তান্তর করা হয়। এই কোম্পানির পরিচালকেরা আগে সোবহান পরিবারের হয়ে সম্পত্তি কেনাবেচার কাজে জড়িত ছিলেন। পরে ওই বাড়ি ৭.৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডে একটি নতুন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি হয়, যার পরিচালক এক অচেনা হিসাবরক্ষক। একই পরিবারের শাফিয়াত সোবহানের নামে আরও দুটি সম্পত্তির হস্তান্তরের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সোবহান পরিবারের এক সদস্যের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংসহ নানা অভিযোগ তদন্তাধীন। যদিও তারা আগেই জানিয়েছে, তারা সব অভিযোগ অস্বীকার করে আইনি পথে প্রতিরোধ গড়বে।
সম্প্রতি গার্ডিয়ান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এক যৌথ অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশের যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তি ঢাকায় তদন্তের মুখে পড়েছেন, তাদের অনেকে গত এক বছরে যুক্তরাজ্যে তাদের সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর কিংবা পুনঃঅর্থায়ন করেছেন।
শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটাতে বাংলাদেশে যখন ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয়, তখন নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে শত শত বিক্ষোভকারী প্রাণ হারিয়েছিল।
এখন, প্রায় এক বছর হতে চলল—দেশের সাবেক এ স্বৈরশাসক নির্বাসনে চলে গেছেন। তার শূন্যস্থানে আসা অন্তর্বর্তী সরকার এখন বিভাজনের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক সংকটের জটিল বাস্তবতা সামাল দিতে লড়ছে।
এই অস্থির প্রেক্ষাপটে লন্ডনের নাইটসব্রিজের কোনো দৃষ্টিনন্দন টাউনহাউজ বা সারের কোনো নিরিবিলি রোডে অবস্থিত প্রাসাদ যেন অনেক দূরের বিষয় মনে হতে পারে। তবুও এসব বিলাসবহুল ব্রিটিশ সম্পত্তিই এখন বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
গত মে মাসে ব্রিটেনের ‘এফবিআই’খ্যাত জাতীয় অপরাধ দমন সংস্থা (এনসিএ)—সালমান এফ রহমান পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ ফ্রিজ [জব্দ] করে। গার্ডিয়ানের আগের এক অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্যে এ পরিবারের সম্পত্তির বিশদ তথ্য প্রকাশ পেয়েছিল।
এর তিন সপ্তাহ পর, এনসিএ , বসুন্ধরা গ্রুপের সোবহান পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাজ্যের এমন কিছু সম্পত্তি মালিকদের মধ্যে রয়েছেন, যাদের সম্পদ এনসিএকে জব্দ করার বিষয়ে বিবেচনা করতে বলেছে দুদক।
এখন গার্ডিয়ান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এক যৌথ অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশের যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তি ঢাকায় তদন্তের মুখে পড়েছেন, তাদের অনেকে গত এক বছরে যুক্তরাজ্যে তাদের সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর কিংবা পুনঃঅর্থায়ন করেছেন।
আরও পড়ুন
জুলাই মাসেই জাতীয় সনদ চায় কমিশন: আলী রিয়াজ
পরিস্থিতিগত কারণে গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী গুলি করেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
হাসিনা ঘনিষ্ঠরা যুক্তরাজ্যে গোপনে সম্পদ বিক্রি করছেন