April 2, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, March 22nd, 2025, 1:01 pm

বাড়ল গরু-মুরগির দাম, অপরিবর্তিত মাছের বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে এখনও ঈদের প্রায় ১০ দিনের মতো অবশিষ্ট থাকলেও সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের মাংসের দাম বেড়েছে। সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। এমনকি দীর্ঘদিন যাবৎ ৭৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া গরুর মাংসও আজকের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজিতে। তবে বাজারে সব ধরনের মাছের দামই অপরিবর্তিত রয়েছে।

শুক্রবার (২১ মার্চ) সকালে রাজধানীর রামপুরা-বনশ্রীসহ একাধিক বাজার ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত রমজানে দ্রব্যমূল্যের বাজার বেশ চড়া থাকলেও এবারের পরিস্থিতি শুরু থেকেই অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া দাম কমতির তালিকায় বেশিরভাগ নিত্যপণ্যই। তবে আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে এবার দাম বাড়ার প্রভাব শুরু হয়েছে মাছ-মাংসের বাজারে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আজকের বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২১০-২২০ টাকা পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহেও ছিল দুইশো টাকার নিচে। তবে রোজার প্রথমদিনে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছিল ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া আজকের বাজারে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩১০-৩২০ টাকা পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহের বাজারেও ছিল ২৬০-২৭০ টাকা পর্যন্ত। আজকের বাজারে দেশি মুরগি ৬৫০-৭০০ টাকা পর্যন্ত, সাদা লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৫০ টাকায়।

ঈদের বাকি একদিন, তবুও দাপট দেখাচ্ছে ব্রয়লার-গরুর মাংসএদিকে আজকের বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও ৭৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৭৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিকেজি খাসির মাংস ১২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়।

তবে আজকের বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের দাম। ২০০ টাকার আশপাশেই বিক্রি হচ্ছে পাঙ্গাশ-তেলাপিয়া, সরপুঁটিসহ বেশ কয়েক জাতের মাছ। বাজারে প্রতি কেজি বড় আকৃতির রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত, কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত, তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত, সরপুঁটি মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজিতে। এছাড়াও কোরাল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, চাষের কই ২৫০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের শিং ৪৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা ও চিংড়ি ৬৫০-৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১২০০ টাকায়।

আল আমিন নামে এক ক্রেতা বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় প্রতি শুক্রবারেই মাছ-মাংস কিনি। কিন্তু অন্যদিনের তুলনায় শুক্রবার বাজার চড়া থাকে। আজকে ব্রয়লার মুরগি কিনেছি ২২০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও ২০০ টাকায় কেনা হয়েছে। মনে হচ্ছে ঈদকে কেন্দ্র করে মুরগির দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু হুটহাট যেভাবে দাম বাড়ে, তাতে আমাদের মতো গরিব মানুষ সমস্যায় পড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ঈদের মধ্যে দাম আরও বাড়বে।

একজন ক্রেতা বলেন, ঈদের বাকি আরও দশদিন, ভেবেছিলাম পূর্বের দামে থাকলে আগেভাগেই গরু-মুরগির মাংস কিনে ফেলব। কিন্তু বাজারে এসে দেখি অলরেডি দাম বেড়ে গেছে। যে কারণে গরুর মাংস আজ আর কেনা হয়নি, শুধু মুরগি নিয়েছি। ঈদের ১ থেকে ২ দিন আগেই গরুর মাংসসহ বাকি বাজার করব।

নাগালের বাইরে গরু-মুরগির মাংসের দাম

তিনি বলেন, রোজায় দ্রব্যমূল্যের দামে এবার কিছুটা স্বস্তি গেছে। ভেবেছিলাম সে ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে, কিন্তু ঈদের আগেই সবকিছুর দাম আবার বেড়ে যাচ্ছে।

এদিকে মাছ-মাংসের দাম প্রসঙ্গে বিক্রেতারা বলছেন, ঈদ সামনে রেখে মুরগি-গরুর চাহিদা বাড়ায় দাম কিছুটা বাড়ছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ এখন কম। রামপুরা বাজারের মুরগির মাংস বিক্রেতা বলেন, কয়েক দিন ধরে প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। আমরা দাম বাড়াচ্ছিলাম না। খামারিরা ঈদে বেশি দামে বিক্রি করবেন। এ জন্য তারা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে বাজারে দাম বাড়ছে। আর যেহেতু আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই বাধ্য হয়েই কিছুটা দাম বাড়িয়েছি।

তিনি আরও বলেন, গত তিনদিন আগেও ১৯৫ টাকা কেজিতে মুরগি বিক্রি করেছি। সোনালি মুরগি বিক্রি করেছি ২৬০-২৭০ টাকায়। কিন্তু এর মধ্যে প্রতিদিনই পাইকারি বাজারে ৫ থেকে ১০ টাকা করে দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বেশি থাকলে তো আমাদের কিছুই করার নেই।

ঈদের আগে মুরগির দাম আরও বাড়বে কিনা— জানতে চাইলে এক বিক্রেতা বলেন, ঈদের আগ মুহূর্তে দাম সর্বোচ্চ ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা হতে পারে, এর বেশি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। সবকিছুই নির্ভর করছে বাজারে মুরগির সরবরাহের ওপর। সরবরাহ যদি বাড়ে তাহলে এত দাম নাও হতে পারে। আর যদি দাম বাড়েও, তাহলে ঈদের পরপরই আবার কমে যাবে।

রামপুরা বাজারের একজন মাছ বিক্রেতা বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে মাছের বাজারে কোনও পরিবর্তন আসেনি। বরং অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ সপ্তাহে মাছের বাজার কিছুটা নিম্নমুখী। তবে বেচাকেনা আলহামদুলিল্লাহ ভালো। দাম একটু কম থাকলে সবসময়ই বেচাকেনা ভালো থাকে। অনেক সময় সকালেই সব মাছ বিক্রি হয়ে যায়, আবার বাজার বাড়তি থাকলে বরফ দিয়ে পরদিনও বিক্রি করতে হয়।